ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা প্রতিরোধ করবে ‘গণহত্যা-নির্ঘণ্ট’

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা প্রতিরোধ করবে ‘গণহত্যা-নির্ঘণ্ট’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যে কটূক্তি করে, ইতিহাস নিয়ে যারা মন্তব্য করার ধৃষ্টতা করে তারা হলো রাষ্ট্রদ্রোহী, কুলাঙ্গার। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলার মানে শহীদদের, নিপীড়িত, নির্যাতিতদের অপমান করা। যারা এই ধৃষ্টতা করেছে বা করে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া উচিত। এমনকি যারা তাদের এসব কর্মকা-ে একমত পোষণ করে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা উচিত। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, যারা আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করে তাদের শাস্তির জন্য আইন প্রণয়ন একান্ত দরকার। শনিবার বিকেল তিনটায় ধানম-ির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ১৯৭১-গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেন, ১৯৭১-গণহত্যা-নির্যাতন নির্ঘণ্ট গ্রন্থমালা প্রকাশনা বইটি একটি দলিল। যেটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাজে লাগাতে পারবে। এই বইগুলো যারা লিখেছে তারা সবাই নতুন প্রজন্ম, আমার ছাত্র। তারা এই বই নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস জেনেছে, যা পরবর্তী প্রজন্মের তরুণরাও জানতে পারবে। আমি এই কাজের শুরু করে দিলাম এখন তরুণরাই এই কাজকে এগিয়ে নেবে। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের এই কাজের সঙ্গে সরকারকেও এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু সরকার তেমন কোন কার্যক্রম করেনি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংগ্রহের জন্য একটি স্থান বরাদ্দের ফাইল অনেকদিন যাবত সরকারের কাছে আটকানো। এখনও পর্যন্ত আমরা সেই ফাইল ছাড়াতে পারিনি। আমরা নির্যাতিত, নিপীড়িত, শহীদদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। আমি মনে করি এই কাজের মাধ্যমেই সেই কুলাঙ্গারদের ওপর প্রতিশোধ নেয়া সম্ভব। গণহত্যা, বধ্যভূমি, নির্যাতন মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে একেবারে নেই তা নয় তবে গুরুত্ব তার ওপর ততটা দেয়া হয়নি। বিভিন্ন দেশে তাদের যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম করেছে। আমাদের এখানে তা হয়নি দেখে গণহত্যার সংখ্যা নিয়ে এখনও অনেকে প্রশ্ন করার সাহস করে। এখন আমাদের এই কাজ অনেক তথ্যের সাক্ষী হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং তা স্বাভাবিক। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোন একটি দেশে এত অল্প সময়ে এত হত্যা হয়নি। বাংলাদেশে শহীদদের সংখ্যা ৩০ লাখেরও বেশি। দেশের আনাচে-কানাচে রয়েছে অসংখ্য বধ্যভূমি ও গণকবর। নির্যাতনের শিকার বহু নারী-পুরুষ এখনও রোমহর্ষক স্মৃতি রোমন্থন করেন। সেসব গণহত্যার বৃত্তান্ত, বধ্যভূমি ও গণকবরের কথা গৌরব ভাষ্যে উপেক্ষিত থেকে যায়। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নানামুখী নির্যাতনের দুষ্প্রাপ্য ও অমূল্য উপকরণ সংগ্রহ এবং জাতির সামনে মুক্তিযুদ্ধের মর্মকথা তুলে ধরা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও গবেষক এইচটি ইমাম গণহত্যা নির্ঘণ্ট গ্রন্থমালার ১০টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এটি একটি অভূতপূর্ব আয়োজন। গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে লেখা এই বই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা তথ্য উঠে এসেছে। যারা এই বই নিয়ে কাজ করেছে তাদের সাধুবাদ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য অনেক চেষ্টা করছে। এমনকি বাইরের দেশগুলোর মধ্যেও এই প্রতিক্রিয়াগুলো সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই কার্যক্রম মাধ্যমে সবার ধারণা পাল্টে যাবে। এবং তারাও এখন আর কোন প্রশ্ন করার ধৃষ্টতা করবে না। আর যারা এমন কিছু করার চেষ্টা করছে তাদের অবশ্যই শাস্তি দেয়া উচিত। এটি আরও আগেই করা উচিত ছিল। তবে এখন আমি নিজেই এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আইন প্রণয়নের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা আমাদের সংবিধানের ভিত্তি। যে এই ঘোষণা অস্বীকার করে তারা সবাই দেশদ্রোহী। অনুষ্ঠানে লেখক সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক গবেষক শাহরিয়ার কবির বলেন, এই বইটি ২০১৪ সালে বিজয়ের মাসে সবচেয়ে বড় উপহার জাতির জন্য। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্করণ যাতে অনেক বিষয়ই আগে উঠে আসেনি। অনেক লোকই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে এমনকি শহীদদের তালিকা নিয়ে বিভিন্ন কথা বলে থাকে। কারও পক্ষে ৩০ লক্ষ শহীদদের তালিকা করা সম্ভব না আর এই বইটি শুধু তালিকা তৈরি করার জন্য করা হয়নি। এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যারা ৬ লাখের তালিকা গুরুত্বপূর্ণ যারা নির্যাতিত হয়েছে নিপীড়িত হয়েছে এই বিষয়টি এই বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। যারা নির্যাতিত নিপীড়িত হয়েছে তার একটা বড় অংশ এখানে উঠে এসেছে। তিনি আরও বলেন, গণহত্যার বিচার বানচাল করার জন্য অনেকে চেষ্টা করছে এই বইটি এ বিষয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। যারা স্বাধীনতার ঘোষণা অস্বীকার করে, তারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে এমনকি বাংলাদেশকে অস্বীকার করে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট সাহিত্যিক ড. বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বলেন, যারা সংবিধানকে অস্বীকার করে তারা কোন রাজনৈতিক দল হতে পারে না। তারা হচ্ছে বড় রাজাকার তাদের আগে আইনের আওতায় আনা উচিত। সরকার তো অনেক কিছু করছেন আমাদের দাবি এসব রাজাকারদের যেন শাস্তি দেয়া হয়। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কথা বলে তারা সবাই রাজাকার বলে উল্লেখ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন- ট্রাস্টি সম্পাদক বাহারুল আলম, তারেক সুজাত, শিল্পী হাশেম খান প্রমুখ।
×