ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাট ও কিশোরগঞ্জের ৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে আজ সাক্ষীর জবানবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

বাগেরহাট ও কিশোরগঞ্জের ৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে আজ সাক্ষীর জবানবন্দী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই হিসেবে পরিচিত শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার, খান আকরাম হোসেন ও কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর বিরুদ্ধে আজ প্রসিকিউশনের সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করবেন। উভয় মামলাতেই সপ্তম সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য আজ দিন নির্ধারণ করা আছে। দুটি মামলায়ই চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জবানবন্দী অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই রাজাকার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১২ জানুয়ারি। নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে। ৭ জানুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। পটুয়াখালীর রাজাকার বিএনপি নেতা ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৯ জানুয়ারি। কিশোরগঞ্জের দুই সহোদর নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ও শামসুদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন পুনরায় জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা প্রসিকিউশনে জমা দেয়ার পরও ট্রাইব্যুনালে তা দাখিল হয়নি। আইন সংশোধনের পর জামায়াতের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে। মোট নয়টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চললেও দুটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। আরও তিনটি মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ নবেম্বর বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এই অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিচার কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত এই তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে মোট ৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠি গ্রামে সাতজনকে, একই উপজেলার রণজিতপুর গ্রামে ৪২ জনকে, কান্দাপাড়া গ্রামে ১৮ জনকে, কচুয়া উপজেলা সদরে ৫ জনকে, একই উপজেলার শাঁখারীকাঠি গ্রামে ৪২ জনকে এবং রামপাল উপজেলার ডাকরা গ্রামে ছয় থেকে সাত শ’ নারী-পুরুষকে হত্যা। বাগেরহাটের এসব হত্যাকা- তিনি নিজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাকিস্তানী সেনাদের সহযোগিতাকারী হিসেবে তিনি চিহ্নিত হত্যাকারী রাজাকার নামে পরিচিত ছিলেন। এর আগে গত ১৯ জুন রাজশাহী মহানগরের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে আকরাম হোসেন খানকে (৬০) এবং ১১ জুন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সোলারকোলা গ্রাম থেকে আব্দুল লতিফ তালুকদারকে (৬৫) গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আকরাম খানের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি গ্রামে এবং আব্দুল লতিফ তালুকদারের বাড়ি কচুয়া উপজেলার সোলারকোলা গ্রামে। ২১ জুলাই রাত ১১টায় বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশ বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা গ্রামে মৃত মোসলেম পাইকের (তার চাচা শ্বশুর) পরিত্যক্ত খুপরি ঘর থেকে সিরাজ মাস্টারকে গ্রেফতার করে। হাসান আলী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জের পলাতক আসামি রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হাসান আলী ওরফে আলীর বিরুদ্ধে আজ প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করবেন। এর আগে তার বিরুদ্ধে ৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। ১১ নবেম্বর আসামি হাসান আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, আটক, অগ্নিসংযোগের মতো ছয়টি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৪ আগস্ট হাসান আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়ে পলাতক এ রাজাকার কমান্ডারকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। পরে তাকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেয় প্রসিকিউশন। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট, আটক ও নির্যাতনের ছয়টি অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে একাত্তরের ২৭ এপ্রিল তাড়াইল, পূর্বপাড়া সাচাইলে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। ২৩ আগস্ট কোনা ভাওয়াল গ্রামের শহীদ তোফাজ্জল ভুইয়ার বসতবাড়িতে তিনজনকে আটক করে নির্যাতন করে পরে তাদের হত্যা করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর শিমুলহাটির পাল বাড়িতে ১২ জনকে হত্যা করা হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর তাড়াইল থানাধীন বেলংকা রোড়ে ৮ জনকে হত্যা করে হাসান আলী। ১১ ডিসেম্বর আড়াইউড়া গ্রামে ২ জনকে হত্যা করা হয়। একই দিন সাচাইল গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় হত্যা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। অর্থাৎ রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর নির্দেশে ২৪ জনকে হত্যা, ১২ জনকে অপহরণ ও আটক এবং ১২৫টি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে।
×