ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শৈত্যপ্রবাহ আরও দুদিন ॥ ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.২

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

শৈত্যপ্রবাহ আরও দুদিন ॥ ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.২

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌষের মাঝামাঝিতে এসে সারাদেশে শীতের প্রকোপ বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সারাদেশের ওপর মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ কারণে দেশের তাপমাত্রা ক্রমেই কমে আসছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে শীতের তীব্রতাও। আরও দুই বা একদিন এ অবস্থা চলার পর বোঝা যাবে শৈত্যপ্রবাহের উন্নতি না অবনতি হবে। তবে তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেশে আরও একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আসছে। এ শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রীর মধ্যে চলে আসতে পারে। শনিবার ঈশ্বরদীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা এই মৌসুমের প্রথম। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এ মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ। শুক্রবার শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সার্ক আবহওয়া অফিসের কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন বর্তমানে চলা মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ আর দুএক দিন চলার পর বলা যাবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না অবনতি হবে। তবে তিনি বলেন, শনিবার দুপুরের দিকে রোদের দেখা মিলেছে। আজ যদি সূর্যের মুখ দেখা যায় তাহলে তাপমাত্রা বেড়ে পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। তবে সকালে ঘন কুয়াশা অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আব্দুল মান্নান আরও জানান, প্রতিবছর শীত মৌসুমে সাধারণত ৪ থেকে পাঁচটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। এর মধ্যে দুটি শৈত্যপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করে। তিনি বলেন, আগামী দুএকদিনের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহের উন্নতি হলেও আগামী সপ্তাহের মধ্যে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে এ মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার কারণে শীত পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করছে। প্রভাব পড়ছে উত্তরের জনপদসহ সাধারণ নাগরিকদের ওপর। যাদের শীত নিবারণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা মারাত্মক শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে পৌষের মাঝামাঝি এসে ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হাওয়ায় তাপমাত্রা কমছে। ফলে দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ মৃদু অবস্থায় বয়ে যাচ্ছে আবার কোথাও মাঝারি আকারে বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগসহ যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও টাঙ্গাইল অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে শীত বেশি অনুভূত হলেও তা স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। তাদের মতে, হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থানের কারণে প্রতিবছর দেশের উত্তরাঞ্চলে শীত বেশি অনুভূত হয়। এবার তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তবে এবার অন্যবারের ন্যায় শীতের আগাম প্রভাব ছিল না। আবহাওয়াবিদদের মতে বর্ষা মৌসুম থেকে শীতের আগমনের আগে প্রতিবছর পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে বৃষ্টিপাত হয়। যার কারণে অনেক সময় আগাম শীত দেখা দেয়। কিন্তু এবারের বর্ষা মৌসুমের পরে আর কোন বৃষ্টিপাতের রেকর্ড আবহাওয়া অধিদফরের হাতে নেই। এ কারণে শীত নামছে ধীরে ধীরে। পৌষের মাঝামঝি এসে শীতের প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে। অথচ অন্যবছরে ডিসেম্বরের মাঝামঝি থেকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে যায়। আবহাওয়া অফিস জানায়, স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। সারাদেশে ডিসেম্বর শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। বৃষ্টির পর জেঁকে বসা শীত আরও তীব্র হতে পারে। নবেম্বরে সারাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা ৯৮ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত মাসে পশ্চিমা লঘুচাপ দুর্বল থাকায় এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট কোনো লঘুচাপ বা নিম্নচাপ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম না করায় সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার কারণে শনিবার রাজধানীতেও শীতের প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। লোকজনকে গরম কাপড়ে চোখমুখ বেঁধে চলতে দেখা গেছে। কঠিন শীতের কারণে ফুটপাথে ছিন্নমূল মানুষগুলোর অবস্থা ছিল আরও করুণ। সামান্য কাপড়ে ফুটপাতের এক কোণে জবুথবু অবস্থায় দেখা গেছে। শীতবস্ত্রের অভাবে রাতে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ছে। সকালে এবং সন্ধ্যা নামতেই শীত পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে। রাত যত গভীর হচ্ছে শীতের প্রকোপ ততই বাড়ছে। শীতের তীব্রতায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই জমে ওঠেছে গরম কাপড় বিক্রির হিড়িক। ফুটপাথ থেকে শুরু করে বড় বড় শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর পাশাপাশি তীব্র শীতের কারণে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীত পরিস্থিতি ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। দিনের অধিকাংশ সময় কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে। কনকনে ঠা-া বাতাসে এ অঞ্চলে ছিন্নমূল মানুষের অবস্থা জবুথবু। গত কয়েদিনের চেয়ে শনিবারের তাপমাত্রাও কমেছে। শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। ঠিকমতো স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না। ফলে বেকার সময় কাটাতে হচ্ছে। সারাদিনে সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। অনেকে তীব্র শীতের কারণে শ্রম দিতে না পেরে কর্মহীন সময় পার করছেন বলে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এদিকে এবারের শীত মৌসুমে শনিবারই প্রথম পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের রেকর্ড করা তথ্যে দেখা গেছে ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ৭ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এসেছে। তবে গত শুক্রবারের চেয়ে এ তাপমাত্রা এক ডিগ্রী নিচে নেমে এসেছে। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৭.৫ ডিগ্রীতে নেমে এসেছে। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ডে দেখা গেছে সিলেট, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ থেকে ৯ ডিগ্রীর মধ্যে অবস্থান করছে। তবে ঢাকা চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ৯ ডিগ্রীর মধ্যে অবস্থান করছে।
×