ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রেমলিনের সর্বশেষ সামরিক দলিল মূল্যায়ন ॥ পশ্চিমা জোটের অস্বীকৃতি

ন্যাটোই রাশিয়ার প্রধান হুমকি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

ন্যাটোই রাশিয়ার প্রধান হুমকি

রাশিয়ার সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে ন্যাটোকে চিহ্নিত করেছে। শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন-স্বাক্ষরিত এক নতুন মতবাদে পশ্চিমা জোটকে রাশিয়ার প্রধান সামরিক হুমকি হিসেবে দেখানো হয়। এ সামরিক মতবাদে বিদেশী আগ্রাসনরোধে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সাধ্যমতো এমন অস্ত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। এতে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল করে ফেলার মস্কো-কথিত মার্কিন নেতৃত্বে পরিচালিত চেষ্টার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী অবস্থান নিতে ক্রেমলিনের প্রস্তুতিই প্রতিফলিত হয়। সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেন আটলান্টিক সামরিক জোটে যোগ দেয়ার নতুন পদক্ষেপ নেয়ার কয়েকদিন পর ওই মতবাদ প্রকাশ করা হলো। তবে ন্যাটোর মুখপাত্র এর জবাবে এক বিবৃতিতে বলেন যে, জোট রাশিয়া বা অন্য কোন দেশের প্রতি কোন হুমকি সৃষ্টি করেনি। খবর আল জাজিরা ও অন্যান্য ওয়েবসাইটের। নুতন রুশ সামরিক মতবাদে ন্যাটোর সম্প্রসারণকে প্রধান বাহ্যিক ঝুঁকি বলে অভিহিত করা হয়। মস্কোর পূর্ববর্তী মতবাদেও ন্যাটোর সম্প্রসারণকে রাশিয়ার প্রতি এক বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, কিন্তু ঝুঁকির মাত্রা গত বছর দ্রুত বৃদ্ধি পায়। পুতিন ২০১০ সালে ওই মতবাদটি সই করেছিলেন। রাশিয়া চলতি সপ্তাহে বলেছে, ন্যাটো ইউক্রেনকে সম্মুখ সমরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যদি ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আশা পূরণ হয়, তাহলে মস্কো ন্যাটোর সঙ্গে অবশিষ্ট সম্পর্ক ছিন্ন করবে বলে হুমকি দেয়। ন্যাটোতে যোগ দেয়ার লক্ষ্যে কিয়েভ পার্লামেন্ট ইউক্রেনের জোটনিরপেক্ষ মর্যাদা বাতিল করলে মস্কো ক্ষুব্ধ হয় এবং রাশিয়া ও পাশ্চাত্যের সংঘাত আরও ঘনীভূত হয়। এর আগে রাশিয়া চলতি বছর ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ নিজের ভূখ-ভুক্ত করলে রাশিয়া ও পাশ্চাত্যের সম্পর্কের গুরুতর অবনতি ঘটে। ন্যাটো চলতি বছর পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি ইতোমধ্যে বৃদ্ধি করেছে। জোট বলছে, রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনে এক রুশপন্থী বিদ্রোহে সমর্থন যুগিয়েছে এবং অস্ত্র সরবরাহ করেছে বলে ন্যাটোর হাতে প্রমাণ রয়েছে। কিয়েভে ক্রেমলিন সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওই বিদ্রোহ দেখা দেয়। মস্কো ওই বিদ্রোহে সমর্থন যোগানোর কথা অস্বীকার করছে। রাশিয়া এখন পূর্ব ইউক্রেনের সঙ্কটের এক রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পেতে কিয়েভ ও বিদ্রোহীদের নিয়ে নতুন করে চেষ্টা চালাচ্ছে। ন্যাটোতে যোগ দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে ইউক্রেনের কয়েক বছর লাগতে পারে। এমনকি এরপরও জোট এরূপ কোন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত কি না, তা নিশ্চিত নয়। ন্যাটোর এক কর্মকর্তা শুক্রবার বলেন, জোট ইউক্রেন পার্লামেন্টের পদক্ষেপকে সম্মানের চোখে দেখে এবং রাশিয়ারও তাই করা উচিত। তিনি বলেন, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিলে ন্যাটো যে কোন প্রার্থীর মতো ইউক্রেনের জোটে যোগ দেয়ার প্রস্তুতির মূল্যায়ন করবে। এটি ন্যাটো এবং সদস্যপদ পেতে ইচ্ছুক এমন কোন দেশের বিষয়। মস্কোর নতুন দলিলে ন্যাটোর সম্প্রসারণ ও সমরসজ্জা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বিশ্বজুড়ে পরিচালিত তৎপরতা রাশিয়ার প্রতি সৃষ্ট সামরিক হুমকির তালিকার শীর্ষে স্থান লাভ করে। ন্যাটোর মুখপাত্র ওয়ানা লানসেস্কু ওই বিবৃতিতে বলেন, ন্যাটোর নিজের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া যে কোন পদক্ষেপ স্পষ্টতই আত্মরক্ষামূলক, সমানুপাতিক ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনে চলমান রুশ তৎপরতাসহ মস্কোর কর্মকর্তা ওই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং ইউরোপের নিরাপত্তা ক্ষুণœ করছে। মতবাদে বলা হয়, রাশিয়া তার বিরুদ্ধে বা তার মিত্রদের বিরুদ্ধে পরমাণু বা ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহৃত হওয়ার জবাবে পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করতে পারে। প্রচলিত অস্ত্রের আক্রমণে রুশ রাষ্ট্রের ঠিক অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়লেও পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করা হতে পারে। নতুন মতবাদে প্রথম বারের মতো বলা হয়, রাশিয়া আক্রমণরোধ করার কৌশল হিসেবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থলে আঘাত আনতে সক্ষম এমন অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। এরূপ প্রচলিত অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বিমান ও সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, দূরনিয়ন্ত্রিত বোমা ও কামানের গোলা। রুশ দলিলে বলা হয়, সামরিক বাহিনী এক আত্মরক্ষামূলক হাতিয়ার হয়ে থাকবে এবং তা কেবল শেষ অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করা হবে। দলিলের আরেকটি নতুন বিষয় হলো এই যে, সেখানে আর্কটিক অঞ্চলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা রুশ সামরিক বাহিনীর অন্যতম লক্ষ্য বলে ঘোষণা করা হয়। সেই অঞ্চলের বিশাল তেল ও অন্যান্য সম্পদ নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিশ্বে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
×