ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় হবে ৪৫ কোটি ৫ লাখ টাকা

১৩ নদীবন্দরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

১৩ নদীবন্দরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দেশের ১৩ নদীবন্দরে শক্তিশালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষপটে এবং নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে বাংরাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর (বিএমডি)। যেসব নদীবন্দরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হবে সেগুলো হচ্ছে, নরসিংদী জেলা সদর, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, চাঁদপুর সদর, বরিশাল সদর ও হিজলা, পিরোজপুরের কাউখালী, পটুয়াখালী সদর, ভোলার মনপুরা, খুলনার কয়রা এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান জানান, এ উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে নৌপথে চলাচলকারী নৌযানগুলোকে কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় আগাম সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাসের মাধ্যমে নৌদুঘর্টনা রোধসহ যাত্রী সাধারণের প্রাণহানি এবং মালামালের ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় এ সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়া হতে পারে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানের জন্য বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের দেশব্যাপী পর্যবেক্ষণাগারের সংখ্যা মোট ৫৭টি। এর মধ্যে আটটি পর্যবেক্ষণাগার দেশের বিভিন্ন নদীবন্দরে স্থাপিত। কিন্তু বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী সঠিকভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানের জন্য সারাদেশে মোট ১১৭টি পর্যবেক্ষণাগার প্রয়োজন। যার মধ্যে নদীবন্দরের সংখ্যা ২২টি। এ প্রেক্ষাপটে অবশিষ্ট ১৪টি নদীবন্দরে পর্যবেক্ষণাগার স্থাপনের জন্য মোট ২৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৫’র জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুন মেয়াদে নৌ-দুঘর্টনা প্রশমন কল্পে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল পূর্বাভাস কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে বাস্তবায়নকালে একটি পর্যবেক্ষণাগার (নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর) জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে বাদ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৩টি নদীবন্দরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, অফিস ভবন নির্মাণ ও আংশিক সীমানা প্রাচীর ইত্যাদি কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। অর্থ বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় জনবলের অনুমোদন না পাওয়ায় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ না করেই প্রকল্পটি সমাপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালের জুলাই মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় উল্লেখিত ১৩টি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জন্য আবহাওয়া অধিদফতরের রাজস্ব খাতে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৮০টি পদ অনুমোদন করে। এর ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি অবশিষ্ট কাজ যেমন, আবাসিক ভবন, যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ইত্যাদির জন্য বর্তমানে বাংলাদেশের ১৩টি নদীবন্দরে প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ শীর্ষক এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটির ওপর গত ২৮ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পিইসি সভার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করে পুনরায় প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, প্রস্তাবিত ১৩টি নদীবন্দরে ১৩টি কেন্দ্রে আবাসিক ভবন নির্মাণ, প্রতিটি কেন্দ্রে আধুনিক অটোমেটিক ওয়েদার যন্ত্রপাতি স্থাপন, নৌ-পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলোকে ঢাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্তিকরণ এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ সূত্র জানায়, চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সঙ্গে এ প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ। কেননা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নৌযানগুলোকে সঠিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার মাধ্যমে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বছরভিত্তিক অর্থ চাহিদা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে এক কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ কোটির ৯৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
×