ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আমনের দরপতনে কৃষকের মাথায় হাত

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

আমনের দরপতনে কৃষকের মাথায় হাত

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী থেকে ॥ হঠাৎ করেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিতে শস্যভা-ার খ্যাত উত্তর জনপদের রংপুর ও দিনাজপুরের আট জেলায় আমন ধানের দরপতন ঘটিয়েছে। এতে প্রধান প্রধান ধানের বাজারগুলো সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে সম্পূর্ণরূপে জিম্মি হয়ে পড়েছে। উৎপাদকরা এদের হাতে জিম্মি হয়ে কম দামে বাধ্য হয়ে বেচাকেনা করছে। চাষীরা ন্যায্য দামের আশায় হাটগুলোতে ধান বিক্রি করতে আসে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে তাদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে কৃষকদের হাতে নামমাত্র মূল্য তুলে দিচ্ছে। ধানের দরপতনে এই দুই কৃষি অঞ্চলের কয়েক লাখ কৃষকের নবান্নের উৎসব ম্লান করে দিয়েছে। ফলে বাম্পার ধানের আবাদে গ্রামীণ অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে মন্দা। জানা গেছে, আমন ধান কাটাই-মাড়াইয়ের শুরুতেই ধানের মন ৭ শত টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। যে সময় পুরোদমে ধান কাটাই-মাড়াই শেষ হয়, সে সময় ধানের দাম কমতে শুরু করে। গত দুই সপ্তাহে মণপ্রতি আমন ধানের দরপতন ঘটে তিন দফায় ১০০ টাকা। শুক্রবার আরেক ধাপ দরপতন ঘটে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫শ’ টাকায়। তবে কোথাও কোথাও এই দর আরও কম, যা ৪৭৫ টাকা থেকে ৫২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা প্রতিমণ আমন ধানে লোকসান দিচ্ছেন ২০০ টাকা। এতে কৃষকের হাতে নগদ টাকা না থাকায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে চরম মন্দা দেখা দিয়েছে। এদিকে ধানের দাম পড়ে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে চালের দামে কোন প্রভাব পড়েনি। এতে খুচরা বাজারে কমছে না চালের দাম। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষক দরিদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে উত্তরাঞ্চলে বর্গাচাষী পরিবারের সংখ্যা ৯ লাখ ২৯ হাজার ৭৫৭। ফলে আমন ধানের দরপতনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষী। অনেক কৃষক জানান, তাঁরা উচ্চহারে দাদন ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ঋণ নিয়ে ফসল উৎপাদন করেন। ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করে দেনা শোধ করতে হয় তাঁদের। মৌসুমী ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে একযোগে ফসল বিক্রির জন্য বাজারে আনতে বাধ্য হন তাঁরা। এ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এক শ্রেণীর ফড়িয়া ও দালাল। কৃষকের গোলাশূন্য হলে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ে। আর এ দামের সুবিধা পায় মধ্যস্বত্বভোগীরা।
×