ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে-

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে-

কথায় বলে ঘুমন্ত লোকের ঘুম ভাঙানো সম্ভব, কিন্তু জেগে জেগে ঘুমালে কঠিন কৌশল খাটিয়েও তাকে জাগানো যায় না। আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যেন সেই দশা। একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে, নতুন নতুন সুপারিশ তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। পাগলা ঘোড়ার লাগামও মনে হয় টেনে রাখা সম্ভব, কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে মানুষের নিস্তার নেই, তার লাগাম টানে কার সাধ্য! বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠে দেশের নানা অঞ্চলের এক দিনের সড়ক দুর্ঘটনার যে চিত্র উঠে এসেছে তা রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। টাঙ্গাইলের মধুপুরে ট্রাক-টেম্পোর মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশু ও নারীসহ ১০ জন; নওগাঁ, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, পিরোজপুর ও হাটহাজারীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় আরও ৯ জন নিহত হয়েছেন। এমন মৃত্যুমিছিল যেন নিত্যদিনের দুঃসংবাদ! ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সড়ক নিরাপত্তা দশক ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। ২০১১ সালে মস্কোতে জাতিসংঘ তার সদস্য দেশগুলোয় ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমিয়ে আনার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশও এর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ৫০ শতাংশ দেশ পর্যায়ক্রমে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছে। আর বাকি ৫০ শতাংশ দেশে দুটিই বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১২ হাজার মানুষের। সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। দুর্ঘটনাকবলিত কোন যানবাহনের চালককে আটক করা হলেও বেশিরভাগ সময়ই তাদের শাস্তি হয় না। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা, জরুরী ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনাহীনতাও দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে দায়ী। চলতি মাসেই নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নেতারা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবার এবং সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন সময় এ জাতীয় অনুরোধ-দাবি জানানো হয়ে থাকে। কিন্তু দেখা গেছে এ সবই যেন অরণ্যে রোদনের শামিল। বাস-ট্রাকসহ নানাবিধ পাবলিক ট্রান্সপোর্টের চালকের সহকারীই ‘প্রমোশন’ পেয়ে খোদ চালক বনে যান। এদের হাতে যান তো যন্ত্রদানব হয়ে উঠবেই। শুধু চালকের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে শতভাগ নৈতিক ও কঠোর থাকতে পারলেই দুর্ঘটনা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এটা ঠিক যে, দেশের বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। এসব যান চালানোর জন্য চাই দক্ষ ও বিবেচক চালক। এই বিপুলসংখ্যক যোগ্য চালক তৈরির জন্য দেশে কি কোন সুষ্ঠু কার্যক্রম রয়েছে? এমনকি লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকদের চলার পথে আরও সতর্ক থাকা এবং ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে মেনে চলার ব্যাপারে কোন কর্মশালা কিংবা প্রশিক্ষণের পরিকল্পনাও কি নিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ? সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আসলে সব পক্ষকে আন্তরিক হতে হবে। একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে উদ্যোগী হতে হবে। তা না হলে যে কেউ যে কোনদিন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ইহধাম ত্যাগ কিংবা পঙ্গুত্ববরণ করবেন, এটা নিঃসংশয়ে বলা যায়।
×