ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভয়াবহ সুনামির দশম বার্ষিকী

সবকিছু ধ্বংস করে দিলেও নিভে যায়নি আশার আলো

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

সবকিছু ধ্বংস করে  দিলেও নিভে যায়নি আশার আলো

এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে সুনামি আঘাত আনার দশম বার্ষিকী পালিত হয় শুক্রবার। ভারত মহাসাগরে বিশাল সুনামির আঘাতে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় ২ লাখ ২৬ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা যায়। শুক্রবার সুনামির দশ বছর পূর্তিতে মৃতদের জন্য বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। খবর বিবিসি ও ওয়েবসাইটের। ভয়াবহ সেই ভূমিকম্প ও তার পরবর্তী সুনামি আঘাত হানার দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষ ইন্দোনেশিয়ার বান্দা আচেহ শহরে সমবেত হন। তারা সেখানে মৃতদের জন্য মোনাজাতে অংশ নেন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কাল্লা। আচেহ প্রদেশের রাজধানী বান্দা আচেহ শহর ২০০৪ সালের সেই শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামিতে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ভূমিকম্প ও সুনামির ছোবলের পরও শহরে টিকেছিল ১৯ শতকের কয়েকটি ভবন। তার মধ্যে একটি ছিল বাইতুর রহমান মসজিদ, এটি ওই প্রদেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে মৃতদের জন্য স্মরণ অনুষ্ঠানে আসা ডালিয়া নামের এক নারী বলছিলেন, সুনামি তাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিলেও তারা আশার আলো দেখেছেন। মসজিদের ইমাম আজমান ইসমাইল বলেন, সুনামি এই প্রদেশের বাসিন্দাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। এর ফলে এখানে ৩০ বছরের সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ হয়েছে। সুনামির পর আজ অবধি এখানে কোন অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যায়নি। প্রত্যেকে এখানে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছেন। সুনামি আঘাত হানার আগে থেকেই তিনি ওই মসজিদের ইমামতি করছেন। মসজিদ অক্ষত থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আল্লাহ একে রক্ষা করেছেন। শুক্রবার দিনের আরও পরের দিকে সুনামিতে নিহতদের স্মরণে প্রধান অনুষ্ঠান আয়োজিত হওয়ার কথা। সুনামির উৎস ছিল সুমাত্রার পশ্চিম উপকূলে সমুদৃপৃষ্ঠের ৯.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প। স্মরণকালের ইতিহাসে এটি ছিল তৃতীয় শক্তিশালী ভূমিকম্প। এর প্রভাবে সমুদ্রের ৩০ মিটার বা ১০০ ফুট উঁচু ঢেউ তৈরি হয়। ৮শ’ কিলোমিটার গতিতে প্রচ- সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ, শ্রীলঙ্কা, ভারতের আন্দামান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড ও সোমালিয়া উপকূলে। মৃতের সংখ্যা ছিল আড়াই লাখের কাছাকাছি। শুধু আচেহ প্রদেশে মারা যায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। নিখোঁজের সংখ্যা দুই লাখ মানুষ। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হয় লাখ লাখ মানুষ। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের মতো। ১০ বছর পর আক্রান্তরা ক্ষতি সামলে উঠলেও মনের ক্ষত এখনও পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি। ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও থাইল্যান্ডে মারা গেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে দুই হাজার ছিলেন বিদেশী পর্যটক। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় সুনামের ধাক্কায় ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নিহত হয় এক হাজার ২৭০ জন। শুক্রবার দেশটির লোকজন প্রতীকী একটি ট্রেনে আরোহণের মাধ্যমে সেই ভয়াবহ ঘটনার বার্ষিকী পালন করেন।
×