ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফেব্রুয়ারি থেকে আড়াই হাজার শরণার্থী ফেরত পাঠানো শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

ফেব্রুয়ারি থেকে আড়াই হাজার শরণার্থী ফেরত পাঠানো শুরু

তৌহিদুর রহমান ॥ বাংলাদেশ থেকে প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। এ সব রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দশ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই দেশের যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটির অংশ হিসেবে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির চূড়ান্ত তালিকা মিয়ানমার সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ দশ সদস্যের কমিটির একটি তালিকা গঠন করেছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে প্রধান করে বাংলাদেশ অংশের এ কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির তালিকা মিয়ানমার সরকারের কাছে পাঠিয়ে সে দেশের তালিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা করছে আগামী জানুয়ারির মধ্যেই মিয়ানমার সরকারের কমিটির তালিকা পাওয়া যাবে। ওই তালিকা পাওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে সরকার। সূত্রমতে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে কক্সবাজারের কুতুপালং ও নোয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত দুই হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। তবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে দুটি দেশের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুই দেশের কমিটি থেকে একটি যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিই বাংলাদেশ থেকে এ আড়াই হাজার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কার্যক্রম শুরু করবে। সে অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিটির প্রধানকে (আরআরআরসি) নিয়ে বাংলাদেশ অংশের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রধান হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর লক্ষ্যে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের অংশ হিসেবে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির তালিকা মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে মিয়ানমারকে সে দেশের কমিটির তালিকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মিয়ানমার পক্ষ তাদের কমিটির তালিকা পাঠানোর পর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে। তখন যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করবে। গত ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের অষ্টম বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে দুই হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় দেশটি। তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে দুই মাসের মধ্যে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনেকটাই পিছিয়ে যায়। এর আগে ১৯৯১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নিয়েছিল মিয়ানমার। তারপর থেকে এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৫ লাখ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্র্থী অবস্থান করছে। তবে কেউ কেউ মনে করেন এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কক্সবাজার সীমান্তে কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় ৩০ হাজার তালিকাভুক্ত শরণার্থী রয়েছে। অবশ্য জাতিসংঘের শরণার্থী পর্যবেক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসেবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা দুই লাখ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্প্রতি মিয়ানমার সফর করে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি এবং তাদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দিতে দেশটির রাষ্ট্রপতি থেইন সেইনকে অনুরোধ জানান।
×