ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপ ক্রিকেট, বাংলাদেশ স্কোয়াড

এক ইনিংসেই ভাবনায় নাসির!

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

এক ইনিংসেই ভাবনায় নাসির!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মোহামেডানের বিপক্ষে সুপার লীগের প্রথম ম্যাচে ৬৯ বলে ৫ চার ও ৫ ছক্কায় অপরাজিত ৮২ রানের কী ইনিংসটাই না খেললেন ‘মিস্টার ফিনিশার’ খ্যাত নাসির হোসেন। এক ইনিংসেই নির্বাচকদের ভাবনায় ঢুকে গেলেন। এই একটি ইনিংসেই হয়ত বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের চূড়ান্ত দলেও নাসিরের থাকা নির্ধারণ হয়ে গেছে। বিসিবির এক নির্বাচক সেই ইঙ্গিতই দিলেন। নির্বাচক জানালেন, ‘ভাল ইনিংসই খেলেছে নাসির। সে আগেও আমাদের ভাবনায় ছিল। এখনও আছে। তাকে যে কলকাতায় ইডেন গার্ডেনসের ১৫০ বছরপূর্তির জন্য টুর্নামেন্টের দলে রাখা হয়েছে, সেখানেও নাসিরকে ওয়ানডেতে আবার কিভাবে ফর্মে ফেরানো যায় সেই ভাবনা থেকেই রাখা হয়েছে। যেহেতু বিশ্বকাপ হবে ওয়ানডে ফরমেটে, তাই নাসিরকে বিশ্বকাপের দলে রাখার চেষ্টাই করা হয়েছে। এখন নাসির লীগে ভাল খেলছে। বিশ্বকাপের দলে তাকে নিয়ে ভাবনা থাকাটাই স্বাভাবিক। ভালভাবেই নাসির ভাবনাতে ঢুকে গেছে।’ প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদও বিশ্বকাপ দলে নাসিরকে নিয়ে ভাবনার কথাই জানালেন। বললেন, ‘শুধু মোহামেডানের বিপক্ষে সুপার লীগের ম্যাচটিই নয়, পুরো লীগ জুড়েই ভাল খেলছে নাসির। মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ সবসময় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। এমন ম্যাচে চাপ নিয়ে নাসির যেভাবে খেলেছে তা প্রশংসনীয়ই। নাসির আমাদের ভাবনাতে ভালভাবেই আছে।’ প্রধান নির্বাচকের কথাতেই বোঝা যাচ্ছে বিশ্বকাপের জন্য যে ১৫ সদস্যের চূড়ান্ত দলটি দেয়া হবে, সেখানে নাসিরের নামটি থাকছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দেশের মাটিতে হওয়া সিরিজের একটি ম্যাচও খেলতে না পারা নাসির এবারের লীগে এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচ খেলেছে। শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, বোলিংয়েও আবাহনীর হয়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন নাসির। তিনটি অর্ধশতক আছে নাসিরের। তিনটি ম্যাচেই জিতেছে আবাহনী। কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে লীগ পর্বের ম্যাচে ৫৩ রান, ওল্ড ডিওএইচএসের বিপক্ষে ৬০ রান ও মোহামেডানের বিপক্ষে অপরাজিত ৮২ রান করেছেন নাসির। রান করেছেন ৫০.১৪ গড়ে মোট ৩৫১। তবে নাসির যে সুপার লীগে মোহামেডানের বিপক্ষে বিপদের সময় আবাহনীকে টেনে তুলে ম্যাচও জিতিয়েছেন, সেটিই সবার নজরে বেশি পড়েছে। নির্বাচকদের নজরেও তা পড়েছে। ম্যাচটি হারতেই যাচ্ছিল আবাহনী। এ ম্যাচটি হারলে ঢাকা লীগের এবারের আসরের শিরোপা জয়ের স্বপ্নও অনেকটাই ম্লান হয়ে যেত। ২৪১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১৯৮ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে আবাহনী। সেখান থেকে দলকে একাই জেতান নাসির। ১১১ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর যে ব্যাট হাতে নামেন, আর আউটই হননি। নাসির তাই বলেছেনও, ‘নামার সময় মনে হয়েছে ম্যাচটা অনেক সহজে জিতব। কিন্তু যত সময় যাচ্ছিল ততই কঠিন হয়ে আসছিল।’ নাসির শেষপর্যন্ত সেই কঠিন সময় পাড়িও দিয়েছেন। আবাহনীও ম্যাচ জিতেছে। ম্যাচ ফিনিশ করায় নাসিরও ম্যাচসেরা বিবেচিত হয়েছেন। ম্যাচ শেষে নাসির অবশ্য বলেছেন বিশ্বকাপ মাথায় রেখে খেলেননি, ‘আমি যদি বিশ্বকাপের জন্য খেলি তবে আমার জন্য পারফর্ম করা একটু কঠিন হয়ে যাবে। আমাকে ভাল খেলতে হবে বিশ্বকাপে খেলতে হবে এমন কিছু আমার মাথায় ছিল না। আমি যখন নেমেছি দলের অবস্থা মাথায় রেখে আমি চেষ্টা করেছি ওভাবে খেলার জন্য। আমি পারফর্ম করে যে জাতীয় দলে খেলব এমন কিছু ছিল না।’ তবে এ ইনিংস যে নাসিরের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে তা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ব্যাটসম্যানদের জন্য প্রতিটি ইনিংসই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন পর্যায়ের খেলাই হোক না কেন রান করলে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণই। ক্যারিয়ারে এবং আত্মবিশ্বাসে এটা অনেক সাহায্য করবে। সে রকমই একটা ইনিংস এটা আমার। যা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।’ নাসির এমন ইনিংস খেলে বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার কোন দাবিও তুলছেন না। শুধু বলছেন, ‘আমার এমন কোন দাবি নেই। এটা দেখার জন্য নির্বাচকরা আছে। বোর্ড অফিসিয়ালরা আছে তারা দেখবে।’ নাসির কোন দাবি না তুললেও নির্বাচকরা ঠিকই এ অলরাউন্ডারকে নিয়ে ভালভাবেই ভাবছে। বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করা হবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। ৭ জানুয়ারি দল ঘোষণা হবে। সেই চূড়ান্ত দলে নাসিরের থাকাটা এখন নিশ্চিতই হয়ে গেছে বলা চলে।
×