ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংশোধনাগার

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

সংশোধনাগার

গোটা দেশকে জেলখানা বানিয়ে একাত্তর সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তার সহযোগীরা বাঙালী নিধনে মত্ত হয়েছিল। তাদের উত্তরসূরিরা এখন জঙ্গীপনায় মত্ত। বাংলাদেশ জঙ্গী তৎপরতা অবলোকন করছে সেই ২০০১ সাল থেকে। ২০১৩ সালে তার ভয়াবহ রূপ দেখা গেছে। তারও আগে দেশজুড়ে এরা মঞ্চে বোমা, গ্রেনেড বিস্ফোরণ ও প্রাণহরণ করেছে। তাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে। কেউ কেউ সাজাপ্রাপ্তও। এদের পাশাপাশি নানা পর্যায়ের সন্ত্রাসীরাও তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এরা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলতে এক পায়ে খাঁড়া। ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গীপনার বিস্তারকালে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিতরাই বেশি তৎপরতা চালিয়েছে। তারা থেমে নেই এখনও। দেশজুড়ে তা-ব চালাতে তারা নানা পন্থা অনুসরণ করছে। কারাগারে আটক জঙ্গী ও সন্ত্রাসী নেতারা তাদের শিষ্য চেলা-চামু-াদের জেলে বসেই নির্দেশ-আদেশ দিয়ে আসছে অনেক কাল। বন্দী ও সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গীরাও মোবাইল নেটওয়ার্কের সুবিধা নিয়ে খুন, অপহরণ, ডাকাতিসহ লুটপাট চালিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়ে অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। জেলখানা যেন হয়ে গেছে জঙ্গীদের নিরাপদে জঙ্গীপনা পরিচালনার কেন্দ্র। এমনটাও শোনা যাচ্ছে যে, জেলখানায় বসে বন্দীরা বাইরের জগতেও দাপটে ছড়ি ঘোরায়। বন্দীদের ‘মোটিভেশন’ করে সন্ত্রাসবাদে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ ‘অভয়ারণ্য’ যেন কারাগারগুলো। কারারক্ষী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের সহযোগিতা তাদের জঙ্গীপনা বিস্তারে সহায়তা করেÑ এসব তথ্য সংবাদপত্রেও ছাপা হয়েছে। জঙ্গী, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক মামলার আসামিরা কারাগারের ভেতরে তাদের সহায়তায় মোবাইল ফোন, মাদকসহ নিষিদ্ধদ্রব্য নিয়ে বসবাস করে। তাদের রুখবে তেমন সাধ্য নেই বোধহয় কারা কর্তৃপক্ষেরও। এমনিতেই দেশের কারাগারগুলোর হালহকিকত সুবিধের নয়। নানা অব্যবস্থা, কম লোকবল, অদক্ষ জনবল, দুর্নীতিসহ বিবিধ অনিয়ম অপরাধীদের সংশোধন নয়, বরং আরও অধোগতি ঘটিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করেছে। আবার যেন তাদের উত্থান না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক সরকার। তাই আবার যেন জঙ্গীবাদের উত্থান না ঘটে সেজন্য অঙ্কুরেই তা বিনষ্ট করার মতো অবস্থা কারাগারগুলো রাখে কিনা তা সংশয়মুক্ত নয়। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গীরা যাতে কারাগার থেকে বাইরে যোগাযোগ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে কারারক্ষীসহ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এদের কেউ সহায়তা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারাগরগুলোতে আটক জঙ্গী, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- সম্পর্কে সতর্ক থাকার দায়টা কারা কর্তৃপক্ষের। অতীতে এ ব্যাপারে গাফিলতি হয়েছে। কিন্তু আর নয়। কারাগারগুলো জঙ্গী, সন্ত্রাসী, মৌলবাদীদের জন্য হয়ে উঠুক সংশোধনাগার। তাদের অপরাধী জীবন থেকে ফিরিয়ে আনার দরোজাগুলো উন্মুক্ত করা প্রয়োজন এবং তা সঙ্গত।
×