ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী ধর্ষকের ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

যুদ্ধাপরাধী ধর্ষকের ফাঁসি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আরও একজনের ফাঁসির রায় ঘোষিত হলো। এবারই প্রথম মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার একজন আসামিকে সর্বোচ্চ দ- প্রদান করা হলো। তার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। একাত্তর সালে তিনি কায়সার বাহিনী গঠন করে হবিগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। সেই এলাকার এক দানবরূপে আবির্ভূত হন কায়সার। পাকিস্তানী বাহিনীর পাশাপাশি এই বাহিনী নানা ধরনের নৃশংস অপরাধ সংঘটিত করে। কায়সারের বিরুদ্ধে গঠিত ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের দুটিসহ সাতটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদ- দেয়। মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেন। বিজয়ের মাসে কাক্সিক্ষত এই রায় প্রাপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, গণজাগরণ মঞ্চসহ সর্বস্তরের মানুষ সন্তুষ্ট। চলতি বছর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে কায়সারসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে রায় প্রদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে একমাত্র সাঈদী ছাড়া বাকি ছয়জনকেই মৃত্যুদ-ের আদেশ দেয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এবং তাদের দোসর রাজনৈতিক পক্ষ নানাভাবে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে, যা ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সূচনা থেকে এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করারই ধারাবাহিকতা। উল্লেখ করা দরকার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে আপত্তিকর অভিমত প্রকাশের দায়ে বাংলাদেশে বসবাসরত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে সাজাও দেয়া হয়েছে। এর পরপরই ‘দি নিউইয়র্ক টাইমস’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কড়া সমালোচনা করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এ সবই ছিল একাত্তরের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারী তথা রাজাকার আলবদরদের বিচারের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা। তা সত্ত্বেও এক বছরের মধ্যে সাতটি বহুল আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার বিষয়টি স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি তথা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবে। বিলম্বে হলেও মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের একে একে বিচারের সম্মুখীন করা এবং প্রাপ্ত রায় কার্যকর করার ভেতর দিয়ে জাতি তার ঋণ শোধ করছে। এটা গভীর স্বস্তির জায়গা। সেইসঙ্গে কিছুটা আফসোস অবশ্য রয়ে গেছে এ কারণে যে, আরও আগে এই বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব হলে দেশে আইনের শাসন আরও সুদৃঢ় হতো। কায়সারের ফাঁসির রায় প্রদানকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেছেন : ‘ধর্ষণের শিকার নারী এবং যুদ্ধশিশুদের মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দেয়া উচিত। তাঁদের মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিতে গভীরভাবে নজর দেয়া দরকার।’ সরকার অবশ্য ইতোমধ্যেই বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যুদ্ধশিশুদের ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া দরকার। সকল যুদ্ধাপরাধীর যথোচিত শাস্তি সুনিশ্চিত করা হোকÑ এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা করে।
×