ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থছাড় বাড়াচ্ছে দাতারা

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

অর্থছাড় বাড়াচ্ছে দাতারা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ অর্থছাড় বাড়াচ্ছে দাতারা। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) দাতা সংস্থা ও দেশ মিলে অর্থছাড় করেছে ৯০ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অক্টোবর পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় হয়েছিল ৬৭ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৭ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের নবেম্বর পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি কিছুটা কম এসেছে। তবে এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছে ইআরডি। কেননা ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১১০ কোটি মার্কিন ডলার। জানুয়ারি মাসে সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে চুক্তি হলেই প্রতিশ্রুতি অনেক বেড়ে যাবে। চলতি অর্থবছরে দাতারা যে অর্থছাড় করেছে তার মধ্যে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং অনুদান ১৫ কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দাতাদের অর্থছাড় বৃদ্ধির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। তাছাড়া গত কয়েক বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে, তারই ফল হচ্ছে এই বৈদেশিক সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। এক্ষেত্রে মুডিস এর যে ক্রেডিড রেটিং তাতেও বলা হয়েছে বাংলাদেশের সামষ্টি অর্থনীতি ভাল। গত তিন বছর ধরে তাদের রেটিং এ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চিত্র ফুটে উঠছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) দাতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৮৯ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪৩ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। অন্যদিক গত মাসে অর্থাৎ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি ছিল ৬৫ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরে অক্টোবর পর্যন্ত ছিল ১৩২ কোটি ৬১ লাখ দশ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দাতাদের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ৫৩ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫২ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরে যে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে তার মধ্যে আসল ৪৫ কোটি ৫০ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদ সাত কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরে পরিশোধকৃত অর্থের মধ্যে আসল ছিল ৪৫ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার এবং সুদ সাত কোটি ৮৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি পাঁচ মাসে ছাড় করেছে ২৪ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ছাড় করেছে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) চার কোটি ৩৫ লাখ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) চার কোটি আট লাখ ১০ হাজার এবং অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থা মিলে ছাড় করেছে ৪২ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আগামী জানুয়ারি মাসে ১১০ কোটি মার্কিন ডলার (১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার) চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে সরকার। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। ইতোমধ্যেই এ ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক বোর্ড। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত সংস্থাটির যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব জনকণ্ঠকে জানান, বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদনের পর যে কোন সময়ই চুক্তি হতে পারে। এটা এখন নির্ভর করছে ইআরডির ওপর। তবে আমি আশাবাদী যে জানুয়ারিতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। বিশ্বব্যাংকের দেয়া এ অর্থ যেসব প্রকল্পের ব্যয় করা হবে সেগুলো হচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষার মানের উন্নতি করতে, উপকূলীয় জনগণের প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিরোধের সক্ষমতা বাড়াতে এবং অতি দরিদ্র পরিবারের শিশুদের পুষ্টি ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে সাহায্য করবে। বিশ্বব্যাংকের অঙ্গসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিএ) হতে প্রাপ্ত সুদ-মুক্ত ঋণের মেয়াদ ছয় বছরের রেয়াতসহ ৩৮ বছর এবং সার্ভিস চার্জ ০.৭৫% প্রযোজ্য হবে। জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক ডেস্কের প্রধান কাজী শফিকুল আজম বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে সহযোগিতা দিন দিন বাড়াচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম কয়েক মাস চুক্তি স্বাক্ষর না হলেও জানুয়ারিতে তিনটি প্রকল্পে বড় ধরনের ঋণ চুক্তি করতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এর মাধ্যমে সংস্থাটি থেকে প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে যাব। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইডা থেকে সবচেয়ে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যায়। যা অন্য কোন দাতা সংস্থা এত সহজ শর্তে আর্থিক সহযোগিতা দেয় না। বিশ্বব্যাক সূত্র জানায়, চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাওয়া ১১০ কোটি ডলার যে তিন প্রকল্পের ব্যয় হবে সেগুলো হচ্ছে, চলমান ৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর জন্য আরও ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করে প্রাথমিক শিক্ষা মানের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে চায় সংস্থাটি। এ ছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় মেধাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ ও শূন্যপদ পূরণের নিশ্চয়তা বিধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি প্রবণতা কমিয়ে আনা। প্রকল্পের আওতায় নয়টি উপকূলীয় জেলায় ৫৫২টি নতুন বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, বিদ্যমান ৪৫০টির সংস্কার ও উন্নয়ন এবং আশ্রয় কেন্দ্রে সহজে পৌঁছানোর জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। এছাড়া দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর জন্য আয় সহায়তা কর্মসূচীর মাধ্যমে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশ অথবা দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ৪২টি উপজেলার ২৭ লাখ মানুষ উপকৃত করবে। প্রায় ৬ লাখ মা তাদের সন্তানদের পুষ্টি ও বুদ্ধি বিকাশ কর্মকা-ে অংশগ্রহণের বিনিময়ে আয় সহায়তা লাভ করবেন। স্মার্ট ক্যাশ কার্ড ব্যবহার করে এসব মায়েদের ডাকঘর হিসাবে মাসিক নগদ প্রদান করা হবে।
×