ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়ার সমাবেশস্থলেই ছাত্রলীগের বিক্ষোভ ॥ পরিস্থিতি থমথমে

বকশীবাজার মিশন ব্যর্থ, বিএনপির দৃষ্টি গাজীপুরে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

বকশীবাজার মিশন ব্যর্থ, বিএনপির দৃষ্টি গাজীপুরে

বিশেষ প্রতিনিধি/গাজীপুর প্রতিনিধি ॥ আগামী ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে বিএনপির ঢাকার বকশীবাজারে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ সৃষ্টির চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তবে যেকোন মূল্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত ও অস্থিতিশীল করতে মরিয়া দলটি। তাই বকশীবাজারের মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর দলটির দৃষ্টি এখন গাজীপুরে। আগামীকাল শনিবার গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে খালেদা জিয়ার সমাবেশ। একই স্থানে সমাবেশ ডেকেছে ছাত্রলীগও। দু’পক্ষই কর্মসূচী সফল করতে মরিয়া। বিএনপি চাইছে, ছাত্রলীগের বাধায় সংঘর্ষ হবে। সমাবেশ প- হলেই ৫ জানুয়ারি দেশজুড়ে হরতাল ডাকা তাদের পক্ষে সহজ হবে। গাজীপুরে সমাবেশকে ঘিরে মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে শনিবারের জনসভা যে কোন মূল্যে সফল করবে। আর নির্ধারিত জনসভায় যথাসময়েই উপস্থিত হবেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে ছাত্রলীগ সভাপতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গাজীপুরের ছাত্র-যুব-শ্রমিক বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ইতোমধ্যে আমাদের বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেছে। এ সমাবেশকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতা হলে তার দায় বিএনপিকেই নিতে হবে। ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবারই ভাওয়াল কলেজ মাঠ দখলে নিয়েছে গাজীপুর ছাত্রলীগ। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বকশীবাজার আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের শোডাউনের সিদ্ধান্ত খুব গোপনেই নিয়েছিল বিএনপি। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকালে লাঠিসোটা নিয়ে বিপুলসংখ্যক যুবদল-ছাত্রদল ও বিএনপি ক্যাডারদের জড়ো করা হয়েছিল আলিয়া মাদ্রাসার আশপাশে। পরিকল্পনা ছিল-খালেদা জিয়ার গাড়িরবহর এলাকায় আসার সঙ্গে সঙ্গে শত শত ক্যাডার আদালত এলাকায় ঢুকে পড়ে একটি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। আগামী ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও অস্থিরতা সৃষ্টির প্রাক-মহড়া হিসেবেই বকশীবাজারকে বেছে নিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের প্রবল বাঁধায় এ পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণ ভেস্তে যায়। সূত্রটি আরও জানায়, যেভাবে প্রস্তুতি ছিল সে অনুযায়ী দলীয় নেতাকর্মী ও ক্যাডারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি বিএনপি। দলটির পরিকল্পনাকারী নেতাদের ধারণা ছিলÑ বকশীবাজার এলাকায় কমপক্ষে ৫০ হাজার নেতাকর্মী জড়ো হবে, খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তারা রাজধানীতে একটি বড় ধরনের শোডাউন ও শক্তির মহড়া দিতে পারবে। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে চলে যাওয়ার পর রাজধানীতে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ করাও পরিকল্পনাও ছিল বিএনপির গোপন সিদ্ধান্তে। গোপনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েও বিএনপি বুধবার বকশীবাজারে ১০ হাজার নেতাকর্মীও জড়ো করতে ব্যর্থ হয়। আর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগ মাঠে নামায় তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বকশীবাজারে সৃষ্ট সংঘর্ষে শুধুমাত্র ছাত্রলীগের কিছু অংশের ধাওয়া খেয়ে ছাত্রদল-যুবদল-শ্রমিক দলসহ বিএনপি হাজার হাজার নেতাকর্মীদের পলায়নের দৃষ্ট দেখে প্রচ- হতাশ বিএনপির হাইকমান্ড। এখন দ্বিতীয় টার্গেট গাজীপুরের সমাবেশকে ঘিরেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে দলটির নীতিনির্ধারকদের মাঝেও। কেননা বিচ্ছিন্ন ছাত্রলীগের একটি অংশের প্রতিরোধেই যেভাবে বিএনপির সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পালিয়েছে, পিটুনি খেয়েছে, তাতে আগামীকাল শনিবার গাজীপুরের সমাবেশ করা তাদের পক্ষে কঠিনই হতে পারে। বিএনপি মাঠের নেতাদের মতে, এবার বিচ্ছিন্ন অংশ নয়, পুরো ছাত্রলীগ সংগঠিত হয়ে মাঠে নেমেছে গাজীপুরে। সমর্থন দিয়েছে স্থানীয় যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের পুরো সাংগঠনিক শক্তি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের পক্ষে থাকবে। এই বাস্তব অবস্থায় আদৌ তারা সমাবেশ করতে পারবে কিনা, কিংবা সংঘর্ষ বাঁধলে কতক্ষণ টিকে থাকতে পারবে- এ নিয়ে সন্দেহ-সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আর বুধবার পত্রপত্রিকায় ও টেলিভিশনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হাতে বিএনপি ক্যাডারদের যেভাবে পিটুনি খেতে দেখেছে, তাতে গাজীপুরে যথেষ্ট পরিমাণ নেতাকর্মী উপস্থিতি নিশ্চিত করা নিয়েও টেনশনে রয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ও গাজীপুরের তিনজন বিএনপি নেতা জানান, হুমকি-ধমকি দেয়া হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন পর্যন্ত ভাওয়াল কলেজ মাঠে মঞ্চ নির্মাণ করা যায়নি। লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগ আগেই মাঠটি দখল করে রয়েছে। স্থানীয় ছাত্রদল-যুবদল একবার সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেও ধাওয়ার মুখে পালিয়েছে। আর স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকেও স্পষ্ট অনুমতি মেলেনি সমাবেশের। যেকোন সময় পুলিশ প্রশাসন থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হতে পারে। এ সব কারণে শনিবারের বিএনপির সমাবেশ করার বা সেখানে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি নিয়ে আমরাও সন্দিহান। তবে জানতে পেরেছি, পুলিশ সমাবেশের অনুমতি না দিলে কিংবা ছাত্রলীগ বাধা দিলে ৪-৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করা হতে পারে। যে কোন মূল্যে সমাবেশের ঘোষণা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ॥ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে শনিবার গাজীপুরে ভাওয়াল কলেজে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, শনিবারের সমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষ ও সহিংসতা হলে তার দায় বিএনপিকেই নিতে হবে। ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতাকে অবমাননা ও কটাক্ষের প্রতিবাদে শনিবার গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজে ছাত্রলীগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। গাজীপুরে ছাত্র-যুব-শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ আমাদের বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেছে। তারেক রহমান ক্ষমা না চাইলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সমাবেশ পরবর্তীতেও কী প্রতিহত করবেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে সোহাগ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমানের কটূক্তির বিপক্ষে সমাবেশ করাটাই হচ্ছে আমাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ। তারেক রহমানকে অবশ্যই জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ এখন আমাদের দুই ধরনের লড়াই হচ্ছে। একটি হচ্ছে আইনী, অপরটি হচ্ছে রাজপথের লড়াই। এ ধরনের কর্মসূচী নিয়ে আমরা মাঠে থাকব। বুধবার বকশীবাজারের সংঘর্ষ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমাদের ওপরই আক্রমণ করা হয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকর্র্মীর ওপর হামলা করা হয়েছে। তাদের এই ঘটনা ছিল পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরাই বরং সাবেক বিরোধী দলের নেতার প্রতি সম্মান দেখিয়েছি। উভয় পক্ষে সমাবেশ আহ্বান করায় সহিংসতার আশঙ্কা নিয়ে বিভিন্ন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির মন্তব্য সম্পর্কে সোহাগ বলেন, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের অনুরোধ করব আগে জাতির পিতাকে নিয়ে যে কটূক্তি করা হয়েছে তার প্রতিবাদ করুন। তারপর আপনাদের মতামতকে সাধুবাদ জানাব। প্রশাসন গাজীপুরে সমাবেশ করার অনুমতি ছাত্রলীগকে দেবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে বিএনপির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে উল্টো আমাকে এবং ছাত্রলীগের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা কী দেখলেন? বিএনপি পাড়া-মহল্লা থেকে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের জড়ো করে লাঠি, বাঁশ হাতে নিয়ে মিছিল নিয়ে খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়া কী প্রমাণ করে? এর সমস্ত ঘটনার দায় বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংগঠনের। ফেসবুকে প্রদত্ত স্ট্যাটাস সম্পর্কে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি ও ১৬ কোটি মানুষের আবেগ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে তারেক জিয়া রাজাকার বলেছে। বুধবার বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলা করেছে বিএনপি-ছাত্রদল। এরই প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক হিসেবে ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। তিনি বলেন, যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করে তারা নেড়িকুত্তার চেয়েও নিকৃষ্টতম। তারেক জিয়া অবিলম্বে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে শুধু বক্তব্য নয়, রাজনৈতিকভাবেও এর কঠোর জবাব দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, সহসভাপতি জয়দেব নন্দী, রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী, মহিউদ্দিন মহি, নাজমুল হুদা ওয়ারেসী চঞ্চল, জিসান মাহমুদ, মোস্তফাফিজুর রহমান মোস্তাক, শেখ রাসেল, মেহেদী হাসান মোল্লা, ওমর শরীফ প্রমুখ। গাজীপুর থমথমে, ভাওয়াল মাঠ ছাত্রলীগের দখলে ॥ শনিবারের বিএনপি ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে ঘিরে পুরো জেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী নিয়ে উভয় পক্ষই মাঠ দখলের চেষ্টায় মহড়া দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভাওয়াল কলেজ মাঠে রয়েছে ছাত্রলীগ ও পুলিশ। গত দু’দিনেও কলেজ মাঠে বিএনপির কোন তৎপরতা বা নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের জনসভার মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মাণের জন্য মালামাল ভর্তি ট্রাক মাঠে প্রবেশ করতে দেয়নি ছাত্রলীগ। বাধার মুখে ট্রাকটি ফিরে যায়। একই স্থানে শনিবার পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশ আহ্বান ও রাজনৈতিক কর্মসূচী দিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টার ঘটনায় উত্তেজনার পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় জলকামানসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোঃ হারুন অর রশীদ পিপিএম জানান, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা দু’পক্ষেরই আবেদন পেয়েছি। কাউকেই আমরা অনুমতি দেইনি। তবে পুলিশের অনুমতি ছাড়া যদি কেউ কোন ধরনের সভা করার চেষ্টা করে তবে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি মিছিল বের করে নগরের বিভিন্ন মহাসড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভাওয়াল কলেজ মাঠে মহড়া দিয়েছে। পরে তারা ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজের সামনে সমাবেশ করে যে কোন মূল্যে খালেদা জিয়ার জনসভা প্রতিহত করে ভাওয়াল কলেজ মাঠে ছাত্রলীগ আয়োজিত শনিবারের সমাবেশ সফল করার ঘোষণা দেয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার দিনভর কলেজ মাঠে অবস্থান নিয়ে নিজেদের দখলে রেখেছে। এদিকে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করার উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিকেলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে শনিবার খালেদা জিয়ার সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান পূর্বানুমতি অনুযায়ী সমাবেশ করার দৃঢ়আশাবাদ ব্যক্ত করে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে জেলা প্রশাসকের কাছে সার্বিক সহায়তা চেয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা সমাবেশ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ সমাবেশকে বাধা দিতে ছাত্রলীগ গত দুই দিন ধরে ভাওয়াল কলেজ মাঠে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। তারা আমাদের ডেকোরেটরের মালামাল ঢুকতে দেয়নি। এ অবস্থায় আমরা সেখানে গেলে সহিংসতা শুরু হবে, যা আমরা চাই না। আমরা চাই না কেউ আমাদের ওপর হামলা করুক অথবা আমরা কারও ওপর হামলা করি। আমরা চাই বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাতকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সেক্রেটারি কাজী ছায়েদুল আলম বাবুল, সিনিয়র সহসভাপতি সালাউদ্দিন সরকার ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবির প্রমুখ। এর আগে বিএনপি নেতৃবৃন্দ মহানগরের চান্দনা এলাকায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বাসায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। ২০ দলীয় জোটের জনসভার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার কাপাসিয়ায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ্ সাংবাদিকদের বলেছেন, গণতন্ত্রমনা মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ে আগামী শনিবার গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের মহাসমাবেশ যে কোন মূল্যে হবেই। সরকার বুদ্ধিমান হলে দেশনেত্রীর সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করবে না। আমরা আশা করব এ সমাবেশে সরকার বাধা না দিয়ে তাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবে। তিনি উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীদের গাজীপুরে শনিবারের সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলাম বাবুল জানান, এখানে হঠাৎ করে যদি প্রশাসনের অবহেলার কারণে বা দায়িত্বহীনতার কারণে কোন বড় ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে। কারণ ছাত্রলীগের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রশাসন আমাদের বলছে। প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে একটি দলের অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা যারা সশস্ত্র অবস্থায় লাঠি নিয়ে জনসভাস্থলে অবস্থান করছে, আমাদের লোকজনকে রাস্তায় বা সভাস্থলে যেতে দিচ্ছে না, বাধা দিচ্ছেÑ তাদের সঙ্গে আমরা কী আলোচনা করব? অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান জানান, বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করার কারণে তারেক রহমানকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। জবাবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ছাত্রদল গণধোলাই দেবে বলায় তারা খালেদা জিয়ার সভা প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ বসে থাকতে পারে না। তারা ছাত্রলীগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে এবং যে কোন মূল্যে খালেদা জিয়ার সভা প্রতিহত করবে। গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দ্বীপ জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তির জন্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা এবং দল থেকে তাকে বহিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় যে কোন মূল্যে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার আগমন ও জনসভাকে প্রতিহত করা হবে।
×