ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিটিভিকে জনগণের মুখপত্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

বিটিভিকে জনগণের মুখপত্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে

বাংলানিউজ ॥ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) শুধু সরকারের মুখপত্র হিসেবে কাজ করবে না, এটিকে জনগণের মুখপত্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে এবং এর কাজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি ভবনে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমটির সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিটিভি কেবল সরকারের নয়, এটি জাতীয় টেলিভিশন। বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে এর ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিটিভি শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাবে। অতীতে বিটিভিকে ক্ষমতা দখলের কাজে ন্যক্কারজনকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সুযোগ আর দেয়া হবে না। রাজধানীর রামপুরা বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে জাঁকজমক পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে এর সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব। সাত দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দেশের শিল্প সংস্কৃতি জগতের সব মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় বিটিভি ভবন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিটিভিকে ব্যবহার করে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসক জিয়া শুধু স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদরদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত করেননি, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শকে মুছে ফেলার ঘৃণ্য পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। জিয়াসহ ’৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসকরা বিটিভিকে ব্যবহার করেছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির হাতিয়ার হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশকে আবারও নব্য পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয়। জাতীয় সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান বিটিভি-বেতারে জাতির পিতার নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী সেøাগান জয়বাংলা নিষিদ্ধ করা হয়। রাজাকার, আল-বদর, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ইত্যাদি শব্দগুলো উচ্চারণ করা যেত না। ১৯৭৫-এর ৭ নবেম্বর বিপ্লবের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়। সেদিন নির্মমভাবে নিহত বিটিভির চার কর্মকর্তা মনিরুল আলম, আকমল খান, এএফএম সিদ্দিক ও ফিরোজ কাইয়ুম চৌধুরীকে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এঁদের একটাই অপরাধ ছিল তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কিছু ফুটেজ দেখিয়েছিলেন। এ অবস্থার আজ উত্তরণ হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং আদর্শ সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন। আর এটা সম্ভব হয়েছে জাতীয় সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকার কারণে। তিনি বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমে মিথ্যাচার বন্ধের উদ্যোগ নেয়। স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে বিটিভিকে তার জাতীয় দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেয়। শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটিভি এখন সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, নির্মল বিনোদন এবং রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা মাথায় রেখে অনুষ্ঠান ও সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশ্বব্যাপী বাঙালী সংস্কৃতির পরিচিতি, প্রসার ও ঐতিহ্য রক্ষায় বিটিভি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কৃষির উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্যবিবাহ রোধ, বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক-গণসচেতনতা সৃষ্টিসহ ও নানা উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে বিটিভি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এসব অনুষ্ঠান তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গীবাদ নির্মূল এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে জনমত সৃষ্টিতেও বিটিভির ভূমিকা প্রশংসনীয়। তবে, বিটিভিকে বেসরকারী চ্যানেলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করারও তাগাদা দেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ডিআইটি ভবনে টেলিভিশনের বাংলা ভাষায় কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম মহাপরিচালক জামিল চৌধুরী এবং প্রথম দিনের সম্প্রচারে অংশ নেয়া দেশের প্রথিতযশা সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌসী রহমান। শিল্পীদের বিকাশে টেলিভিশনের বিরাট ভূমিকা রয়েছেÑমুহিত ॥ সিলেট অফিস জানায়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর কাজিটুলার বিটিভি সিলেট কেন্দ্রে সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে বলেছেন, শিল্পীদের বিকাশে টেলিভিশন বিরাট ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, আমরা ভাগ্যবান আমাদের জন্ম টেলিভিশন যুগে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টেলিভিশন। বিটিভি হওয়ার ৩ বছর পর পশ্চিম পাকিস্তানে টিভি স্টেশন হয়েছে। বেসরকারীভাবে প্রথমবারের মতো জাপানের এলসি কোম্পানি বাংলাদেশে টেলিভিশন চালু করে। বিটিভির সিলেট প্রতিনিধি আজিজ আহমদ সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস, সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, সাবেক সাংসদ সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ।
×