ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জগলুল স্মরণ সভা মানুষের জন্য কিছু করাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

জগলুল স্মরণ সভা মানুষের জন্য কিছু করাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রয়াত সাংবাদিক ও কলামিস্ট জগলুল আহ্মেদ চৌধূরী ছিলেন নিরহঙ্কার, নির্লোভ, পরোপকারী, বন্ধুবৎসল ও সদালাপী একজন মানুষ। একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন থাকলেও পেশাগত দায়িত্ব পালন ও সাংবাদিকতার সঙ্গে তিনি তাঁর রাজনৈতিক আদর্শকে গুলিয়ে ফেলেননি। তাঁর লেখালেখি ও আলোচনার বক্তব্য ছিল নির্মোহ ও নিঃস্বার্থ। আর মানুষের জন্য কিছু করে যাওয়াটা ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী স্মরণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। জগ্লুল আহ্মেদের বন্ধু, সাংবাদিক ও পরিবারের সদস্যরা এ সভার আয়োজন করেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মনিরুজ্জামান, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর বড় ভাই রোকনউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, ছোট বোন সেলিনা হোসেন চৌধুরী, ছেলে নাবিদ আহমেদ চৌধুরী, মেয়ে অন্তরা আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। সৈয়দ মহসিন আলী বলেন, সাংবাদিক জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর সঙ্গে আমার পরিচয় সেই ১৯৭১ সাল থেকে। কোনদিন তাঁর মাঝে লোভ, আত্মঅহঙ্কার ও স্বার্থপরতা দেখিনি। বর্তমান কেবিনেটে আমি ও কামরুল (খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম) দু’জন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও কোনদিন বলেনি, আমার জন্য কিছু কর। জগ্লুল ছিল অকৃত্রিম বন্ধু ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিক। জগলুল স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ভোরের কাগজ সম্পাদক ও তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য শ্যামল দত্ত বলেন, দুর্ঘটনার পর জগ্লুল আহ্মেদের চারপাশে অনেক মানুষ ভিড় করলেও কেউ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি, কোন গাড়ি তাঁর জন্য থামেনি। কেবল গাইবান্ধার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে জীবনে প্রথমবার ঢাকায় আসা ইমরুল কায়েস আহত জগ্লুল আহ্মেদকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে। তাই এই শহরের মানুষ হিসেবে জগলুল ভাইয়ের মৃত্যুর দায় আমরা কেউ এড়াতে পারি না। দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মনিরুজ্জামান বলেন, সততার বীজ ছিল জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর রক্তে। তাঁর বাবা ছিলেন মন্ত্রী। জগ্লুল যখন উত্তরায় বাড়ির কাজে হাত দিলেন তখন তাঁর বাবা ভাল করে খোঁজ নিয়ে জানলেন বাসস ও একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে জগ্লুল বাড়ির কাজে হাত দিয়েছে। জগ্লুল প্রমাণ করেছিলেন, শতভাগ সৎ থেকেও ঢাকা শহরে উন্নত জীবনযাপন করা যায়। জগ্লুল আহ্মেদের পরিবারের সদস্যদের মর্মস্পর্শী বক্তব্যে স্মরণসভায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রোকন উদ্দীন বলেন, জগ্লুলকে হারানোর বেদনা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। বড় ভাই হিসেবে ছোট ভাইয়ের স্মরণসভায় কথা বলতে হবে সেটি কোনদিন কল্পনায়ও ছিল না। সেলিনা হোসেন বলেন, আমার মাথার ওপর থেকে ছাদ সরে গেছে। এখন ছায়া বা পরামর্শ দেয়ার মতো আমার কেউ নেই। মেয়ে অন্তরা বলেন, পৃথিবীর সব সন্তানের কাছেই বাবা-মা তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। কিন্তু এখানে উপস্থিত আমার বাবার সহকর্মী, সুহৃদ, বন্ধু ও পরিচিতজন অনেকের প্রিয় মানুষ সাংবাদিক ও ব্যক্তি জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী। মেয়ে হিসেবে আমার জন্য এটি অনেক গর্বের। ছেলে নাবিদ বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। দৈনিক জাতীয় অর্থনীতির সম্পাদক এমজি কিবরিয়া চৌধুরীর সঞ্চালনায় শোকসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক হারুন চৌধুরী, হাসান শাহরিয়ার, আবুল কালাম আহাদ প্রমুখ। সভা শেষে জগ্লুল আহ্মেদ চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দরুদ পাঠ ও দোয়া করা হয়।
×