ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাট দেখবে কে!

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

পাট দেখবে কে!

পাট নিয়ে নিপাট কথা বলা দুরূহ প্রায়। পাট নেই আর পাটে, বরং সূর্যির সঙ্গে পাটে যাওয়ার পথে। পাটের রাজ্যের কপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আয়োজনও সম্পন্ন। এখন শুধু ক্ষণ গণনা। পাট নিয়ে গৌরবে কিংবা সখেদে বাঙালী মাত্রই বেশ দাম্ভিকতার সঙ্গে উচ্চারণ করত সোনালি আঁশ। যার ছিল বিশাল ঐতিহ্যমণ্ডিত অতীত। পণ্য হিসেবে বিশ্ব বাজারে পেরেছিল নিজের মর্যাদা, সম্মান তৈরি করতে। বিনিময়ে কাড়ি কাড়ি টাকা। আর সেই টাকায় একাত্তর-পূর্বকালে পাকিস্তান নামক বিসদৃশ রাষ্ট্রের উন্নয়ন ঘটত। বাঙালী পেত না কানাকড়িও। ৬ দফায় এই পাটের গুরুত্ববহ অবস্থান রয়ে গেছে। দেশের আয়ের একটা বড় অংশই ছিল সোনালি আঁশ। কিন্তু কবে যেন তা ক্রমান্বয়ে কৃষকের গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছিল। বহুমুখী সঙ্কটে নিপতিত পাটশিল্প রুগ্নদশা কাটিয়ে উঠতে পারছে তা নয়। নানা রকম উদাসীনতা, দাতাদের ভুল নির্দেশনায় ১৯৭৫ হতে পাট শিল্প ধ্বংসের গর্জন হেনেছিল। বিশ্বে বৃহত্তম পাটকল আদমজী বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। পাটের উৎপাদন কমেনি, বিশ্ববাজারের চাহিদাও বাড়ছে; কিন্তু সরবরাহ বাড়ছে না। এমনকি পাটের কোন গতি হচ্ছে না। উপরন্তু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সাকল্যে আছে যে ক’টি পাটকল সচল। এই যে অধোগতির দিকে ধাবমান হচ্ছে, তা নিয়ে তেমন মাথা ঘামানোর যেন কেউ নেই। পাটের রয়েছেন মন্ত্রী। তিনি নন পাটচাষী। পাট নিয়ে পাটুনিদেরও নেই ভাবনা; কিন্তু পাটচাষীদের দুর্দশা, দুর্ভোগের অন্ত নেই। বাংলাদেশে পাটকল কর্পোরেশন তথা বিজেএমসি চলতি মৌসুমে পাট ক্রয় করতে পারেনি। আর তা না করায় পাটকলগুলো সহসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। উৎপাদন করার মতো কাঁচামাল না থাকার ধকলে তারা সচল থাকতে পারছে না। বিজেএমসি পরিচালিত পাটকলগুলোতে প্রতিদিন ৭শ’ টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়ে আসছে। ৮০ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত। প্রতিমাসে বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু অর্থাভাবে পাট কিনতে না পারার অজুহাতে কলগুলো অচল হবে দু’এক মাসের মধ্যে। বিজেএমসির কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় এবার খুব কমই পাট কিনতে পেরেছেন তারা। পাটকলগুলোতে এখন গড়ে ২০-২৫ দিনের উৎপাদন চালানোর মতো পাট মজুদ রয়েছে। মূলত পাট কেনার মৌসুম হচ্ছে জুলাই-অক্টোবর। তবে পাটকলগুলো নবেম্বর পর্যন্ত পাট কিনে থাকে। চলতি মৌসুমে ২৬ লাখ কুইন্টাল পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ লাখ কুইন্টাল কেনা হয়েছেÑ যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৮ শতাংশ। যেভাবে চলছে তাতে শতকরা ২৫ ভাগের বেশি পাট কেনা সম্ভব নয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিজেএমসি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার কুইন্টাল পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও ক্রয় করতে পেরেছিল ১৬ লাখ কুইন্টাল। চলতি মৌসুমে পাট ক্রয়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। অদ্যাবধি মিলেছে মাত্র ২০০ কোটি টাকা। এই অর্থের বড় অঙ্কটাই ব্যয় হয়েছে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধে। দাম যখন কম ছিল, তখন অর্থাভাবে কেনা যায়নি। এই যে বেশি দামে পাট কেনা এবং তা যথাসময়েও নয়, তার জন্য দোষারোপ করা হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। অবশ্য তারা যদি যথাসময়ে ছাড় দিত টাকা, তবে সাশ্রয়ী দামে কেনা যেত- এমনটাই মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এত হেলাফেলা করা হবে তা কারও ভাবনায় ছিল না। পাটের জন্মরহস্য নিয়ে বাঙালী বিজ্ঞানী যে দিগন্ত খুলে দিয়েছেন তা মাঠে মারা যাচ্ছে বিজেএমসির যথাসময়ে তৎপর না হওয়ায়। পাট খাতকে দেখার কেউ নেই মনে হয়। তবু বাঁচাতে হবে পাটশিল্পকে যে কোন মূল্যে।
×