ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবুল মাল আবদুল মুহিত

ঘনিষ্ঠজনদের ইহধাম ত্যাগে আমার স্মৃতিচারণ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

ঘনিষ্ঠজনদের ইহধাম ত্যাগে আমার স্মৃতিচারণ

এই মাসে আমার অনেক ঘনিষ্ঠজন ইহধাম ছেড়ে চলে যান। আমি প্রয়াত জগ্লুল আহ্মদ চৌধূরী এবং কাইয়ুম চৌধুরী সম্বন্ধে স্মৃতিচারণ করে ২টি প্রবন্ধ লিখি ৫ ডিসেম্বরে। তার অব্যবহিত পরে আমার বাল্যবন্ধু প্রসিদ্ধ অভিনেতা খলীলুল্লাহ খান ইন্তেকাল করেন এবং একই সময়ে আমার ভগ্নিসম ঐতিহাসিক জুলেখা হক ইন্তেকাল করেন। তারপর আমি আবার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক একটি বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে যাই। এই চারজনকে নিয়েই আজকে আমার স্মৃতিচারণ। নেতৃস্থানীয় সাংবাদিক প্রয়াত জগ্লুল আহ্মদ চৌধূরী জগ্লুল আহ্মদ চৌধূরী সম্বন্ধে আমি বেশ কিছু জানি। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সরাসরি পরিচয় হয় অনেক দেরিতে সম্ভবত সত্তরের দশকের মধ্যভাগে যখন তিনি দিল্লীতে আমাদের দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। তাঁর রাজনীতিবিদ পিতা নাসিরউদ্দিন চৌধুরী সাহেবকে আমার কৈশোর থেকেই আমি ভাল চিনতাম। তিনি আমার আব্বা এবং আমার আব্বার মামার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং রাজনীতিই ছিল সেই সংশ্লেষের মূল কারণ। বিভাগ পরবর্তীকালে তিনি প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ছিলেন এবং পরবর্তীতে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী ছিলেন। জগ্লুল নিশ্চয়ই স্বেচ্ছায় সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। এই পছন্দটা তাঁর নিজের ছিল এ জন্য বলছি, কারণ তিনি হয়ত অন্য পেশায়ও সুযোগসন্ধান করতে পারতেন। যদিও প্রথম পরিচয় হয় বেশ দেরিতে কিন্তু তাঁর সম্বন্ধে আমি অবহিত ছিলাম এবং ভালই চিনতাম। সম্ভবত দিল্লী ভ্রমণের কোন এক সময়ে আমি তাঁর বাড়িতেও গেছি। জগ্লুল সাংবাদিক জীবনে বেশিরভাগ সময়ই বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এই সংস্থার তিনি প্রধান সম্পাদক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সারাজীবনেই নিয়মিত সাংবাদিক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। কতিপয় বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের স্থানীয় সংবাদদাতা হিসেবেও ভূমিকা রেখেছেন। সাংবাদিকতা জগতে তিনি একজন সুদক্ষ সাংবাদিক এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে আমার মনে হয় সর্বত্র গ্রহণযোগ্য ছিলেন। জগ্লুলের যে বিশেষত্বটি প্রতিটি লোককে আকর্ষণ করত সেটি হলো যে, তাঁর সঙ্গে দেখা হলেই সবসময় একটি হাসিমুখ পাওয়া যেত এবং তার কথাবার্তা সবসময়ই ছিল বিনম্র এবং বন্ধুসুলভ। যখনই টেলিভিশনে তাঁর মৃত্যু সংবাদ পেলাম তখনই আমার মনে তাঁর এই হাসি উদ্ভাসিত, বিনম্র চিত্রটি সামনে ভেসে ওঠে। সম্ভবত তাঁর মৃত্যুর ২/১ দিন আগে যে একটি টকশোতে তিনি অতিথি ছিলেন এবং সেই টকশোতে দেয়া তাঁর বক্তব্য খানিকটা আমি শুনেছিলাম। সেখানেও আমি দেখতে পাই হাসিমুখে সমঝোতার ভাষায় তাঁর বক্তব্য। আমার মনে হতো তিনি কখনও কাউকে আঘাত করতে চান না। মৃত্যু মানুষের জন্য একটি অপ্রতিরোধ্য পরিণতি। সুতরাং কারও মৃত্যুতে যতই দুঃখ পাই না কেন এবং যতই তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে চিন্তিত হই না কেন আমরা তা সহজেই গ্রহণ করে নেই। জগ্লুলের মৃত্যুটা কিন্তু এত সহজে নেয়া যায় না। জগ্লুল একটি জঘন্য দুর্ঘটনার শিকার। আমাদের দেশে মোটরচালিত যানবাহন এত বেপরোয়া যে, তাঁরা মানুষের জীবন নিয়ে মোটেই চিন্তা করেন না। তাদের এই অসভ্য ব্যবহারের জন্য ১৯৮৩ সালে একটি কঠোর আইন রচিত হয়। সেখানে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য ফঁাঁসির শাস্তিও রাখা হয়। দুর্ভাগ্যবশত এই আইনের বিরুদ্ধে সংগঠিত যানবাহন খাত এমন এক সহিংস প্রতিবাদ শুরু করে যে, বাধ্য হয়েই আইনটাকে নমনীয় করা হয়। আমার মনে হয় যানবাহন খাতটি এই নমনীয়তাকে দুর্বলতা বলে গ্রহণ করেছে। এই বিষয়ে আমি আশা করব যে, জনমত আমাদের যথাযথ দিকনির্দেশনা দিতে পারবে। প্রিয় জগ্লুল, তোমার ইন্তেকালে আমি বড় দুঃখিত এবং একই সঙ্গে বেশ ক্ষুব্ধ। তবে স্বস্তির স্থান হলো প্রথমত, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন এবং দ্বিতীয়ত, সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে আমরা আইন-কানুনকে আরও কঠোর এবং কার্যকর করতে পারব। খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী ও প্রকৃতিবিদ প্রয়াত কাইয়ুম চৌধুরী কাইয়ুম চৌধুরীর সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় বেশ দেরিতে হয়। সত্তর দশকের শেষদিকে তার সূচনা। আমার সবসময় ধারণা ছিল যে, কাইয়ুম চৌধুরী বয়সে আমার কনিষ্ঠ। এই ধারণাটি যে ভুল সেটি বুঝতে পারলাম এই ৪/৫ বছর আগে। যাই হোক, আমরা অবশ্যি সমসাময়িক এবং আমাদের জানাশোনা এবং আনাগোনার মহলে কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন অন্যতম একজন। আমরা সবাই জানি যে, কাইয়ুম চৌধুরী খুব বেশি গল্প করতেন না। বক্তৃতার মঞ্চেও তিনি সচরাচর বেশি লম্বা বক্তব্য রাখতেন না। আমরা এখন জানি যে, অতি অল্প বয়স থেকেই বইয়ের প্রচ্ছদের প্রতি তাঁর আকর্ষণ জন্মে। সেই কারণেই তিনি অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদপট এঁকেছেন। একটি বিষয় সেখানে লক্ষণীয় যে, শব্দের ব্যবহারে তিনি সবসময়ই নির্ভুল এবং রুচিশীল। এই বিষয়টি নিয়ে আমি তাঁর সঙ্গেও একবার কথা বলি। তাঁর বক্তব্য ছিল যে, প্রচ্ছদপটে শব্দের ব্যবহারে কখনও ভুল সহ্য করা যায় না এবং সুন্দর শব্দ সবসময়ই তাঁর ভাল লাগে। কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন অত্যন্ত উন্নতমানের একজন সংস্কৃতিসেবী এবং তাঁর বিচরণ ছিল সাংস্কৃতিক প্রতিটি অঙ্গনে। সে হোক সাহিত্য সভা অথবা কবিতার আসর অথবা গানের আসর অথবা চিত্রশিল্পীদের কোনরকমের আসর। আর একটি বিষয় লক্ষণীয় ছিল যে, তিনি কখনও কঠোর বিতর্কে অংশ নিতেন না। পছন্দমতো কথাবার্তা না হলে চুপিসারে সেখান থেকে দূরে সরে যেতেন। তাঁর ছেলে আমাকে বলেছেন যে, তিনি কোনদিন কাইয়ুম চৌধুরীর মুখে কারও সম্বন্ধে খারাপ বা তাচ্ছিল্যের মন্তব্য কখনও শোনেননি। কাইয়ুমের কিছু পছন্দ না হলে তাঁর সঙ্গে সব সংশ্রব কেটে দিতেন এবং সেজন্য মন্দ পরচর্চায় তাঁর কখনও কোন আগ্রহ ছিল না। কাইয়ুমের শিল্পকর্ম আমার স্ত্রীর খুব ভাল লাগত এবং আমার মনে হয় কাইয়ুম সে সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন। আমি এক সময় দেখলাম যে, আমার চিত্র সংগ্রহে কাইয়ুমের কোন চিত্র নেই। সম্ভবত সেটা ছিল আশির দশকের কোন সময়। কাইয়ুমকে আমার প্রয়াত বন্ধু জিয়াউল হক টুলু এই বার্তাটি প্রদান করেন। কিছুদিনের মধ্যে কাইয়ুমের একখানা শিল্পকর্ম আমার হস্তগত হয়। কাইয়ুমের জীবনসঙ্গিনী সম্বন্ধে আমরা খুব কমই জানি। তবে তাঁর সঙ্গেও আমাদের পরিচয় বেশ ঘনিষ্ঠ। আমি নিজেও জানতাম না যে, তিনি নিজেই একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন এবং কাইয়ুমের উচ্চতর রুচি বিকাশে সুযোগ করে দেয়ার জন্য তিনি তাঁর কাজ বন্ধ করে দেন। আমি চিত্রশিল্পের সবিশেষ বোদ্ধা নই। আমার ভাল লাগে ছবির রং, রঙের বিন্যাস, প্রকৃতির রূপায়ণ। বিমূর্ত না মূর্ত ছবি আমার ভাল লাগে তা আমি ঠিক বলতে পারব না। অর্থাৎ দুয়েরই আকর্ষণ আমার জন্য যথেষ্ট। কাইয়ুমের চিত্রশিল্প সম্বন্ধে আমার মন্তব্য শুধু একটি ‘বড় স্নিগ্ধ’। কাইয়ুম বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের আসরে প্রধান অতিথি ছিলেন ৩০ নবেম্বরে। আমি দু’দিন এই আসরে যাইনি এবং তারই একটি ছিল ৩০ নবেম্বর। আগের দিনও এই আসরেই তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। ৩০ নবেম্বরে যখন সঙ্গীতের স্টেজে কাইয়ুমের ইন্তেকাল হয়, তখন আমি কিছু সময়ের জন্য ঘুমন্ত ছিলাম। খানিক পরে আমার স্ত্রী যখন জানালেন যে, কাইয়ুম আর আমাদের জগতে নেই, তখন আমি একান্তই বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। তেমন কোন অসুখ-বিসুখ তাঁর ছিল বলে জানতাম না। জীবনের স্বাদ তিনি আনন্দচিত্তেই তখন গ্রহণ করতেন এবং স্বাভাবিক জীবনের রুটিন মেনে চলতেন। হঠাৎ যে তাঁর চিরবিদায় হবে সেটা তিনিও যেমন জানতেন না, আমরাও তেমন আঁচ করতে পারিনি। তবে আমি নিশ্চিত যে, বন্ধুবর এবং ভাই কাইয়ুম চিরশান্তিতে আছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউনের নির্দিষ্ট ধারায় তিনি ইহধাম ত্যাগ করেছেন। কিন্তু তাঁকে আমরা ভুলব না। তাঁর চিত্রশিল্প, তাঁর অসংখ্য প্রচ্ছদপট তাঁকে সবসময় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে। একজন খ্যাতনামা ও প্রকৃতিবিদ মানুষ চলে গেলে তার স্থান পূরণ হয়ে যায় ঠিকই কিন্তু তাঁর বিশেষত্বটি মুছে যায় না। তোমাকে আমি এবং আমার স্ত্রীর শ্রদ্ধাঞ্জলি ও ভালবাসা, বন্ধু কাইয়ুম। প্রসিদ্ধ অভিনেতা ও সহপাঠী বন্ধু খলীলুল্লাহ খান আমাদের দেশের প্রসিদ্ধ অভিনেতা খলীলুল্লাহ খান স্কুল থেকে আমার সহপাঠী। তাঁর জন্ম হয় যে বছরে সে বছরে আমারও জন্ম হয় অর্থাৎ ১৯৩৪। যদিও পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে তাঁর জন্ম, বলতে গেলে জন্ম থেকেই তিনি সিলেটের অধিবাসী। তাঁর আব্বা পুলিশের কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৩৪ সালে সিলেটে চলে আসেন এবং সেখানেই বসতি স্থাপন করেন। গত ৭ ডিসেম্বর বেশ কিছুদিন অসুখে ভুগে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তিনি আমাদের ক্লাসের হাসিখুশি মানুষ ছিলেন ‘ঋঁহ ইড়ু।’ কৈশোর থেকেই নাটকে অভিনয় অথবা এমনিই অভিনয়ের ভান করা ছিল তাঁর অভ্যাস। তাই আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই যে, তিনি জীবনে লব্ধ প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। স্কুলে থাকতেই তিনি নাটক করেছেন। চাকরি জীবনে তিনি আনসার বাহিনীতে যোগদান করেন এবং আজীবন সেই প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেন। সিলেটে থাকতেই তিনি প্রথম অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৫৩ সালে। বাংলাদেশের প্রযোজকদের পথিকৃৎ সিলেটের মাসুদ চৌধুরী কলিম শরাফী এবং জহির রায়হানকে পরিচালনার ভার দিয়ে ‘সোনার কাজল’ ছবিটি প্রকাশ করেন। সেখানে অভিনেত্রী ছিলেন সুলতানা জামান আর সুমিতা দেবী। এই হলো খলীলুল্লাহর শুরু। তার পরে তাঁকে আর কে আটকায়! শবনমের (ঝর্ণা বসাক) সঙ্গে তিনি করলেন প্রীত জানে না রীত। আবার জহির রায়হানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’-এর তিনি ছিলেন অন্যতম নায়ক। তাঁর অভিনীত ছবির ফর্দ দেয়া মুশকিল। তবে কয়েকটির নাম বলবÑ সোনার কাজল, প্রীত জানে না রীত, সঙ্গম, গু-া, উৎসর্গ, সংসপ্তক, এই সংসার, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, কন্যাবদল, মেঘের পরে মেঘ এবং বিনি সুতার মালা। নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে ‘বাপ বড় না শ্বশুর বড়’ ছবিতে তাঁর শেষ অভিনয় হয়। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এবং সর্বশেষ শেখ হাসিনার হাত থেকে ২০১২ সালে আজীবন কৃতিত্বের সম্মাননা লাভ করেন। আমার সময়টা ঠিক খেয়াল নেই আমি তখন বনানীতে থাকি। তখন সম্ভবত তাঁর ভাই কি ছেলে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তাতে খুবই শোকগ্রস্ত এবং কাতর হয়ে যান। তখন মাঝে মাঝে আমার বাড়িতে এসে শুধু গপ্প করে সময় কাটাতেন। আমিও সে সময় মাঝে মাঝে তাঁর মোহাম্মদপুরের বাড়িতে গেছি। কৈশোরে যে আমরা ‘ঋঁহ ইড়ু’-এর পরিচয় পাই সেই পরিচয় কিন্তু তাঁর সারাজীবনের সঞ্চয়। সবকিছুকে তাঁর স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার মতো প্রবৃত্তি ছিল প্রশংসনীয়। আমার বন্ধুটির সামান্য স্মৃতিচারণ আমাকে অনেক স্বস্তি দিল। স্বনামধন্য টেরাকোটা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জুলেখা হক অধ্যাপক, প্রতœতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিক ড. এনামুল হকের স্ত্রী হিসেবে যতটা না পরিচিত ছিলেন তাঁর নিজের গুণেই অধ্যাপক জুলেখা হক তেমন পরিচিতি লাভ করেন। আমাদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু মোঃ হাবিবুল্লাহ খুবই শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ছিলেন। তাঁকে আমরা অনেকটা উন্নাসিক ভাবতাম। তবে প-িত ব্যক্তি বলে তাঁর পরিচিতি ছিল ব্যাপক। তিনি শুধু ইতিহাসবিদই ছিলেন না, একজন ভাল লেখকও ছিলেন। সেই পরিচয়টি কিন্তু আমি পাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পরে যখন ফরিদপুরে সহকারী হাকিম হিসেবে নিযুক্ত ছিলাম। সেখানে জেলা জজ (পরবর্তীতে বিচারপতি) আবদুল মওদুদ সাহেবের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়। তিনি ছিলেন হাবিবুল্লাহ সাহেবের সহপাঠী এবং তাঁর মুখে সব সময় তাঁর বন্ধুটির প্রশংসা শোনা যেত। তাঁরই আগ্রহে আমি কলকাতার ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হাবিবুল্লাহ সাহেবের ‘গুলে বকাওয়ালী’ নিয়মিত পাঠ করি। তাঁর সুযোগ্য সন্তান ছিলেন জুলেখা হক এবং আমাদের দেশে এবং সম্ভবত বিশ্বেও বাংলাদেশের টেরাকোটা বিষয়ে তাঁর মতো বিশেষজ্ঞ আর ছিল না। তিনি ইডেন কলেজে শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধ্যাপক হিসেবে জীবনের বেশি অংশ কাটান। তাঁর সঙ্গে আমার ও আমার স্ত্রীর যিনি নিজেও ইতিহাসের ছাত্রী ছিলেন, ভাল পরিচয় ছিল। জুলেখা একই সঙ্গে ভাল গৃহিণী ছিলেন। তাঁর বাড়িতে দাওয়াত একটি নিয়মিত বিষয় ছিল। অত্যন্ত যত্ন করে খাওয়ানো ছিল তাঁর অভ্যাস ও খাবারের বিশদ বিবরণ প্রদানে তিনি কখনও কার্পণ্য করতেন না। মাত্র কিছুদিন আগেই আমরা তাঁর নতুন ঠিকানায় খেতে যাই। আসলে আমরা বনানীতে কাছাকাছিই থাকতাম তাই আনাগোনাও ছিল বেশ। তাঁর অসুখ-বিসুখও তেমন হতো না। শুধু একবার বোধহয় ’৮০ সালে তাঁকে লন্ডনে অসুস্থ, দেখতে যাই। আসলেই তিনি ছিলেন আমার বিদুষী বোন। তাঁর অনেক উচ্চমানের গ্রন্থ প্রকাশিত হয় যার সর্বশেষটি সম্ভবত এই বছরেই বেরোয়। তাঁর রচিত সব বইই অনেক গবেষণার ফসল। Gohana Jewellery of Bangladesh-এর জন্য তাঁকে একদিকে গবেষণা ও অন্যদিকে ব্যাপক অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ করতে হয়। Terracota Temples of Late Mediaeval Bengal : Portrayal of the Society Ges Terracota Temples of Bengalষ তাঁর অতি উত্তম দুইটি গ্রন্থ। এছাড়া এই বছরে তাঁর আর একটি বই Terracotas An Analytical Studyপ্রকাশিত হয়। এই বইটি তিনি আমাকে দেন তবে আমার এখনও পড়া হয়নি। ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪ লেখক : এমপি, মন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়
×