ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসা বীমা, ২০ বছর চাকরির পর স্বেচ্ছা অবসরের সুযোগ

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

চিকিৎসা বীমা, ২০ বছর চাকরির পর স্বেচ্ছা অবসরের সুযোগ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ মূল বেতন দ্বিগুণ করার পাশাপাশি সরকারী চাকরিজীবীদের জন্য প্রথমবারের মতো চিকিৎসা বীমা চালু, ২০ বছর চাকরির পর স্বেচ্ছাবসরে যাওয়ার সুবিধা প্রদান, সকলের জন্য নির্ধারিত দিনে ইনক্রিমেন্ট প্রদান, পেনশন সুবিধা বাড়ানোসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছে বেতন কমিশন। একইসঙ্গে সরকারী চাকরিজীবীদের বাড়ি নির্মাণ ও গাড়ি কেনার জন্য অধিক সুবিধা সৃষ্টির বিষয়ে কিছু বিকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বেতন কাঠামোর গ্রেড পদ্ধতিতে পরিবর্তন, বিভাজন সৃষ্টিকারী শ্রেণীকরণ পদ্ধতির বিলুপ্তি, ঔপনিবেশিক আমলের ইবি (ইফিসিয়েন্সি বার) তুলে দেয়া, প্রেষণে নিয়োগ বন্ধ করার মতো সুপারিশও এসেছে কমিশনের প্রতিবেদনে। পনেরো বছরে বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাবার মতো বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ব্যবস্থা করার সুপারিশও রয়েছে এতে। অষ্টম বেতন ও চাকরি কমিশনের মোটা দাগের সুপারিশগুলোতে চারটি বিশেষ দিক হলো ২০০৯ সালের ৭ম বেতন স্কেল ০১/৭/২০০৫ থেকে ৩০/০৬/২০০৯ সময়ের জন্য অর্থাৎ চার বছরের ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছিল আর ৮ম বেতন স্কেল সুপারিশের ভিত্তি ০১/০৭/২০০৯ থেকে ৩০/০৬/২০১৫ অর্থাৎ ছয় বছরের ভিত্তিতে সুপারিশকৃত। প্রথমবারের মতো সদাশয় সরকার চার সদস্যের পরিবর্তে ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য কল্যাণকামী বেতন কাঠামো সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৯ সালের পর এ পর্যন্ত পুঞ্জীকৃত মূল্যস্ফীতির পরিমাণ শতকরা ৬৩ ভাগ। এ সময়ে অন্তত দুই লাখ লোক নতুনভাবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছেন। অষ্টম বেতন ও চাকরি কমিশনের প্রতিবেদনের কয়েকটি মূল সুপারিশ হলো, বেতন কাঠামোতে স্কেল/গ্রেডের সংখ্যা হ্রাস করে ২০ থেকে ১৬ করা। বিভাজন সৃষ্টিকারী শ্রেণীকরণ রহিত করা। ঔপনিবেশ আমলের একটি শোষণ যন্ত্র ইবি অর্থাৎ এফিসিয়েন্সি বার তুলে দেয়া। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট সবার জন্য ১ জুলাই নির্দিষ্ট করা। অনেক জটিলতা ও মামলা, মোকদ্দমার উৎস সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেলের বিলুপ্তি ঘটিয়ে মূলত পদোন্নতির মাধ্যমে পরবর্তী উচ্চতর ধাপে ওঠার ব্যবস্থা করা। এছাড়া দুটো গ্রেড/শ্রেণীর স্কেলের মধ্যে টাকার অঙ্কে পার্থক্য বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে, ধাপের সংখ্যা ৯-১৬ গ্রেড/স্কেলের জন্য বিশটি এবং পনেরো বছরে বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাবার মতো বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ব্যবস্থা করা। ৪র্থ থেকে ১৬তম গ্রেড/ স্কেলের বেতনে একই হারে শতকরা পাঁচভাগ চক্রবৃদ্ধি হারে বার্ষিক বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সর্বনি¤œ বেতন ধরা হয়েছে মাসে ৮,২০০ টাকা (যা ৭ম কমিশনের সুপারিশের পর নির্ধারিত টাকা থেকে শতকরা ১০০ ভাগ বেশি) ১ম গ্রেড/ স্কেলে সর্বোচ্চ বেতন ধরা হয়েছে ৮০,০০০ টাকা যা বর্তমান বেতনের ১০০ভাগ বেশি। ৯ম গ্রেড ও ৮ম গ্রেডকে একত্রীভূত করে ৮ম গ্রেডের বেতন ধরা হয়েছে ২৫০০০ টাকা। (৯ম গ্রেডের ১১০০০+ ১০ম গ্রেডের ১২০০০ এর বিপরীতে) এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি মূলত মেধা আকর্ষণের জন্যই করা হয়েছে। আর সার্বিকভাবে বেতন বৃদ্ধি সরকারি চাকরিতে মেধাবী, দক্ষ ও সৎ চাকুরেগণকে ধরে রাখারও একটি প্রয়াস বৈকি। বেতন বৃদ্ধির সুপারিশকালে পরিবারের সংজ্ঞা, বিগত ছয় বছরের পুঞ্জীকৃত মূল্যস্ফীতি, চার বছরের স্থলে ছয় বছরের ভিত্তি, অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের বেতনাদির চিত্র বিবেচনায় রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ, সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত ধার্য করা হয়েছে ১:৯.৭৬ যা সপ্তম কমিশনের অনুরূপ। ১ম গ্রেড/স্কেলের যারা সচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের নীতি নির্ধারণ কাজে এবং সমন্বয়ের কাজে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ শতকরা ৫ ভাগ হারে অর্থাৎ ৪০০০ টাকা অতিরিক্ত বেতন প্রদানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সিনিয়র সচিবগণের বেতন মাসে ৮৮,০০০ টাকা এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব/ মুখ্য সচিবের মাসিক বেতন ১,০০,০০০ টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। চাকরি শুরু করার সময় একটি স্থিতি ভাতার ব্যবস্থা করা। অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ ০১/০১/২০১৫ তারিখে কার্যকর করা হলে ওই ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, অবসর ভাতা ও এমপিও খরচ মিলে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে শতকরা ৬৩.৭ ভাগ। আর ২০১৩-১৪ সালের প্রকৃত রাজস্ব ব্যয় ১৯ শতাংশের তুলনায় ২০১৫-১৬ সালের প্রক্ষেপিত রাজস্ব ব্যয় কিছুটা বেড়ে হবে শতকরা ২০.১ ভাগ। মোট বাজেটের হিসেবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেতন-ভাতাদির খরচ ছিল ১৪.২%; ২০১৫-১৬ সালেও এটা বর্র্ধিত বাজেটের ১৪.২ শতাংশ হবে। সরকারি চাকুরেগণের বেতনের স্বল্পতা পুষিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ভাতা নতুনভাবে শুরু করার এবং বিদ্যমান ভাতা হার/পরিমাণ বৃদ্ধির দাবি প্রবল হয়ে উঠছে। ৮ম কমিশনের সুপারিশ অনুমোদন/ কার্যকর করা হলে বেতন অনেক বৃদ্ধি পাবে বিধায় নতুন ভাতা শুধু শতকরা হারে নির্ধারণ করা ঠিক হবে না। বিদ্যমান ভাতা হয় নির্দিষ্ট অঙ্কে অথবা সর্বোচ্চ মাত্রার একটি সীমারেখাসহ হার ভিত্তিক হতে পারে। ডেপুটেশন/প্রেষণ প্রথা এবং ইহার ভাতা বাতিল করা যেতে পারে খুবই বিশেষ প্রয়োজন ও অপরিহার্যতা ছাড়া। কমিশন বিশেষ ভাতা সমর্থন করেনি। কয়েকটি ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ভাতার পরিমাণ যৌক্তিকীকরণের চিন্তা করা যেতে পারে। বাড়িভাড়া ভাতা আরও যৌক্তিক করার তাগিদে চারটি স্তরে তিন ধরনের ক্ষেত্র বিভাগ যথাÑ (ক) ঢাকা মেট্রো, (খ) চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও সাভার, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, গাজীপুর (গ) জেলা শহর এবং (ঘ) অন্যান্য স্থান এ চার ধরনের ক্ষেত্র বিন্যাস করা হয়েছে। কম বেতনভুক্ত পণ্যের জন্য বাড়িভাড়ায় সর্বনিম্ন সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বদলিজনিত ভ্রমণ ভাতায় সরলী ও সহজীকরণ করা হয়েছে। বিনোদন ছুটি ও ভাতা প্রতি তিন বছরের পরিবর্তে প্রতি দুই বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকারী চাকুরেগণের মৃত্যু অথবা দুর্ঘটনা জনিত ক্ষতিপূরণ দ্বিগুণন করা, সচিবালয় ও তার বাইরের কর্মচারীগণের মধ্যে ১৯৯৫ সালের সার্কুলারে সৃষ্টি বৈষম্য দূর করা যেতে পারে। বুয়েট ও অন্যান্য কোটা ছাড়া ভর্তির বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ছাড়া অন্যান্য সরকারী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারী চাকরিগণের জন্য ভর্তি কোটা রাখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বইকেনা ভাতা ও গবেষণাভাতা বাড়ানো যেতে পারে। কমিশন একটি বিশেষ বিষয়ের দিকে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছে। গ্রাম পুলিশের অল্প বেতনের অর্ধেক আসে সরকারী কোষাগার থেকে। বাকিটা ইউনিয়ন কাউন্সিল দিতে পারে না। সংগৃহীত চাল ছয়/নয় মাস পর নষ্ট হয়ে যায়। এখন ওপেন মার্কেট অপারেশন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। তাই প্রকিউরমেন্টের চাল অতি সুলভমূল্যে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের কাছে ইস্যু করা যেতে পারে। অষ্টম বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশ এমপিও ক্ষেত্রে ছয় মাস পরে কার্যকর করা যেতে পারে যাতে ততদিনে স্কিমটি সম্পর্কে একটি বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়। কমিশন লোকসানি স্বায়ত্ত্বশাসিত ও সরকারী প্রতিষ্ঠানে আলাদা বেতন কাঠামো সমর্থন করেনি। যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকিং আর্থিক ও বীমা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদা বেতন কাঠামোর সিদ্ধান্ত সরকার নিয়ে থাকলে তা কার্যকর করা কমিশন সমর্থন করে। তবে সরকার অনুমোদিত বেতন কাঠামোতে যে কয়টি গ্রেড/স্কেল থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকেও সমান সংখ্যক গ্রেড/স্কেল থাকলে ভাল হয়। কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের কতিপয় সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে মূল্যস্ফীতি তেমন বাড়ার কারণ নেই। মোট শ্রমজীবীর মাত্র শতকরা ২.৫ ভাগ সরকারী চাকুরের প্রস্তাবিত বেতন-ভাতা বৃদ্ধিতে বাজেটে এ খাতের খরচ বাড়বে না; রাজস্ব খরচও সামান্য বাড়বে। বেতন-ভাতার বাইরে সরকারী চাকুরেগণের বাসস্থান একটি বড় সমস্যা। অথচ অবসরে মাথা গোজার ঠাঁই সবারই একটি মাথা ব্যথা। এ বিষয়ে কমিশন বিভিন্ন বিকল্প সুপারিশ রেখেছে। রিয়েল এস্টেট মাধ্যমে ৬০:৪০, ফর্মুলায় খাসজমি, পুরনো ভবন ভেঙে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করে হায়ার পারচেজ ভিত্তিতে ফ্ল্যাট বিক্রি করে, ২০ বা ১০ জনের গ্রুপ করে সরকারী চাকুরেগণের জন্য ৫/৭ কাঠা জমি বরাদ্দ ও গৃহ নির্মাণ হিসেবে ৫০ মাসের মূল বেতন ব্যাংক রেটে ঋণ দিয়ে এবং জমি কেনার প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যাংক রেটে ৫০ মাসের মূল বেতন প্রদান করে মৃতপ্রায় নির্মাণ খাতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করার সুপাশি করা হয়েছে। গাড়ি কেনার ঋণ ১ বছর নিরীক্ষামূলকভাবে প্রাধিকার প্রাপ্তগণ + ৩য় গ্রেড/ স্কেল সকলের জন্য বিনা সুদে ২৫ লাখ টাকার ঋণ নিরীক্ষা সফল হলে ৪র্থ গ্রেড/স্কেল অনুরূপ সুবিধা দেয়া যেতে পারে। তবে স্বায়ত্ত্ব ও আধাস্বায়ত্ত্ব শাসিত সংস্থায় এ সুবিধা দেয়া হলে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সংস্থার নিজস্ব আয় থেকে বহন করতে হবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কমপ্রিহেনসিভ বীমা করে প্রতিজন চাকুরের জন্য মাসে ৪০০+১০০ টাকার প্রিমিয়াম সরকার থেকে দিয়ে পাঁচ বছরের মেয়াদে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত মৃত্যু জনিত ক্ষতিপূরণ অথবা চাকুরে ও পরিবারের সদস্যগণের হাসপাতালের খরচসহ বীমা দাবি সরাসরি হাসপাতালে পরিশোধিত হতে পারে। নো ক্যাশ হ্যান্ডনিং। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থপনায় বড় উদ্যোগ প্রয়োজন হবে। এতে মুমূর্ষু বীমা খাতের প্রাণ সঞ্চার হতে পারে। এছাড়া বীমা খাতের উদ্বৃত্ত থেকে ৫০০ শয্যার একটি আধুনিক হৃদরোগ হাসপাতাল সরকারী চাকুরেদের জন্য স্থাপন করা যেতে পারে। বীমার প্রিমিয়াম আয় থেকে যথেষ্ট সঞ্চয় উদ্বৃত্ত হবে বলে এ খাতে সরকারের খরচ পরবর্তীতে অনেকটাই কমে যাবে। পেনশনের হার ৯০ শতাংশে বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করা যায় তবে আনুতোষিক (নবেম্বর ২০১৩ সালে ২৬ বছর পর বৃদ্ধি করা হয়) ১ টাকা= ২৩০ টাকা এখনই আর বৃদ্ধি করা সমীচীন হবে না। ছুটি পাওনা সাপেক্ষে ১২ মাসের পরিবর্তে ২০ মাসের অর্জিত মূল বেতন নগদায়ন করা যেতে পারে। স্বেচ্ছাবসরে যাওয়া ২০ বছর চাকরির পর হতে পারে তবে এ বিধান দ্য পাবলিক সার্ভেন্টস রিটায়ারমেন্ট এ্যাক্ট ১৯৭৪-এর আওতামুক্ত রাখা যেতে পারে। পিএলআর এর বদলে এলপিআরে প্রত্যাবর্তন করা যেতে পারে। যে হারে বেতন বাড়বে সে হারে পেনশন বাড়ানো যায়। তবে যারা সম্পূর্ণ বেতন উঠিয়ে নিয়ে গেছেন তাদের জন্য মাসিক চিকিৎসা ভাতা ১৫০০ ও ২৫০০ টাকা করা যেতে পারে। তাদের উৎসব ভাতা বাড়ানো যায় ‘ওয়ান র‌্যাংক ওয়ান পার্সন’ সমর্থনযোগ্য নয়। সম্পূর্ণ বেতন উঠিয়ে নেয়াদের ক্ষেত্রে পেনশন পুনরুজ্জীবনের জোরদার দাবির পেছনে কোন আইনী বা নৈতিক সমর্থন আছে বলে কমিশন মনে করে না। ন্যূনতম পেনশন ২০০০ টাকা করা যেতে পারে । সম্পূর্ণ বেতন উঠিয়ে নেয়া পেনশনারগণের উৎসব ভাতা বছরে দুটোর পরিবর্তনে চার মাসের মূল বেতনের সমতুল্য হতে পারে। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ করমুক্ত রাখা যায়। বর্তমান কল্যাণ ফান্ডকে পুনর্গঠিত করে বীমা ব্যবস্থাপনা, পেনশন ফান্ড ব্যবস্থাপনা এবং কল্যাণ ফান্ড ব্যবস্থাপনায় ভাগ করে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে। কল্যাণ ফান্ডের দৈনিক বাংলার মোড়ের বিশ/পঁচিশ কাঠা জমি বিক্রী করে ৪০০ শত কোটি টাকা মূলধন জমা দিয়ে সমৃদ্ধি সোপান ব্যাংক স্থাপন করা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও স্বলমেয়াদী বাণিজ্যিক ব্যাংকের সমন্বয়ে সম্পূর্ণ পেশাদার ভিত্তিতে চলবে এ ব্যাংক। দশ লাখ চাকুরের প্রত্যেকে ৪০০০ টাকার শেয়ার মূলধনের মালিক হবেন। প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকবে। চাকরি বিষয়ে ব্যাপক সংস্কার ও পুনর্গঠন ভেবে চিন্তা করা সমীচীন হবে। প্রতিটি ক্যাডারের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান অনুসরণ করে পিরামিড রচনা করা উচিত হবে। পদ খালি থাকলে পদোন্নতিতে বিলম্ব এড়াতে হবে। নন-ক্যাডারের যুক্তিসঙ্গত দাবিদাওয়া নিরীক্ষা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। উপযুক্ততা ও মেধা যাচাই করে গ্রেড/স্কেল ৪ এ ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট পুল স্থাপন করার চিন্তা করা যেতে পারে। গুচ্ছ ধরনের নিরীক্ষা করা যেতে পারে। যারা এক পদে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে বাধ্য হন তাদের জন্য ও অর্গানোগ্রাম সৃষ্টি করা ঠিক হবে। দেশ ও জাতি গঠনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটকে বিশেষ মর্যাদা দান করা যেতে পারে। সরকারী চাকরি আকর্ষণীয় না করা হলে আগামী বিশাল ও ক্রম সম্প্রসারণশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও এর সামাজিক রূপান্তরের জন্য সঠিক সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যাবে না। প্রতিটি স্তরে প্রশিক্ষণ এবং বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নের মাধ্যমেই পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজাতে হবে। সরকারী চাকুরেগণের পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা দেয়ার ভীতি দূর করার চেষ্টা নিতে হবে। ১৯৭৭ সালের আদলে দ্য পে এ্যান্ড এ্যালাউন্সেস অর্ডার জারীর মাধ্যমে কমিশনের রিপোর্টের সরকারী অনুমোদিত অংশ বাস্তবায়ন করা সমীচীন হবে। একটি স্থায়ী বেতন ও চাকরি কমিশন অথবা একটি স্থায়ী বেতন ও আলাদা চাকরি পুনর্গঠন কমিশন স্থাপন করা সমীচীন হবে বলে সুপারিশে বলা হয়েছে।
×