ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইতি খাতুন এখন ইদ্রিস আলী- বিয়ে করল বান্ধবী সাবিনাকে

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

ইতি খাতুন এখন ইদ্রিস আলী- বিয়ে করল বান্ধবী সাবিনাকে

সমুদ্র হক ॥ ইতি খাতুন ও সাবিনা আক্তার ওরা ছিল ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। এখন তারা দম্পতি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মানব জীবনের হরমোন বিষয়ক জটিলতায় ওই দুই বান্ধবীর একজন ইতি খাতুন পুরুষে রূপান্তরিত হয়। তারপর বিয়ে। হরমোন এ্যান্ড হিউমেন অরগ্যান জটিলতা সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আছে। বর্তমানে পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা মানব জীবনের হরমোনকে নিয়ে গবেষণা করে কৌতূহলী খেলা খেলছে। তার একটি হচ্ছে ট্রান্স সেক্স। মার্কিন মুল্লুকে কোন নারী পুরুষ ইচ্ছা করলে জেন্ডার পাল্টাতে পারে। অর্থাৎ পুরুষ নারীতে বা নারী পুরুষে। কণ্ঠস্বরও পাল্টাতে পারে। যেমন মাইক্যাল জ্যাকসন নারী হওয়ার আকাক্সক্ষা করেছিলেন, পরে মত পাল্টে কণ্ঠস্বর পাল্টে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশেও মাঝে মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় নেচারাল জেন্ডার ট্রান্সফারের ঘটনা ঘটছে। গ্রামে বলাবলি হয় এক রাতের ব্যবধানে, কয়েকদিনের ব্যবধানে লোকটি মেয়ে হয়ে গেল বা মেয়েটি ছেলে হয়ে গেল (যা একেবারেই কুসংস্কার)। ইতি খাতুন ও সাবিনা আক্তারের মধ্যে যা ঘটেছিল তা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বাস্তব বলেই মনে করা হচ্ছে। ওদের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাশাপাশি কোয়াললিপাড়া ও জোরগোছা গ্রামে। দু’জনেই সুখানপুকুর সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণীর বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী। শিশু বেলা থেকেই ওরা বান্ধবী। কোয়ালিপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী একজন ছেলে সন্তানের আশায় পরপর সাত মেয়ে সন্তানের বাবা হন। ছোট মেয়ে ইতি খাতুন শিশু বেলা থেকে কিশোরী বেলা পর্যন্ত কিছুটা দূরন্ত স্বভাবের ছিল। তবে সকলের চোখে সে ছিল মেয়ে। দিনে দিনে তার হরমোনাল সিনড্রোমে পরিবর্তন হতে থাকে। একটা পর্যায়ে সে অনুভব করে বিশেষ অঙ্গে পরিবর্তন আসছে। বিষয়টি সে আর লুকিয়ে না রেখে বান্ধবী সাবিনা আক্তার এবং পরিবারের সকলকে জানায়। ইতি খাতুন তার বাবা সোনা মিয়ার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলাপ করে। ইতি খাতুন আইনগতভাবে (এফিডেভিট) নাম পরিবর্তন করে। পুরুষ নাম হয় ইদ্রিস আলী। বাবা সোনা মিয়া তো মহা খুশি। ছেলের আশায় বারবার মেয়ে জন্ম নিচ্ছিল বৌয়ের গর্ভে। এবার প্রকৃতি চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে মেয়েকে ছেলেতে রূপান্তরিত করে দিল। তারপর উভয় পরিবার বিয়ের বিষয়ে একমত হয়। সাবিনা আক্তারের বাবা আমজাদ হোসেন ও ইদ্রিস আলীর বাবা সোনা মিয়া কয়েকদিন আগে বর কনেকে নিয়ে উপস্থিত হয় ফাজিলপুর জামে মসজিদের ইমামের বাড়িতে। সেখানেই ইমাম মাওলানা আবু মুসা বরকনের বিয়ে পড়িয়ে দেন এবং বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। জেন্ডার পরিবর্তনের এই বিষয়ে একজন চিকিৎসক বলেন, ইতি খাতুন জন্মগতভাবেই থার্ড জেন্ডারে ছিল। জিন (মানব জীবনে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যে জিন) ও হরমোন সিনড্রোম দিনে দিনে বেড়ে ওঠে এবং একটা পর্যায়ে পরিপক্বতা পায়। ইতি খাতুনেরও পরিপক্বতা পেয়েছিল। তার নারী সত্তার ইউটেরাসের (সন্তান ধারণের থলি) অস্তিত্ব আর থাকবে না। আবার পুরুষ নারীতে রূপান্তরিত হয়। চোখের সামনেই এই উদাহরণ আছে। বগুড়ার টিএমএসএস নামের যে প্রতিষ্ঠান দেশজুড়ে শাখা প্রশাখার বিস্তার ঘটিয়েছে তার নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম ৭০ এর দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে শিক্ষার্থী আব্দুস সামাদ নামে জীব বিজ্ঞানে অনার্সে ভর্ত্তি হন। লেখাপড়া করার সময় জিন ও হরমোন সিনড্রোমে তিনি মেয়েতে রূপান্তরিত হন। নাম হয় হোসনে আরা বেগম। মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি তাঁর সহপাঠী আনসার আলীকে বিয়ে করেন। নেচারেল জেন্ডার রিপ্লেসমেন্টে হোসনে আরা বেগম আজ নারী উন্নয়নের ধারায় তার প্রতিষ্ঠান টিএমএসএসকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
×