ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাক্ষী রাহিমার জবানবন্দী

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ হাসান আলী হাচু বেপারীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ হাসান আলী হাচু বেপারীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ষষ্ঠ সাক্ষী রাহিমা ওরফে আবুনি জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, হাসান আলী কিশোরগঞ্জে হত্যা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত ছিল। জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য রবিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। জবানবন্দীর সময় সাক্ষীকে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম। অন্যদিকে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী মামলা তদন্ত হওয়ার পর থেকেই হাসান আলী পলাতক রয়েছেন। প্রসিকিউশনের সাক্ষী তার জবাবন্দীতে বলেন, আমার নাম রাহিমা ওরফে আবুনি। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৮ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-পূর্ব সাচাইল, থানা-তাড়াইল, জেলা-কিশোরগজ্ঞ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৬ বছর। তখন আমি অবিবাহিত ছিলাম এবং বাবার বাড়িতেই থাকতাম। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের ২৭ তারিখ বেলা ১১টার দিকে আসামি হাসান দারোগা পাক বাহিনী ও রাজাকারদের নিয়ে আমাদের গ্রামের হাচু বেপারীর বাড়িতে আক্রমণ করে, কেননা হাচু বেপারী আওয়ামী লীগ করত। হাচু বেপারীকে বাড়িতে না পেয়ে তার বাড়ি ঘর লুটপাট করে। ঐ অগ্নিসংযোগের সময় হাচু বেপারীকে বাড়িতে না পেয়ে তার বাড়ি ঘর লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করে। অগ্নিসংযোগের ফলে হাচু বেপারীর ছয়টি এবং কেন্দু মিয়ার একটি ঘর পুড়ে যায়। এরপর তারা থানার দিকে চলে যায়। সাক্ষী আরও বলেন, হাচু বেপারীর বাড়ি এবং আমাদের বাড়ি পাশাপাশি। আমি ঘটনা নিজে দেখেছি। হাচু বেপারীর গোয়াল ঘরে ঐ সময় তিনটি গরু বাঁধা ছিল। আমি একটি বাটি নিয়ে গিয়ে বাঁধা গরুগুলোর দড়ি কেটে দিলে গরুগুলো আগুন থেকে রক্ষা পায়। ঐ বাড়ির খুঁটিগুলো বড় বড় কাঠের ছিল বিধায় আগুন কয়েকদিন জ্বলতে থাকে। স্বাধীনতার পরে হাচু বেপারী বাড়ি ফিরে এলে আমি সকল ঘটনা তাকে জানাই। হাসান দারোগাকে দেখলে চিনতে পারতাম। সে আজ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত নেই। তার মাথায় সাদা টুপি ও মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ছিল। হাসান আলীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ৬ জন সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। হাসান আলীর বিরুদ্ধে যে ছয়টি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তার মধ্যে তিনটি গণহত্য, দুটি হত্যা ও একটি অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আগে থেকেই পালিয়ে থাকা হাসান আলীর বিরুদ্ধে গত ২৪ আগস্ট আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই পলাতক এই রাজাকার কমান্ডারকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। পরে তাকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন প্রসিকিউশন। গত ২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। রাজাকার হাসান আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে তাড়াইল থানার সাচাইল গ্রামের পূর্বপাড়ার হাসান আহম্মেদ ওরফে হাচু বেপারীর বাড়িতে সাতটি ঘরে লুটপাট ও আগুন। একই থানার কোনাভাওয়াল গ্রামের শহীদ তোফাজ্জল হোসেনকে হত্যা এবং ২ জনকে অপহরণ। একই সঙ্গে তাদের বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। তৃতীয় অভিযোগে রয়েছে, শিমুল হাটি গ্রামের পালপাড়া অক্রুর পালসহ ১২ জনকে হত্যা, ১০টি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, চতুর্থ অভিযোগে রয়েছে, তারাইল থানার বোরগাঁও গ্রামের বেলংকা রোড়ে সতীশ ঘোষসহ ৮ জনকে হত্যা, ১০ জনকে অপহরণ ও আটক। পঞ্চম অভিযোগে রয়েছে তাড়াইল থানার আড়াইউড়া গ্রামের কামিনী কুমার ঘোষ ও জীবন চক্রবর্তীকে অপহরণের পর হত্যা। ষষ্ঠ অভিযোগে রয়েছে সাচাইল গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় রশিদ আলী বেপারীকে হত্যা। এর পর ঐ গ্রামের ১০০টি ঘরে লুটপাট চালানোর পর অগ্নিসংযোগ।
×