ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রকর্ম নতুন প্রজন্মে দেশপ্রেম জাগৃতির হাতিয়ার

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রকর্ম নতুন প্রজন্মে দেশপ্রেম জাগৃতির হাতিয়ার

এমএ রকিব ॥ কুষ্টিয়ায় এবার মহান বিজয় দিবসের আয়োজনটা ছিল কিছুটা ভিন্নমাত্রার। শহরের পরিচিত মুখ চিত্রশিল্পী দম্পতি মীর জাহিদ ও তাঁর সহধর্মিণী মীর আসমিদা জাহিদ। তাঁদের আঁকা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিছু চিত্রকর্ম নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল চিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া, এদিন তাঁদের আঁকা আরও ছিল রোড পেইন্টিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম, যা উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের নজর কেড়েছে। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ ও তাদের মধ্যে দেশপ্রেম গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কুষ্টিয়ায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এই শিক্ষক দম্পতি। শুধু বিজয় দিবসেই নয় দেশের প্রতিটি জাতীয় দিবসেই তাঁদের উপস্থিতি থাকে স্বতঃস্ফূর্ত। কোন জাতীয় দিবস এলেই তাঁরা প্যাট্রিয়ট ’৭১ সদস্যদের সঙ্গে রং তুলি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন পেইন্টিং কর্মকা-ে। মীর জাহিদ ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে ব্যাচেলর অব ফাইন আর্ট (বিএফএ) পাস করেন। এরপর তিনি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন কুষ্টিয়া জিলা ¯ু‹লে। অপরদিকে মীর আসমিদা জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে ১৯৯৩ সালে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়ায় শিশুদের চারুকলা শিক্ষার জন্য ধিয়েল আর্ট স্কুল নামের প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি শাখা খুলে সেগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে তোলার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ডের পক্ষ থেকে মীর জাহিদকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০১৩ সালের ২ জুলাই জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চিত্রশিল্পী মীর জাহিদের হাতে এ সম্মাননা ক্রেষ্ট তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। মীর জাহিদ তাঁর কার্যক্রম সম্পর্কে জনকণ্ঠকে বলেন, একাত্তর পরবর্তী নতুন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ ও তাদের দেশপ্রেমে জাগ্রত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাঁরা জিলা স্কুলসহ কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্কুলে জাগরণমূলক কর্যক্রম শুরু করেন। এসব কর্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ১ম শ্রেণী থেকে হাই স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সহজভাবে উপস্থাপন করা ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি অঙ্কন প্রশিক্ষণ দেয়া। রয়েছে অঙ্কনের মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি, নাগরিক দায়িত্ববোধ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধের বিকাশ ঘটানো। পরিবেশ সচেতনতায় উদ্বুদ্ধকরণের মধ্যে রয়েছে পাখি শিকার বন্ধকরণ, বেশি বেশি করে গাছ লাগানো, শুদ্ধভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার প্রশিক্ষণ। এছাড়াও রয়েছে শুদ্ধভাবে সঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাওয়া বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়া। মীর জাহিদ বলেন, বর্তমানে শুদ্ধ উচ্চারণে জাতীয় সংঙ্গীত, সঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় সংঙ্গীত গাওয়া শিক্ষার্থীর অভাব রয়েছে। এসব কর্মকা-ের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঙ্গীতের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো দূর করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি জানান, এ পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহর এবং উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রিন্টকপি তাঁরা বিতরণ করেছেন। মীর আসমিদা জাহিদ জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের জনগণের অর্থে শিক্ষা অর্জন করেছি। গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই শিক্ষা বিতরণ করতে পারলে ঋণের বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। সে কারণে ঢাকা ছেড়ে কুষ্টিয়ায় এসে স্বামীর সঙ্গে গ্রামের স্কুলগুলোতে অঙ্কনভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশমূলক কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকার চাইলে এই কার্যক্রম সারাদেশের স্কুলগুলোতেও ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। এ জন্য আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত। শিক্ষক দম্পতি মীর জাহিদ ও মীর আসমিদা জাহিদ ১৯৯৪ সাল থেকে “প্যাট্রিয়ট’৭১” সংগঠনের কার্যক্রম হিসেবে কুষ্টিয়ায় এসব কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় কোন দিবস এলেই তাঁরা প্যাট্রিয়ট-’৭১ সদস্যদের নিয়ে আয়োজন করেন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কর্মশালা ও চিত্র প্রদর্শনী। গত ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী কুষ্টিয়া কালেক্টরেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্তরে মীর জাহিদ ও মীর আসমিদা জাহিদের অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ ও জাগরণমূলক কার্যক্রম। এতে ছিল শিশু-কিশোরদের অংশ গ্রহণে ‘উপস্থিত ছবি অঙ্কন প্রতিযোগিতা’ ও ‘চিত্র প্রদর্শনী’। এ দিবসকে কেন্দ্র করে পরে কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় ৩দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনী। চিত্রশিল্পী দম্পতির এসব আয়োজনকে ঘিরে দর্শক-শ্রোতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
×