ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইতালিয়ান সুপার কাপ, নাটকীয় ম্যাচে নায়ক হিগুয়াইন, নায়ক থেকে খলনায়ক তেভেজ জুভেন্টাস ২(৫)-২(৬) নেপোলি

জুভেন্টাসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন নেপোলি

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

জুভেন্টাসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন নেপোলি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নায়ক হওয়ার পথেই ছিলেন কার্লোস তেভেজ। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ম্যাচশেষে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে হতে হয়েছে খলনায়ক! তবে তেভেজ ব্যর্থ হলে কি হবে, ঠিকই নায়ক বনে গেছেন তার স্বদেশী গঞ্জালো হিগুয়াইন। তারকা এই স্ট্রাইকারের নৈপুণ্যেই শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শুটআউটে জুভেন্টাসকে ৬-৫ গোলে হারিয়ে ইতালিয়ান সুপার কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নেপোলি। কাতারের দোহায় জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ২-২ গোলে অমীমাংসিত থাকে। ম্যাচে দু’দুবার জুভেন্টাসকে এগিয়ে দিয়েছিলেন তেভেজ। আর পিছিয়ে পড়া নেপোলিকে দুইবারই সমতায় ফেরান হিগুয়াইন। এ কারণে ম্যাচ গড়ায় ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে। যেখানে প্রথম ১২০ মিনিটের নায়ক তেভেজ পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন। তাঁর শট বারপোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। তবে হিগুয়াইন ঠিকই পেনাল্টি থেকেও গোল করেন। শেষ পর্যন্ত তাই শেষ হাসি হেসেছেন হিগুয়াইন, আর ব্যথায় কাঁদতে হয়েছে তেভেজকে। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইতালিয়ান সুপার কাপ শিরোপা ঘরে তুলেছে দিয়াগো ম্যারাডোনার সাবেক ক্লাব নেপোলি। নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে জুভেন্টাসের প্রথম শট নেন তেভেজ। কিন্তু ম্যাচে জোড়া গোল করা এ তারকা স্পট কিক থেকে লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হন। নেপোলির জরজিনহোও প্রথম শট থেকে গোল করতে পারেননি। এরপরের চারটি করে শট থেকে দু’দলই গোল পেলে ফের সমতা বিরাজ করে খেলায়। ফলে শুরু হয় সাডেন ডেথ। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, এখানে দু’দলই প্রথম দুটি করে শট থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয়। এরপর জুভেন্টাসের সিমোনে পাডোইন দলের হয়ে নবম শট নিতে আসেন। তিনি ব্যর্থ হন গোল করতে। ফলে নেপোলির সামনে সুবর্ণ সুযোগ আসে শিরোপা জয়ের। ডিফেন্ডার কালিডু কোলিবালি গোল করলে উচ্ছ্বাসে ভেসে উঠে নেপোলি শিবির। হতাশায় নিমজ্জিত হয় জুভেন্টাস। জুভ অধিনায়ক জিয়ানলুইজি বুফনের আপসোস, টাইব্রেকারে তিনটি দারুণ ‘সেভ’ করেও দলকে রেকর্ড সপ্তম শিরোপা এনে দিতে পারেননি। গত আগস্টে নেপোলির চ্যাম্পিয়ন্স লীগের প্লেঅফ ম্যাচ থাকায় ম্যাচের সূচী পরিবর্তন করে ডিসেম্বরে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়। প্রতিবছর এ আসরে মুখোমুখি হয় আগের মৌসুমের কোপা ইতালিয়া ও সিরি-এ’র শিরোপাজয়ী দল। এ হিসেবে এবার ২০১৩-১৪ মৌসুমে সিরি-এ লীগের চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাস ও কোপা ইতালিয়ান শিরোপাধারী নেপোলি ইতালিয়ান সুপার কাপে মুখোমুখি হয়। দোহায় অনুষ্ঠিত ম্যাচের মাত্র পঞ্চম মিনিটেই জুভেন্টাসকে এগিয়ে নেন তেভেজ। নেপোলির দুই ডিফেন্ডার বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ফলে বল পেয়ে যান তেভেজ। তুখোড় ফর্মে থাকা আর্জেন্টাইন তারকা সহজেই গোল করেন। বিরতির পর ৬৮ মিনিটে সমতা ফেরায় নেপোলি। ক্রিস্টিয়ান মাজ্জোর ক্রস লাফিয়ে রোখার চেষ্টা করে পারেননি জুভেন্টাসের এক ডিফেন্ডার। তিনি না পারলে ফাঁকায় দাঁড়ানো হিগুয়াইনের হেড পৌঁছে যায় জালে। সমতা ফেরার পর নেপোলির রক্ষণভাগের ওপর আবার চাপ তৈরি করে ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রির দল। কিন্তু ৯০ মিনিটে কোন দলই আর গোল পায়নি। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধেও জাল খুঁজে পাননি দুই দলের খেলোয়াড়রা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে (১০৭ মিনিট) তেভেজের দ্বিতীয় গোলে ফের এগিয়ে যায় জুভেন্টাস। কিন্তু ম্যাচ শেষের মাত্র দুই মিনিট আগে (১১৮ মিনিট) আবারও নেপোলিকে সমতায় ফেরান হিগুয়াইন। ফলে ম্যাচ গড়ায় ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে। আগের দুইবারও জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে খেলেছিল নেপোলি। ১৯৯০ সালে জিতলেও ২০১২ সালে হেরে যায় তারা। এবারের হারে রেকর্ড সপ্তম শিরোপা জয়ের সুযোগ হারিয়েছে জুভেন্টাস। এসি মিলানের সঙ্গে সর্বোচ্চ ছয়টি করে শিরোপা জয়ের রেকর্ড আছে জুভদের। ক্যারিয়ারে ১২তম শিরোপা নিশ্চিত করার করার পর নেপোলি কোচ রাফায়েল বেনিতেজ বলেন, আমরা দারুণ একটি ম্যাচ খেলেছি। এটা সত্যিকার অর্থেই অন্যরকম এক অনুভূতি। কারণ প্রতিপক্ষ জুভেন্টাসের মতো শক্তিশালী একটি দল। আমরা এ শিরোপাটি ভক্তদের জন্য উৎসর্গ করতে চাই, যারা নেপোলি থেকে এখানে এসেছে এবং দেশেও যারা আছে। খেলোয়াড়রা সবাই ভাল খেলেছে, আক্রমণভাগে হিগুয়াইন পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে গোলরক্ষক রাফায়েল। আর জুভেন্টাসের কোচ এ্যালেগ্রি বলেন, এই ফলাফল লজ্জাজনক। আমরা বেশ খোলামেলা ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু জয় নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারলাম না।
×