ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানবতাবিরোধী অপরাধ ॥ কায়সারের ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

মানবতাবিরোধী অপরাধ ॥ কায়সারের ফাঁসি

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, মুক্তিপণ আদায়, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন এবং ষড়যন্ত্রের ১৪টি প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি অভিযোগে ফাঁসি, চারটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড, তিনটিতে ২২ বছরের কারাদণ্ড ও দুটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার জনাকীর্ণ আদালতে পিনপতন নীরবতার মধ্যে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ১৩টি মামলায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড সহ বিভিন্ন দণ্ড প্রদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল। সৈয়দ কায়সারের মামলার রায়টি ট্রাইব্যুনালের ১৪তম রায়। আর ট্রাইব্যুনাল-২ এ এটি হবে ৮ম রায়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর আগে রায় প্রদান করেছেন ছয়টি। বর্তমান দুটি ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি মামলা রায় ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা আব্দুল জব্বার ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এই প্রথম ধর্ষণের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, বুলেটের আঘাতের চেয়েও ধর্ষণের আঘাত অনেক যন্ত্রণাদায়ক, ভয়ঙ্কর। একাত্তর সালে শত্রুর গুলিতে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের থেকেও যন্ত্রণাদায়ক হলো যারা একাত্তর সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের যন্ত্রণা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। সামাজিকভাবেও এ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। একাত্তরে যুদ্ধ শিশু, ধর্ষিত নারী ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের তালিকা করে পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যে যুদ্ধ শিশু জন্ম থেকে সামাজিক নিগ্রহ নিয়ে বড় হচ্ছে তারা সবাই সাহসী নারী। তাদের আমরা স্যালুট জানাই। ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে অভিযোগ ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ এই সাতটি অভিযোগে ফাঁসি, অভিযোগ ১, ৯, ১৩, ১৪ এই চারটিতে আমৃত্যু কারাদ-, অভিযোগ ২ এ ১০ বছর, অভিযোগ ৭ এ ৭ বছর ও অভিযোগ ১১ তে ৫ বছর করে মোট ২২ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগ ৪ ও ১৫ প্রমাণিত না হওয়াতে আসামিকে অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে। অভিযোগ-১১ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে ৫ বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। এদিকে কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের ফাঁসির আদেশের পর আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা পুরো বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট। বিচার সঠিকভাবেই চলছে। গণজাগরণ মঞ্চ মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, কুখ্যাত রাজাকার কায়সার বাহিনীর প্রধান কায়সারসহ সব যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করে বাঙালী জাতিকে দায়মুক্ত করতে হবে। রায় ঘোষণার পর আনন্দ মিছিল শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার তিনি এ কথা বলেন। মামলার সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটরবৃন্দ এই রায় বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন। তারা রায়ে খুশি। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এ রায়ে খুশি হননি। তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ সোমবার রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করেন। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে আসামি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় আনা হয়। সকাল ১১টায় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানসহ অন্য দুই সদস্য এজলাসে আসেন। এরপর চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান শাহীন রায়ের সারসংক্ষেপ পড়েন। ১২টার মধ্যে রায় পড়া শেষ করেন ট্রাইব্যুনাল। ১,৬৬১ প্যারার ৪৮৪ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত সার পাঠ করেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সকাল ১০টা ৫৭ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয় কায়সারকে। সকাল পৌনে নয়টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে এনে হাজতখানায় রাখা হয় তাকে। তার পরনে ছিল সাদা রঙের প্যান্ট ও এ্যাশ কালারের ব্লেজার। রায় পড়ার সময় আসামি সৈয়দ কায়সার ধীরস্থির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর সৈয়দ মোঃ কায়সারের ছেলে সৈয়দ গালিব আহমেদ বলেন, ‘আব্বু চিন্তা করবেন না, আল্লাহ ভরসা।’ সৈয়দ কায়সারের ভাই সৈয়দ ফয়সাল বলেন, ‘সত্যের জয় হবেই এর বেশি কিছু আমি বলব না। আল্লাহ বিচার করবে।’ এই প্রথম ॥ এই প্রথমবারের মতো অন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে কোন যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসির দ-াদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সাঁওতাল নারী হীরামনি ও মাজেদা নামের অপর নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ দুটি প্রমাণিত হয়েছে রায়ে। ওই দুই বীরাঙ্গনা নারী ও ধর্ষণের ফলে বীরাঙ্গনা মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া যুদ্ধশিশু শামসুন্নাহার ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্যও দেন কায়সারের বিরুদ্ধে। রায়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত বীরাঙ্গনা নারী ও যুদ্ধশিশুদের ক্ষতিপূরণ স্কিম চালুর পাশাপাশি তালিকা করে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। শামসুন্নাহার নামের ওই যুদ্ধশিশু দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপক্ষের দশম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন কায়সারের যুদ্ধাপরাধ মামলায়। ৪২ বছর বয়সী নারী সাক্ষী শামসুন্নাহার কায়সারের ধর্ষণের শিকার হওয়া একজন বীরাঙ্গনা মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছেন। বাহিনীর প্রধান ছিলেন ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তার রাযে উল্লেখ করেছেন, একাত্তরে সৈয়দ কায়সার প্রথমে হবিগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ৫০০-৭০০ স্বাধীনতাবিরোধী লোক নিয়ে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ নামে পাকিস্তানী সেনাদের সহযোগিতা করার জন্য একটি সহযোগী বাহিনী গঠন করেন। তিনি নিজে ওই বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ‘কায়সার বাহিনী’ নামাঙ্কিত এ বাহিনীর নিজস্ব ইউনিফরমও ছিল। আমি সন্তুষ্ট ॥ আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদ-াদেশের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা পুরো বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট। বিচার সঠিকভাবেই চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলের বিচার ও শাস্তি নির্ধারণে আগামী বছরের জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ’১৯৭৩-এর সংশোধনী উত্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের মতো আমারও প্রত্যাশা যে, এ রায় দ্রুত কার্যকর হোক। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার চাইলেই জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার স্বার্থে আইনী প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে তা করা হবে।’ প্রসিকিউটরবৃন্দ খুশি ॥ কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ কায়সারের ফাঁসির আদেশ হওয়াতে প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটরবৃন্দ খুশি হয়েছেন। প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত রায়ের পর তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, কায়সারের বিরুদ্ধে আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি অভিযোগে তার মৃত্যুদ-, চারটিতে যাবজ্জীবন, দুটিতে ১০ ও ৭ বছর এবং একটিতে ৫ বছরের কারাদ- হয়েছে। আর দুটি অভিযোগ থেকে আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত। এ রায়ে আমি সংশ্লিষ্ট মামলার প্রসিকিউটর হিসেবে আমরা আনন্দিত। অন্যদিকে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘এ রায় একটি বিরাট অর্জন। এ রায় আমরা একাত্তরের বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের প্রতি উৎসর্গ করছি।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনা সদস্য ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের হাতে দুই লাখেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন বলে ধারণা করা হয়। নির্যাতিত এই নারীদের অনেকেই সে সময় গর্ভবতী হয়ে পড়েন, জন্ম নেয় অনেক যুদ্ধশিশু। অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই নারীদের সম্মান জানান তাদের বীরাঙ্গনা বলে। চলতি বছর নির্যাতিত এই নারীদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। ১৯৭২ সালে অস্ট্রেলীয় চিকিৎসক জিওফ্রে ডেভিস এই ধর্ষিতা নারীদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেন। তার ভাষায়, পাকিস্তানী বাহিনী একাত্তরে ধর্ষণকে বাঙালীর বিরুদ্ধে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে। গণজাগরণ মঞ্চ ॥ কায়সার বাহিনীর প্রধান কায়সারসহ সব যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করে বাঙালী জাতিকে দায়মুক্ত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী কায়সারের রায় ঘোষণার পর আনন্দ মিছিল শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হলো ট্রাইব্যুনাল রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত। এখন সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, কোন অপশক্তির কাছে তারা (সরকার) মাথা নত করেনি। রায় কার্যকরের ক্ষেত্রেও তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। কায়সার আপীল করবেন ॥ মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের রায়ে সন্তুষ্ট নয় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। একই সঙ্গে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হবে বলেও জানিয়েছেন তার আইনজীবী এসএম শাহজাহান। আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেন, ‘একজন আইনজীবী হিসেবে রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানো যায় না। ট্রাইব্যুনাল তার দৃষ্টিতে যা ভাল মনে করেছেন, তাই রায় দিয়েছেন।’ তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘যেহেতু আমাদের আপীল করার সুযোগ আছে সেহেতু আমরা আপীল করব। আপীল বিভাগের অধিকতর শুনানিতে সৈয়দ কায়সার খালাস পাবেন বলেও প্রত্যাশা করছি।’ মামলার ধারাবাহিকতা ॥ সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয় ২০১২ সালের ২৮ মার্চ। তদন্ত সংস্থা তদন্ত শেষ করেন ২০১৩ সালের ১৫ মে। একই বছরের ১৫ মে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ২০১৩ সালের ২১ মে এ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে কায়সারকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ২২ মে জামিন আবেদন খারিজ কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ৩০ জুলাই শর্তসাপেক্ষে জামিন পান। ওই বছরের ১০ নবেম্বর প্রসিকিউশন পক্ষ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ নির্যাতনসহ ১৬টি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। একই বছরের ৪ মার্চ সূচনা বক্তব্য শুরু করেন প্রসিকিউশন পক্ষ। ৯ মার্চ থেকে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা হয়। ২৩ জুলাই আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ৭ আগস্ট থেকে যুক্তিতর্ক শুরু হয়। আসামি পক্ষ ও প্রসিকিউশন পক্ষের যুক্ততর্ক শেষ হওয়ার পর চলতি বছরের ২০ আগস্ট মামলার রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়। একই দিন আসামিকে জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল। কায়সারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, রানা দাশগুপ্ত ও তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে কায়সারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার সিনিয়র আইনজীবী এসএম শাহজাহান ও আব্দুস সোবহান তরফদার। গত ৯ মার্চ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মনোয়ারা বেগমসহ রাষ্ট্রপক্ষের ৩২ জন সাক্ষী। যুক্তিতর্ক ॥ এর আগে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোঃ কায়সারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষ ও আসামি পক্ষে যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ট্রাইব্যুনালে কায়সারের বিরুদ্ধে শুনানি করেছেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে আসামি পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান ও আব্দুর সুবহান তরফদার। কায়সারের মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষ ৬ দিন এবং আসামি পক্ষ ৭ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত যুক্তিতর্কে বলেন, আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি একাত্তরে সৈয়দ কায়সারের অপরাধের শিকার বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় কায়সার তরুণ ছিলেন। তিনি যা করেছেন সচেতনভাবেই করেছেন। সে দিন তিনি তার নিজের নামে ৬০০-৭০০ জন নিয়ে কায়সার বাহিনী গড়ে তোলেন। ঐ বাহিনী গড়ে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধকালে তিনি ড্রাগনের ভূমিকা পালন করেছেন। সে ভিকটিম পরিবার সাক্ষী দিতে এসেছিলেন তারাও সে দিন তার ভূমিকার জন্য শাস্তি দাবি করেছেন। এখনও হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ তার ড্রাগনের ভূমিকা ভুলতে পারেনি। আমরা জনগণের পক্ষ থেকে জনগণের যে আর্তি তাকেও সামনে রেখে আমরা অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা নিয়ে তাকে (কায়সার) সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের আর্থিক ক্ষতি পূরণের দণ্ড দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে পার্থনা করছি। প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, কায়সারের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ আমরা সাক্ষী ও দলিল দস্তাবেজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাই আদালতের কাছে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কামনা করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী বিচারের মধ্যে একমাত্র এই মামলায় আসামির শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি তার সম্পত্তি থেকে (ভিকটিম) ধর্ষিতা ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার আবেদন জানিয়েছি। প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আরও বলেন, কায়সারের বিরুদ্ধেই একমাত্র যুদ্ধশিশু শামসুন্নাহার জবানবন্দী পেশ করেছেন। শামসুন্নাহারের জন্ম তার মায়ের উরসে হলেও তিনি পাকিস্তানী সেনাদের ধর্ষণের ফসল। জন্মই যার আজন্ম পাপ। জন্মের পর থেকে তাকে সামাজিকভাবে অবহেলা নিগ্রহ অপমানের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে হয়। তাদের জীবনের যুদ্ধ আসলে কখনই শেষ হয় না। অন্যদিকে সৈয়দ কায়সারের আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেছেন, কায়সারের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ প্রসিকিউশন পক্ষ এনেছেন তা প্রমাণ করতে পারেনি। প্রসিকিউশন পক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা করছি আসামি সম্পূর্ণ নির্দোষ হয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হয়েই সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। যত অভিযোগ ॥ কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে মোট ১৬টি অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- অভিযোগ-১ : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের পুলিশ ফাঁড়ি, ইসলামপুর গ্রামের কাজী বাড়িতে শাহজাহান চেয়ারম্যানকে হত্যা, নায়েব আলীকে জখম এবং বাড়িতে লুটপাট করে। অভিযোগ-২ : হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর বাজারের পশ্চিমাংশ ও পার্শ্ববর্তী কাটিয়ারায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। অভিযোগ-৩ : একই দিন সকালে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার কৃষ্ণনগর গ্রামের অহিদ হোসেন পাঠানসহ ৪ জনকে হত্যা। অভিযোগ-৪ : মাধবপুর থানার মাধবপুর বাজারের উত্তর পূর্ব অংশ, উত্তর মাধবপুর ও দত্ত বাড়িতে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে। অভিযোগ-৫ : শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্যগুদাম এবং শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের রেলব্রিজ এলাকার আব্দুল আজিজসহ ৭ জনকে আটক নির্যাতন। অভিযোগ-৬ : হবিগঞ্জ জেলার সদর থানার পুনার বাজার পয়েন্ট থেকে ডাঃ সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং হীরেন্দ্র চন্দ্র রায়কে ধরে নিয়ে আটকের পর নির্যাতন করে হত্যা করে সৈয়দ কায়সার এবং তার বাহিনী। অভিযোগ-৭ : হবিগঞ্জ জেলা সদরের এনএনএ মোস্তফা আলীর বাড়িসহ ৪০-৫০টি বাড়িঘর, দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। অভিযোগ-৮ : চুনারুঘাট থানার চাঁদপুর চা বাগানে হীরামনিকে ধর্ষণ করে সৈয়দ কায়সারের বাহিনী। সৈয়দ কায়সার এ সাঁওতাল নারীকে ধর্ষণে সহায়তা করেছিল। অভিযোগ-৯ : মাধবপুরের লোহাইদ এলাকার আব্দুল আজিজ, আব্দুল গফুর, জমির উদ্দিন, আজিম উদ্দিন, এতিমুনেছা, নূর আলী চৌধুরী, আলম চাঁনবিবি ও আব্দুল আলীকে হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। অভিযোগ-১০ : হবিগঞ্জ জেলার সদর, মোকাম বাড়ি, শায়েস্তাগঞ্জ থানার আর এ্যান্ড এইচ ডাকবাংলো এবং মাধবপুর থানার শাহাজীবাজার এলাকার শাহ ফিরোজ আলীকে অপহরণের পর আটক করে নির্যাতন করে হত্যা করে। অভিযোগ-১১ : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হরিপুর থানার নাসিরনগরের গোলাম রউফ মাস্টার ও তার পরিবারের লোকজনদের উপর নির্যাতন চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। অভিযোগ-১২ : মাধবপুর থানার বেলাঘর, জগদীশপুর হাইস্কুলে আতাব মিয়া, আইয়ুব মিয়া, মাজেদা বেগমকে অপহরণ করে আটক করে এবং তাদের বিভিন্ন কাজ করতে বাধ্য করানো হয়। এক পর্যায়ে মাজেদাকে ধর্ষণ করা হয়। অভিযোগ-১৩ : কালাপুরের পাকিস্তানী আর্মি ক্যাম্প এবং নলুয়া চা বাগানে তিনজনকে হত্যা। অভিযোগ-১৪ : মৌজপুর সিরাজ আলীর বাড়ি, জদীশপুর হাইস্কুলের আর্মি ক্যাম্প এবং সোনাই নদীর ব্রিজ এলাকার সিরাজ আলীসহ ৪ জনকে হত্যা। অভিযোগ-১৫ : মোঃ নাজিম উদ্দিনের বাড়ি, সৈয়দ কায়সারের গ্রাম নোয়াপাড়ার বাড়ি শাহাজীবাজার বিদ্যুত কেন্দ্রে স্থাপিত পাক সেনাদের নির্যাতন কেন্দ্র এবং শালবন রঘুনন্দ পাহাড় এলাকায় শাহাপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। অভিযোগ-১৬ : ভাটপাড়া থানার ১০৮ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। কে এই কায়সার ॥ সাবেক জাতীয় পার্টির মন্ত্রী সৈয়দ কায়সার ওরফে মোঃ কায়সার ওরফে সৈয়দ কায়সার ওরফে এসএম কাইজার হবিগঞ্জ জেলার আতঙ্ক। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজ এলাকায় নিজ নামে বাহিনী গঠন করে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। আসামি সৈয়দ মোঃ কায়সারের পিতার নাম মৃত সৈয়দ সঈদ আহম্মেদ ও মাতার নাম মৃত বেগম হামিদা বানু। তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানাধীন ইটাখোলা প্রকাশ নোয়াপাড়া গ্রামে। ১৯৪০ সালের ১৯ জুন তার জন্ম। তারা মোট ৫ ভাই ৩ বোন। ভাইয়েরা সবাই শিল্পপতি, বোনেরা বিবাহিত। অভিযুক্ত আসামির দুই সন্তান সৈয়দ মোঃ তানভির ও সৈয়দ মোঃ গালিব। ৫ কন্যার সবাই বিবাহিত। আসামি কায়সার একজন শিল্পপতি। সায়হাম টেক্সটাইল, সাফকো স্পিনিং মিলস ও সায়হাম এগ্রোর পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত আছেন তিনি। এ ছাড়া প্রচুর বিত্তবৈভবের মলিকও। হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানাধীন ইটাখোলা প্রকাশ নয়াপাড়া গ্রামের তার পৈত্রিক বাড়ির সামান্য পশ্চিমে ঢাকা- সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন স্থানে নিজের জন্য আলাদা বসতবাড়ি নতুনভাবে নির্মাণ করেছেন। ঢাকা মহানগরীর তেজগাঁও থানাধীন পশ্চিম নাখালপাড়া ১১৭ ব্যাংকার্স রোড ছাড়াও বনানীতে তার নিজের বাড়ি আছে। ৪৫ বিজয়নগরে সায়হাম স্কাইভিউ বহুতল ভবনে তার মালিকানা এবং বারিধারা নিকেতনে ও উত্তরা মডেল টাউনে প্লট আছে। আসামি তার বাবা ও মামার আদর্শে অনুপানিত হয়ে ১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী গণতন্ত্রকামী বাঙালীর আন্দোলনকালে কনভেনশন মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। হবিগঞ্জ জেলার সাবেক বিএনপির জেলা সভাপতি ও পরে এরশাদ সরকারে কৃষি প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে পিডিপি নেতা কায়সার। তিনি ও তার পরিবার অত্যন্ত প্রভাবশালী। পাকিস্তান সরকারের সময় তার বাবা ও মামা ছিলেন প্রাদেশিক সরকারের এমপি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি লন্ডন পালিয়ে যান, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পরে তিনি দেশে ফিরেন। দেশে ফিরে প্রথমে বিএনপির জেলা সভাপতি। নমিনেশন না পেয়ে এরশাদের দলে যোগ দেন এবং এমপি ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপি ভেঙে গেলে কায়সার বিএনপিতে শাহ আজীজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন দলের যুগ্ম মহাসচিব হন। এরপর এরশাদ ক্ষমতায় এলে কায়সার হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। এ সময় প্রথমে তিনি জাতীয় পার্টির হুইপ ও পরে ১৯৮৯ সালে কৃষি প্রতিমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। অভিযোগ ও দণ্ড চার্জ-১: হত্যা, জখম, হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ- আমৃত্যু কারাদণ্ড চার্জ-২: লুটপাট, অগ্নিসংযোগ-১০ বছরের কারাদণ্ড চার্জ-৩: হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ -মৃত্যুদণ্ড চার্জ-৪: হত্যা, জখম, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ -খালাস চার্জ-৫: আটক নির্যাতন, হত্যা -মৃত্যুদণ্ড চার্জ-৬: হত্যাকাণ্ড -মৃত্যুদণ্ড চার্জ-৭: লুটপাট -৭ বছরের কারাদণ্ড চার্জ-৮: ধর্ষণ -মৃত্যুদণ্ড চার্জ-৯: হত্যাকা- -আমৃত্যু কারাদণ্ড চার্জ-১০: অপহরণ, আটক, হত্যা -মৃত্যুদণ্ড চার্জ-১১: নির্যাতন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় -৫ বছর কারাদণ্ড চার্জ-১২: ধর্ষণ -মৃত্যুদণ্ড চার্জ-১৩: হত্যা -আমৃত্যু কারাদণ্ড চার্জ-১৪: হত্যা -আমৃত্যু কারাদণ্ড চার্জ-১৫: হত্যা -খালাস চার্জ-১৬: গণহত্যা -মৃত্যুদণ্ড
×