ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সার্কের জ্বালানিবলয়

প্রকাশিত: ০৩:০২, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

সার্কের জ্বালানিবলয়

পরিবেশসম্মত জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদনের কথা গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এ লক্ষ্যে কার্যকর কোন পদক্ষেপের দেখা মেলেনি। এমনিতেই জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদন করায় বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য এবং তা হওয়ার বিষয়টি অনেককাল ছিল অজ্ঞাত। পরিবেশবাদীরা বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হওয়ার পর এই বোধোদয় ঘটেছে যে, পরিবেশ রক্ষা করে উৎপাদনের পদক্ষেপ গ্রহণই বাঞ্ছনীয়। সার্কভুক্ত দেশগুলো এই বোধের প্রভাবে ‘জ্বালানিবলয়’ গড়ে তুলতে যাচ্ছে, যা অকল্পনীয় হলেও এখন আর অভাবনীয় কিছু নয়। কারণ সদ্যসমাপ্ত সার্কের কাঠমান্ডু শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো অভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণে কয়েক পা এগিয়ে এসেছে শুধু নয়, বৈঠক করে কার্যকর পদক্ষেপও নিচ্ছে। সংস্থাটি তার বন্ধাত্ব কাটিয়েও রক্ষণশীল অবস্থান থেকে সরে এসে জ্বালানি ব্যবহার সম্প্রসারণে একমত হয়েছে। এই অঞ্চলের পানির শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এ লক্ষ্যে তারা চুক্তিও করেছে। সার্ক অঞ্চলে সুষম উন্নয়নের জন্য পারস্পরিক জ্বালানি সহযোগিতার ক্ষেত্রটির বন্ধাত্ব কাটাতে সচেষ্ট সংস্থাটি। তাই এই অঞ্চলের দেশগুলোর সমন্বয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে জ্বালানিবলয়। হিমালয় অঞ্চলে জলবিদ্যুতের যে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে তা ব্যবহার করে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো যে সম্ভব তা উপলব্ধিতে এসেছে সার্কভুক্ত দেশগুলোর। এজন্য পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন ও ক্রসবর্ডার বিদ্যুত আমদানির ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। হিমালয়ের জলবিদ্যুত ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদনে সম্মত হয়েছে সার্ক দেশগুলো। আন্তঃদেশীয় বিদ্যুতবাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রাথমিক কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। ‘সার্ক এনার্জি রেগুলেটরস’ তৎপর হয়েছে, বিদ্যুত ও জ্বালানি ব্যবস্থার সম্প্রসারণে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তথা রেগুলেটরি বডি গঠন করেছে। উক্ত সংস্থা এই অঞ্চলের পানির শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করতে চায়। ঢাকায় সদ্যসমাপ্ত দু’দিনব্যাপী সার্ক এনার্জি রেগুলেটরস বডির প্রথম বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যা অতীতে ছিল অকল্পনীয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও সার্কের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বৈঠকে সদস্য দেশগুলোর এনার্জি রেগুলেটরসদের মধ্যে অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান, নীতি ও আইনের বিষয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক, আন্তঃদেশীয় বিদ্যুতবাণিজ্য উদ্বুদ্ধকরণ এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা গঠন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নেপাল, ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানি করতে চায়। ভারত থেকে ইতোমধ্যে আমদানি শুরু হয়েছে। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে সার্ক দেশগুলোর অভিন্ন নীতি গ্রহণ হবে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে রাজনৈতিক মতভেদ বা বিরোধিতা বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে হয় না। কারণ বিদ্যুতের চাহিদা অত্যধিক। এই চাহিদা মেটাতে সার্ক যে সক্রিয় হয়েছে, তা অন্ধকারের টানেলে বিশাল আলোকরেখা প্রজ্বলিত হওয়ার মতোই। সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সার্ক দেশগুলোর অন্ধকারকে দূরীভূত করে আলোর ঝর্ণাধারা বইয়ে দেবে। আলোকিত জীবন ধারায় প্রবাহিত হবে সার্কের জনগণ।
×