ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টুরিস্টবেশে দুবাইয়ের ৫ জঙ্গীর কক্সবাজারে গোপন সফর

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪

টুরিস্টবেশে দুবাইয়ের ৫ জঙ্গীর কক্সবাজারে গোপন সফর

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ ইসলামিক স্টেট (আইএস) অব বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ছক তৈরি করে জঙ্গীরা চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারে একাধিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা অনুসারে দুবাই-সৌদি আরব ও পাকিন্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রথম সারির কয়েক জঙ্গী বাংলাদেশে আসে নবেম্বরের শেষের দিকে। গত ২৩ নবেম্বর চট্টগ্রামে দুপুরে ও বিকেলে দুই দফা জঙ্গীদের মধ্যে গোপন বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও গোয়েন্দারা বিষয়টি জেনে যাওয়ায় তা ভ-ুল হয়ে যায়। ছক অনুসারে চট্টগ্রামে প্রথম বৈঠকসহ মৌলবাদী গোষ্ঠী ও জঙ্গীদের বিভিন্ন স্থানে একাধিক বৈঠকে যোগ দিতে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের প্রথম সারির জঙ্গী নেতা মৌলভী আবদুল হকের নেতৃত্বে দুবাই থেকে পাঁচ জঙ্গী ট্যুরিস্টের ছদ্মবেশে বাংলাদেশে আসে। বৈঠকের আগে ভয়ঙ্কর জঙ্গী মৌলভী ছালামত উল্লাহ, পাকিস্তানী আবু সালমান (মোঃ আলম) সহ পাঁচজন চট্টগ্রামে হোটেল লর্ডস ইন থেকে গোয়েন্দার জালে আটকে গেলে আগন্তুক জঙ্গীরা আর ওই বৈঠকে জড়ো হতে পারেনি। তবে বিদেশী ওই ৫ জঙ্গী ১৬ দিন ধরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিভিন্ন এলাকা সফর করে গেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, কক্সবাজারে হ্নীলা, পাহাড়তলী, খুনিয়া পালং ও ইসলামপুর জুমনগরে পৃথক বৈঠক শেষে ৪ ডিসেম্বর রাতে বিমানযোগে দুবাই ফিরে গেছে আবদুল হকের নেতৃত্বে ছদ্মবেশে আসা ওই পাঁচ বিদেশী জঙ্গী। চট্টগ্রামে পাকিস্তানী নাগরিক মোঃ আলম ও জঙ্গী ছালামতসহ পাঁচজন আটক হওয়ার তিনদিন আগে দুবাই থেকে আসে ওই পাঁচ জঙ্গী নেতা। মিয়ানমারের মংডু ৪ মাইল এলাকার বাসিন্দা হলেও কৌশলে জঙ্গী আবদুল হক এদেশের ভুয়া ঠিকানা দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে পাসপোর্ট। চট্টগ্রাম শহরের তালতলা ফরিদাপাড়ার বাসিন্দা হিসেবে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্টধারী আন্তর্জাতিক জঙ্গী নেতা মৌলভী আবদুল হকের নেতৃত্বে দুবাইয়ের পাঁচ জঙ্গী কৌশলে দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর শেষে ৪ ডিসেম্বর রাত আটটায় বিমানযোগে দুবাইয়ে চলে গেছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের এ নেতার সফরের পর থেকে আরএসওর অর্থায়নে জঙ্গী ছালামত উল্লাহ (আটক) ও মৌলভী আয়াছের পরিচালনাধীন মাদ্রাসার আদলে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বেড়েছে। এ ছাড়াও শহরের বাঁচা মিয়াঘোনায় জঙ্গীদের গোপন আস্তানাখ্যাত একটি কুঠিরে ভোরে ও রাতে অচেনা মৌলভীদের নিয়মিত গোপন বৈঠক চলছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বাঁচা মিয়াঘোনার পাহাড়ঘেঁষা একটি বিশাল খালি মাঠের এক কোনায় চতুর্দিকে বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা জঙ্গী মৌলভী আবদুল আজিজের ওই কুঠিরে, পাহাড়ের চূড়ায় রাতে বিশাল খালি মাঠে কয়েক আরএসও ক্যাডার মিলে প্রায় সময়ই বৈঠক করে চলছে। জঙ্গী ছালামতের স্বজন ও সহযোগীরা প্রশাসনের লোকজনকে পাহারা বসিয়ে ওই ছোট্ট কুঠিরে ঘন ঘন বৈঠকে বসছে বলে তথ্য মিলছে। প্রতিবেশী হারুন, আবছার ও মাবিয়া বেগম জানান, অচেনা বহু লোক আসে ওই ঘরে। তারা মৌলভী আবদুল আজিজের ওই ভিটাবাড়িটা কিনতে দেখতে আসে বলে জানানো হয়ে থাকে। ওই ঘরে কোন সময় আজিজ নতুবা আরএসওর অস্ত্র প্রশিক্ষক জঙ্গী মৌলভী মাহমুদুল হাসান বসবাস করে থাকে বলে জানান স্থানীয়রা। সেখানে বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত কতিপয় নেতাকেও মাঝে মধ্যে আরএসও জঙ্গীদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে দেখা গেছে । সূত্র জানায়, কৌশলে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ও জাতীয় পরিচয়পত্র হাতিয়ে নিয়ে এদেশের নাগরিক দাবিদার কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় অপতৎপরতাকারী ৯৩ আরএসও ক্যাডারের (জঙ্গী) বিরুদ্ধে একটি বিশেষ সংস্থা উচ্চ মহলে রিপোর্ট পাঠিয়েছে। গত অক্টোবরের শেষের দিকে পাঠানো ওই রিপোর্টে চট্টগ্রামে আটক ছালামত উল্লাহ, নাইক্ষ্যংছড়িতে বিজিবির হাতে আটক তার শ্যালক জঙ্গী জুনাইদ ও কক্সবাজারে আটক আবু তাহের পিন্টুর (জামিনে মুক্ত) নামও রয়েছে। জঙ্গী ছালামতকে আটকের পর তার ছবি ও গোপনীয় কাগজপত্র সরিয়ে মিয়ানমারে পালানোর সময় জঙ্গী জুনাইদকে আটক করে বিজিবি। দুবাই থেকে জঙ্গীরা বাংলাদেশে এসে আরএসও বাংলাদেশের সমন্বয়ক ভয়ঙ্কর জঙ্গী ছালামতসহ পাঁচজনকে গ্রেফতারের খবর শুনে থমকে যায়। পরবর্তীতে আরএসও ক্যাডারদের উদ্যোগে দাওয়াতের বাহনায় বিভিন্ন স্থানে পৃথক বৈঠক করে পার পেয়ে গেছে এসব বিদেশী জঙ্গী। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠকের সময় তাদের সঙ্গে আটক জঙ্গী ছালামতের শ্বশুর মিয়ানমারের বুচিদং টাইম্যাখালির বাসিন্দা ‘বাংলাদেশী’ বলে দাবিদার মৌলভী ইকবাল, আরএসও সহসভাপতি নাইক্ষ্যংছড়িতে বসবাসকারী মৌলভী শাকের উল্লাহ, মৌলভী আবদুল আজিজ ও মৌলভী আয়াছ উপস্থিত ছিল বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, ২৫ নবেম্বর দুপুরে দাওয়াতের বাহানায় দুবাই থেকে আসা পাঁচ জঙ্গী টেকনাফে হ্নীলায় মৌলভী আবছারের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে মিলিত হয়। তবে হ্নীলা মাদ্রাসার পরিচালক মৌলভী আবছার উদ্দিন এ বৈঠকের বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। সূত্রে প্রকাশ, আরএসও জঙ্গী এবং রোহিঙ্গাদের অর্থ যোগদান সৌদি আরবের আবদুল্লাহ মারুফ ও শেখ আহমেদ চট্টগ্রামে গোয়েন্দার হাতে আটক পাকিস্তানী পাসপোর্টধারী সৌদিতে বসবাসকারী আবু সালমান ওরফে মোঃ আলমকে মুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে দুবাই থেকে প্রথম সারির জঙ্গী নেতা মৌলভী আবদুল হককে পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশে। এ জঙ্গী নেতা আরএসওর কয়েক অর্থশালী ব্যক্তি ও আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর ধান্ধাবাজ নেতার সঙ্গে শলাপরামর্শও করে গেছে। পরবর্তীতে দুবাই ফিরে যাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংগঠন থেকে আটক আবু সালমান ওরফে মোঃ আলমের মুক্তির ব্যাপারে বিবৃতিসহ দূতাবাসের মাধ্যমেও তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞজনদের মতে, আবু সালমান (মোঃ আলম) যদি জঙ্গী সম্পৃক্ততায় জড়িত না থাকেন, তাহলে ভয়ঙ্কর জঙ্গী ছালামত উল্লাহর সঙ্গে গোপন বৈঠকে গেলেন কেন? ওদিন পাঁচ জঙ্গীদের আটকের পর দুই ডিবি পুলিশের (সাময়িক বরখাস্ত) মুঠোফোনে অপর জঙ্গীদের সঙ্গে আলাপ করার কি প্রয়োজন ছিল? আরএসওর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. ইউনুচের সহোদর আবু তাহের, বর্মী মাস্টার আবদুল ওয়াহেদ, আইয়ুব মাস্টার ও মৌলভী দিল মোহাম্মদ আটক পাঁচ জঙ্গীকে ছাড়িয়ে নিতে আরএসও জঙ্গীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতাকারী গর্জনিয়ার জনৈক ইদ্রিস বিভিন্ন দফতরে ব্যাপক তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্রটি আভাস দিয়েছে।
×