ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারসাম্য আনবে নতুন পে-স্কেল সরকারী বেসরকারী খাতে

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪

ভারসাম্য আনবে নতুন পে-স্কেল সরকারী বেসরকারী খাতে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ প্রস্তাবিত বেতন স্কেল সরকারী ও বেসরকারী খাতে ভারসাম্য সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে এতে মেধাবী তরুণদের সরকারী চাকরিতে আকৃষ্ট করবে। প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে শতভাগ বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা সুবিধারও প্রস্তাব করা হয়েছে। বেতন কমিশনের এই সুপারিশে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে কর্মচারীদের বক্তব্য তাদের বেতন আরও বেশি বাড়ানো উচিত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারী খাত অনেকটা এগিয়ে গেছে। আনুপাতিক হারে বেড়েছে বেসরকারী খাতে বেতন-ভাতা। সে তুলনায় সরকারী খাতে বেতন-ভাতা সমান তালে বৃদ্ধি না পাওয়ায় সমাজে একটি বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারী খাতের তুলনায় বেসরকারী খাতে বেতন অনেক বেশি। সরকারী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন সর্বোচ্চ সাড়ে তিন লাখ টাকা। সঙ্গে আনুষঙ্গিক সুবিধা। আর বেসরকারী ব্যাংকের বেতন সাড়ে তিন লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এ ছাড়াও থাকে আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া অন্যান্য বেসরকারী সেক্টরেও সরকারী সেক্টরের চেয়ে বেতন অনেক বেশি। এতে মেধাবীরা সরকারী চাকরি বিমুখ হয়ে উঠেছে। অনেক মেধাবী এখন সরকারী চাকরি করতে চায় না। সে সব কথা বিবেচনায় নিয়ে এবার বেতন কমিশনের সুপারিশে বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপের সুপারিশ রয়েছে। এবারের সুপারিশে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের প্রবেশ দারে (এট্রি পয়েন্ট) বেতন স্কেল ১২৭ শতাংশ বেতন বাড়ানোর সুপারিশ রয়েছে। মেধাবীদের সরকারী চাকরিতে আকর্ষণীয় করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এর পাশাপাশি সরকারী কর্মকর্তাদের হাউস লোন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে এক কর্মকর্তাকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাউস লোন প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারী চাকুরেদের পেনশন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে এতে। পেনশন বর্তমানে ৮০ শতাংশের পরিবর্তে ৯০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বেতন কমিশনের এই সুপারিশে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খুশি। কোন কোন সময় দেখা গেছে বেতন কমিশনের সুপারিশের পর সচিবালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় অসন্তোষ প্রকাশ করে। কিন্তু এবার কোথাও তা করা হয়নি। বরং সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খুশি। তাদের দাবি বেতন কমিশনের এই সুপারিশ সরকার যেন শতভাগ বাস্তবায়ন করে। যদিও বেতন কমিশনের সুপারিশ শতভাগ বাস্তবায়নের নজির নেই। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খুশি হলেও কর্মচারীদের একটি অংশ বলছে তাদের বেতন আরও বেশি করা উচিত ছিল। একজন সচিবের বেতন ৮০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বেতনের সুপারিশ করা হয়েছে মাত্র ৮ হাজার দুই শত টাকা। এই পার্থক্যটা কমানো উচিত। তাদের দাবি সর্বনিম্ন বেতন ১৫ হাজার টাকা করলে নিচের দিকের কর্মচারীদের কিছুটা সুবিধা হতো। এদিকে অষ্টম পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে আগামী জানুয়ারির মধ্যে বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করবে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের নেতৃত্বে এই বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হবে। এই বাস্তবায়ন কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে দেশের প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পাবে। পে-কমিশনের সুপারিশে শতভাগ বেতন-ভাতা বৃদ্ধির কথা বলা হলেও এর কতটুকু বাস্তবায়ন হবে সেই প্রশ্ন দেশের সকল সরকারী কর্মকর্তার। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও এই নিয়ে কানাঘুষার শেষ নেই। ইতোপূর্বে কোন পে-কমিশনের সুপারিশই সরকার শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বরাবরই সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে পে-কমিশনের সুপারিশ কাটছাঁট করা হয়েছে। তাই এবারও কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে এই নিয়ে চলছে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ। এছাড়া বেতন-ভাতা শতভাগ বাড়লে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। তবে অর্থমন্ত্রী বলছে এতে কোন মূল্যস্ফীতি ঘটবে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব জনকণ্ঠকে বলেন, পে-কমিশনের সুপারিশ কখনই সরকার শতভাগ বাস্তবায়ন করেনি। এখন সরকার বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করবে। তাঁরা হিসাব-নিকাশ করে দেখবেন সুপারিশের কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য। তিনি বলেন, তারপরও পে-কমিশনকে সাধুবাদ জানাতে হয়। কারণ কমিটি বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এই সুপারিশ করেছে। সূত্র জানায়, অবৈধ পথে অর্থ গ্রহণ ছাড়াই সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে স্বচ্ছলভাবে জীবন-যাপন করতে পারেন সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করছে পে এ্যান্ড সার্ভিসেস কমিশন। এছাড়া সরকারী চাকরিতে সৎ ও মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে বেতন-ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ফরাসউদ্দিন ইতোপূর্বে জানিয়েছেন, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পান তা দিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মানে ‘স্থিতিশীলতা’ থাকা দরকার। এবারের পে এ্যান্ড সার্ভিস কমিশনের একটা নতুন ধরনের পরিকল্পনা আছে- যদি বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা যায় তাহলে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। কিছু কিছু সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়ত অসৎ পথে যেতে হয়, নতুন বেতন-ভাতা হলে সেখানে যাওয়া থেকে তাদের বিরত রাখা যাবে। আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো-সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন মনেপ্রাণে নিবেদিত হয়ে, দক্ষভাবে, সৎভাবে কাজ করতে পারেন, দেশের সমৃদ্ধির জোয়ারে যেন জোরদার হাওয়া লাগাতে পারেন।
×