ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার বাংলাদেশ থেকে চাল কিনতে চাইছে ভারত

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

এবার বাংলাদেশ থেকে চাল কিনতে চাইছে ভারত

তৌহিদুর রহমান ॥ এবার বাংলাদেশ থেকে চাল কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত। দেশটি তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যের জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল কিনতে চায়। বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত চাল কেনার জন্য ইতোমধ্যে সরকারকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত চাল কিনে নিয়ে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে সরবরাহ করতে চায়। এই লক্ষ্যে বুধবার ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। চিঠিতে দেশটি তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল বাংলাদেশ থেকে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভারতের হাইকমিশনের এই প্রস্তাব এখন খাদ্য মন্ত্রণালয় বিবেচনা করছে। ভারত ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে আলু কেনার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর আগে গত অক্টোবরে আলু কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব পাঠায় ভারত। আলুর পরে এখন চাল কিনতে চাইছে ভারত। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভারতে এই মুহূর্তে কোন খাদ্য ঘাটতি নেই। দেশটি প্রতি মাসে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে থাকে। তবে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে খাদ্য সরবরাহে অনেক খরচ পড়ে। শুধু তাই নয়, ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলের লামডিং-বদরপুর রেলপথ সংস্কারের জন্য আট মাস ধরে এই রুট বন্ধ থাকছে। এই রেলপথটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছে। পাহাড়ী এলাকার পুরনো এই রেলপথকে সংস্কারের জন্য গত অক্টোবর থেকে রেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সে জন্য ত্রিপুরায় খাদ্যশস্য পাঠানোর জন্য ভারত বিকল্প পথ হিসেবে আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করে। আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য পরিবহনে বাংলাদেশ অনুমোদনও দিয়েছে। এই অনুমোদনের ফলে নদীপথ ও আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারত সরকার ত্রিপুরায় ইতোমধ্যেই খাদ্যশস্য পাঠিয়েছে। তবে ভারত থেকে এই খাদ্যশস্য পাঠানোর জন্য অনেক খরচ পড়ে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে চাল কিনে ত্রিপুরা অঞ্চলে সরবরাহ করলে একদিকে পরিবহন খরচ কমবে, অন্যদিকে দ্রুত উত্তর-পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলোতে এই চাল পাঠানো সম্ভব হবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে এই প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এখন পর্যাপ্ত চালের মজুদ রয়েছে। দেশে কোন খাদ্য ঘাটতিও নেই। সে কারণে বাংলাদেশ সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রফতানির বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করবে বাংলাদেশ। ত্রিপুরাকে ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পাঠানোর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছিলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে যে খাদ্যশস্য পাঠানোর বিষয়ে সম্মতি দেয়া হয়, সেটা কোন ট্রানজিট নয়। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান নৌ প্রটোকল অনুযায়ীই ওই খাদ্যশস্য পাঠানোর সম্মতি দেয়া হয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, ত্রিপুরার জনগণ বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। ১৯৭১ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের জনগণ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সে বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ছোট ছোট ট্রাকে করে খাদ্যশস্য পরিবহনের অনুমতি দেয়া হয়। এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ত্রিপুরার ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য বহনের বিষয়েও আলোচনা হয়। সে সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো ওই খাদ্যশস্য বহনের বিষয়ে সম্মতি দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
×