ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকমান্ডের নজর কাড়তে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অর্ধডজন নেতা মাঠে

চসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

চসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচন সামনে রেখে নগরবাসীর সমর্থন পেতে এবং একই সঙ্গে হাইকমান্ডের দৃষ্টি কাড়তে মাঠে নেমে পড়েছেন বড় দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নানা কৌশলে তৃণমূল পর্যায়ে জনমত গঠন করার চেষ্টায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অন্তত অর্ধডজন নেতা। ক্ষমতাসীন হওয়ায় আওয়ামী লীগে আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও কাদা ছোড়াছুড়ি এখনও না হলেও চলছে অন্য ধরনের এক প্রতিযোগিতা। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে যে তিনজনের নাম বেশি আলোচিত তাঁরা হলেনÑ সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসির নামটিও আলোচনায় রয়েছে, যদিও তাঁর তৎপরতা খুব বেশি দৃশ্যমান নয়। অপরদিকে বিএনপি থেকে এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলম, তবে পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায় গোছাতে বেশ তৎপর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তিন নেতার মধ্যে সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এর আগে একটানা সতের বছরের মেয়র। সে হিসেবে প্রচারের ক্ষেত্রে দলীয় ব্যানার মূলত তাঁরই। তবে নানা কারণে দলে এখন এই নেতার বিরুদ্ধবাদীর সংখ্যাও কম নয়। মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে রয়েছেন অঙ্গ সংগঠনসমূহের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। মেয়রপদে দলীয় সমর্থন লাভের ক্ষেত্রে তিনিই প্রধান দাবিদার বলে অভিমত তাঁর অনুসারীদের। অপরদিকে প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। নগরীর সকল ওয়ার্ডে তিনি মতবিনিময় চালিয়ে আসছেন বেশ কয়েক মাস ধরে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রায় প্রতিদিনই তাঁর উপস্থিতি লক্ষণীয়। এ জন্য অবশ্য তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কারণ দর্শাও নোটিসও পেয়েছেন। নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চউক চেয়ারম্যান অনুমতি ছাড়াই দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে চলেছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুচ ছালাম বলেন, দলীয় পরিচয় নয়, তিনি চউক চেয়ারম্যান হিসেবেই নগর উন্নয়নের বিষয়ে ৪১টি ওয়ার্ডের জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এগুলো কোন দলীয় প্রোগ্রাম নয় বলেই চউক চেয়ারম্যান দাবি করেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও বিসিবির পরিচালক আ জ ম নাছির উদ্দিনও মেয়রপদে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনিও তাঁর মত করে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন তৃণমূল থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত। তাঁর ছবি সংবলিত কিছু পোস্টার এবং ব্যানারও দেখা যায় নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে। এছাড়া তাঁর সমর্থনে রয়েছে ছাত্রলীগের একটি বড় অংশ। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী তিন নেতা মাঠে যে যার কৌশলে থাকলেও তাদের মধ্যে বিরোধ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ তিন নেতা দাবি করেন, নেতৃত্ব পর্যায়ে কোন বিরোধ নেই। নির্বাচনে দলীয় সমর্থন সকলেই পেতে চায়। তবে কেন্দ্র থেকে যাকে সমর্থন দেয়া হবে তাঁর পক্ষেই কাজ করবেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলম গতবার নির্বাচিত হন বিএনপির সমর্থনে। আওয়ামী ঘরানার মানুষ হিসেবে পরিচিত মনজুর আলম ছিলেন মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিষদের একজন কাউন্সিলর। ওয়ান ইলাভেনের সময় মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী কারাগারে থাকায় ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এতে মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরাগভাজন হন মনজুর আলম। ফলে অনেকটা অভিমানের কারণেই আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরে যান। বিগত চসিক নির্বাচনে বিএনপিতে যখন মেয়রপদে প্রার্থিতা নিয়ে সঙ্কট ও নেতাদের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয় তখন বিএনপি মনজুরকে কাছে টেনে নেয়। এতে দলের বিরোধ যেমন দূর হয় তেমনিভাবে দীর্ঘদিনের আওয়ামী ঘরানার লোক হিসেবে মনজুর আলম ভেতরে ভেতরে পুরনো দলের একাংশের সমর্থনও লাভ করেন। ফলে তিনি প্রায় ৯৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর এম মনজুর আলম বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনোনীত হন। এবারও বিএনপির সমর্থনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে তিনিই এগিয়ে রয়েছেন বলে প্রতীয়মান। তবে মাঠে শক্ত অবস্থান নিয়ে রয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন। নগরীর আনাচে-কানাচে তাঁর ছবি সংবলিত পোস্টার ও ব্যানার প্রচুর। ডাঃ শাহাদাত এবং তাঁর অনুসারীদের অভিযোগÑ এম মনজুর আলম বিএনপির সমর্থনে মেয়র হলেও তিনি পুরোপুরি বিএনপির মানুষ হতে পারেননি। এখনও তিনি আওয়ামী ঘরানারই রয়ে গেছেন। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে মেয়র মনজুরকে সঙ্গে পায়নি দল। ফলে দলের একজন পরীক্ষিত নেতাকেই মেয়রপদে বিএনপির সমর্থন দেয়া উচিত বলে অভিমত শাহাদাত অনুসারীদের।
×