ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধচলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ॥ ২২ দেশের ৩ আলোকচিত্রী কাজ করে চলেছেন

এশিয়ার সবচেয়ে বড় আলোকচিত্র উৎসব ফেব্রুয়ারিতে

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

এশিয়ার সবচেয়ে বড় আলোকচিত্র উৎসব ফেব্রুয়ারিতে

মোরসালিন মিজান ॥ খুব ভুল হবে না বললে, এখন যত হাত তত ক্যামেরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবদি চলে ছবি তোলার কাজ। নিজের চারপাশ, যাপিত জীবন, স্বপ্ন বাস্তবতা- সবই এভাবে উঠে আসে। আসছে। বহুকাল আগে ঠিক এ রকমটিই চেয়েছিলেন শহিদুল আলম। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী চাইতেন, ক্যামেরার যে শক্তি তা কাজে লাগাক মানুষ। যে বাস্তবতার কারণেই হোক, ঘটনাটি ঘটেছে। বাংলাদেশে ফটোগ্রাফি এখন খুব জনপ্রিয়। একই কারণে আগ্রহ বেড়েছে ছবি মেলা নিয়ে। দৃক গ্যালারির ও পাঠশালার এই আয়োজন একেবারে শুরুতেই সারা দুনিয়ার প্রশংসা কুড়িয়েছিল। প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর ঢাকায় আলোকচিত্রের আন্তর্জাতিক উৎসবটি আয়োজন করা হয়। প্রথম আসরটি বসেছিল ১৯৯৯ সালে। এবার বসছে অষ্টম আসর। দৃক গ্যালারি ও পাঠশালার আয়োজনে আগামী বছরের ২৩ জানুয়ারি উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ছবি মেলা ২০১৫-এর উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ছবি মেলার এবারের বিষয়বস্তুÑ অন্তরঙ্গ বা ইন্টিমেসি। বিষয়ের ওপর ২২ দেশের ৩০ জনের অধিক শিল্পী কাজ করেছেন। এসব কাজ নিয়েই ছবি মেলা ৮। চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এশিয়ার সবচেয়ে বড় আলোকচিত্র উৎসব সফল করতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রবিবার ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে গিয়ে দেখা যায়, ছবি মেলার জন্য আলাদা অফিস কক্ষ নেয়া হয়েছে। সেখানে শহিদুল আলমের নেতৃত্বে কাজ করছেন এক ঝাঁক আলোকচিত্রী। বয়সে প্রায় সকলেই তরুণ। কয়েক টিমে ভাগ হয়ে কাজ করছিলেন তাঁরা। লম্বা টেবিলে ছবি রেখে সেখানে ঝুঁকেছিল একদল। বাকিদের কেউ কম্পিউটারে, কেউ মুখোমুখি চেয়ার নিয়ে আলোচনার টেবিলে। এখানে বসেই আয়োজকরা যোগাযোগ করছেন আগ্রহী দেশগুলোর সঙ্গে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হলো আয়োজকদের সঙ্গে। জানা গেলো মেলার আদ্যোপান্ত। অংশগ্রহণকারী দেশ ॥ ছবিমেলায় বাংলাদেশসহ মোট ২২টি দেশ যোগ দিচ্ছে। থাকছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, ইউক্রেন, স্পেন, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ইতালি, ইরারন, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ইজিপ্ট, এস্টোনিয়া ও গুয়াতেমালা। ভেন্যু ॥ মোটামুটি গোটা শহরেই অনুষ্ঠিত হবে উৎসব। সেভাবেই এলাকা বেছে নেয়া হয়েছে। মেলার ভেন্যু হিসেবে থাকছে- দৃক গ্যালারি, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, আলিয়ঁস ফ্রসেজ, চারুকলার বকুলতলা, বিউটি বোর্ডিং, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, বৃত্ত আর্টস ট্রাস্ট, ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস ও নর্থবুক হল। ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী ॥ গ্যালারির বাইরেও ছড়িয়ে দেয়া হবে প্রদর্শনী। খোলা রাস্তা ও প্রধান সড়কে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আয়োজন। ১০টি রিকশাভ্যানে করে বিশেষ ব্যবস্থায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। রাজধানী ঢাকার ব্যস্ত রাজপথ, শপিংমল, অফিস, অলিগলি সর্বত্র ঘুরে বেড়াবে আলোকচিত্রে সাজানো ভ্যান। ভিডিও ইন্সটলেশন ॥ এবারের মেলায় নতুন সংযোজন ভিডিও ইন্সটলেশন। কাজটি নিয়ে আসছেন ইরানের বিখ্যাত শিল্পী শিরীন নিশাত। আজীবন সম্মাননা ॥ এবারের ছবিমেলায় আজীবন সম্মাননা দেয়া হবে পাঁচজনকে। এ তালিকায় আছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন। বাকি চারজনÑ ল্যারি টওয়েল, জেমস এস্ট্রিন, ডেনিস ডেইল্যাক্স ও ক্রিস্টিনা নূনেজ। সকলেই উপস্থিত থেকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। মেলায় তারকা মুখ ॥ ছবি মেলার অন্যতম আকর্ষণ বিদেশের বিখ্যাত আলোকচিত্রীদের উপস্থিতিতি। আয়োজকরা জানান, এবার মেলায় যোগ দিচ্ছেন ম্যাগনাম ফটোগ্রাফার ল্যারি টাওয়েল, নিউ ইয়র্ক টাইমস লেন্স ব্লগের সম্পাদক জেমস এসট্রিন, বাংলাদেশের বিখ্যাত আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন, ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার বিজয়ী ডেনিস ডাইলাক্স এবং স্প্যানিস আলোকচিত্রী ক্রিস্টিনা নূনেজ। মেলা চলাকালীন সময় এঁরা সকলেই নিজ নিজ কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন। আর্টিস্ট টক, পোর্টফোলিও রিভিউ পর্বে অংশ নেবেন তারা। বিভিন্ন কর্মশালারও সঞ্চালনা করবেন। উৎসব পরিচালকের কথা ॥ উৎসব পরিচালক শহিদুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা ফটোগ্রাফি ভালবাসি। ক্যামেরার চোখে চারপাশ দেখি এবং দেখাতে চাই। সে লক্ষ্যে ছবিমেলার আয়োজন। এখন আয়োজনটি বাংলাদেশের। সারা দুনিয়া এ সম্পর্কে জানে। খ্যাতিমান আলোকচিত্রীরা মেলায় যোগ দেয়ার জন্য নিজ থেকে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এটা গর্ব করার মতো ব্যাপার। প্রতিবারের মতো এবারও আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রীদের অসাধারণ সব কাজ দেখার সুযোগ পাবে বাংলাদেশের আলোকচিত্রপ্রেমীরা। এসব আলোকচিত্র আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত সামাজিক ইস্যু ও অসঙ্গতিগুলোকে চোখের সামনে তুলে ধরবে। পাশাপাশি ছবি মেলা বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগের সুযোগ করে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। কিউরেটরদের কথা ॥ প্রদর্শনীর কিউরেটর হিসেবে কাজ করছেন মুনেম ওয়াসিফ, এ.এস.এম রেজাউর রহমান এবং তানজিম ওয়াহাব। অতিথি কিউরেটর হিসেবে আছেন শিল্পী সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মাহবুবুর রহমান। রবিবার উৎসব কার্যালয়ে কথা হয় মুনেম ওয়াসিফ ও রেজাউর রহমানের সঙ্গে। তাঁরা জানান, পুরো কাজ পরিকল্পনা মতো এগোচ্ছে। মেলার প্রধান ভেন্যু শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা প্লাজার তৃতীয় ও চতুর্থ তলা সাজানো হবে মেলার ছবি দিয়ে। সে লক্ষ্যে সময় নিয়ে গ্যালারি ঘুরে দেখা হয়েছে। এখানে বর্তমানে এশিয়ান চারুকলা প্রদর্শনী শেষ হলেই গ্যালারি সাজানোর কাজ শুরু করা হবে। কিউরেটররা বিশেষভাবে বললেন পুরনো ঢাকার আয়োজনটির কথা। জানা গেল, বিউটি বোর্ডিং বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ও নর্থব্রুক হলকে মেলার অংশ করা হচ্ছে। পরিত্যক্ত প্রায় থিয়েটার ও লাইব্রেরিতে এক ধরনের নীরিক্ষাধর্মী কাজ করা হবে বলে জানান কিউরেটররা। কর্মশালা ॥ ছবিমেলা চলাকালীন সময় দশটির মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজকরা জানান, ‘শেপিং অ্যা ভিশন’ শীর্ষক কর্মশালা পরিচালনা করবেন ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর বিচারক এবং ভারতীয় বিজ্ঞাপনী আলোকচিত্রে তথ্যচিত্রের নন্দনতত্ত্বের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব স্বপন পারেখ। এই কর্মশালায় অংশ নিয়ে তরুণ আলোকচিত্রীরা আলোকচিত্রের ব্যাপারে তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। অপর কর্মশালা ‘দ্যা ফটোবুক: গোয়িং বিয়ন্ড দ্যা ফর্ম’ পরিচালনা করবেন হেইডেনস কারওয়াইয়ের টিউন ভ্যান ডার হেইডেন। আলোকচিত্রের বই তৈরির ওপর কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হবে। সব মিলিয়ে বড় আয়োজন। ছবি এবং ছবির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও অনেক কিছু এতে যোগ হবে। দেশী-বিদেশী আলোকচিত্রী ও আলোকচিত্রপ্রেমীদের অংশগ্রহণে মুখর হয়ে ওঠবে প্রতিটি দিন। আপাতত সে অপেক্ষা।
×