ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ছেড়ে দেয়া ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে ৭৬ টির ;###; কারখানার জায়গায় গড়ে উঠেছে আবাসিক প্রকল্প

বেসরকারী খাতে হস্তান্তরিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ॥ অধিকাংশেরই অস্তিত্ব নেই

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

বেসরকারী খাতে হস্তান্তরিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ॥ অধিকাংশেরই অস্তিত্ব নেই

রহিম শেখ ॥ বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া সরকারী কারখানার অধিকাংশেরই অস্তিত্ব নেই। সরকারের কাছ থেকে পানির দামে কিনে নিয়ে মালিকরা কারখানার জায়গা-জমি, স্থাপনা এবং মেশিন পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছে উচ্চ মূল্যে। অনেকে কারাখানার জমিতে গড়ে তুলেছে আবাসিক প্রকল্প। অধিকাংশ কারখানার নাম-নিশানা পর্যন্ত মুছে ফেলা হয়েছে। এমন একটি প্রেক্ষাপটেই সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, আর কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হবে না। বন্ধ ও অলাভজনক কারখানা লাভজনক করতে ১৯৯৩ সালে প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ড গঠন করার আগেই বিক্রি হয়ে যায় ২২২টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। পরবর্তী সময়ে সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। ২০০০ সালে বোর্ড ভেঙ্গে গঠন করা হয় প্রাইভেটাইজেশন কমিশন। নতুন কমিশন এসে অতীতে ছেড়ে দেয়া পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খুঁজে পায় মাত্র ৭৬টির অস্তিত্ব। এসব প্রতিষ্ঠানের ৩২টি বিক্রির পরই বন্ধ হয়ে যায়। বাকিগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কমিশন গঠনের পর বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হয় আরও ৭৭টি প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে নব উদ্যোমে আর কখনই ফিরে আসতে পারেনি ৩১টি প্রতিষ্ঠান। দায়-দেনা এবং লোকসানের ভারে বন্ধ হয়ে যায় আরও ১৩টি। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পানির দামে বিক্রি করা হয়েছিল অনেক প্রতিষ্ঠান। যারা কিনেছিলেন তারাও কথা রাখেননি। চালু করার শর্তে ‘প্রচুর জমিসহ’ এসব কারখানা কিনে নিলেও নতুন মালিকের অনেকেই তা করেননি। কারখানার জায়গায় আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আর কোন সরকারী কারখানা বেসরকারী খাতে ছাড়া হবে না। তিনি ওই অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের দেশে যে শিল্পগুলো বা জায়গাগুলো রয়ে গেছে এখনও; এখনো বহু ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা আর ইন্ডাস্ট্রি ব্যক্তিমালিকানায় বিক্রির পদক্ষেপ নেব না। বরং যেসব শিল্প কলকারখানা যারা ব্যক্তি মালিকানায় কিনে নিয়েছে চালু করবে বলে, কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যারা চালু করেনি তাদের হাত থেকে সেগুলো উদ্ধার করতে হবে। বিষয়টি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ‘মনে রাখার’ নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশ দিয়েছি এবং শিল্প মন্ত্রণালয়কে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই হয়ত শিল্প কিনেছে পানির দামে। কেনার পরে ওর যে কাঁচামাল, কেমিক্যালস, মেশিনারিজ বিক্রি করে, কেনার পয়সাটা উঠে গেলে কেউ আর শিল্প চালু করেনি। এ প্রসঙ্গে নাবিস্কো বিক্রির সময়ের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। আমি নিজে একসময় তেজগাঁও এলাকার সংসদ সদস্য ছিলাম। নাবিস্কো তখনকার টাকায় চার লাখ টাকায় বিক্রি হয়। ওই কেমিক্যালস আর কাঁচামাল বিক্রি করেই চার লাখ টাকার অনেক বেশি টাকা উঠে যায়। সেটা দিয়ে তারপর তারা ওই ইন্ডাস্ট্রি আর চালু করেনি। একইভাবে তেজগাঁওয়ের আরও কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে সেগুলো চালু করতে নেয়া উদ্যোগের কথা কর্মকর্তাদের মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তার সরকারই আদমজী চালু করে। পাশাপাশি ওই কারখানার পাশে ফাঁকা জায়গায় পাটজাত পণ্যের কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এ বিষয়ে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে অনুযায়ীই কাজ করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের নিজস্ব কোন ভাবনা নেই। জানা গেছে, ২০০০ সালে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন গঠনের পর হতে মোট ৭৭টি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫৭টি কারখানা সম্পূর্ণ বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল; ২০টি কারখানায় নেয়া হয়েছিল অংশীদার ভিত্তিতে। ২০০৯ সালে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সমন্বয়ে ৫টি দল ৭৫টি প্রতিষ্ঠানের ওপর সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২টি প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা সঠিক না থাকায় সমীক্ষা সম্পন্ন করতে পারেনি কমিশন। সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০১০ সালে তৈরি করা একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৭টি প্রতিষ্ঠান বিক্রি করা হয়েছিল ৭৫০ কোটি টাকায়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪৪টি প্রতিষ্ঠান লাভজনক থাকলেও অকেজো যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার অযুহাতে ৩১টি প্রতিষ্ঠান চালু করেনি মালিকরা। প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী কয়েকটি বন্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। বেসরকারীকরণের পূর্বে যেসব তথ্য দেয়া ছিল পরে সেসব নাম-ঠিকানাও পাল্টে ফেলা হয়েছে। কমিশনের সমীক্ষা প্রতিবেদনে জানা যায়, বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৪.৯১ একর জমিসহ কিশোরগঞ্জ টেক্সটাইল মিলস বিক্রি করা হয় প্রায় ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকায়। সিরাজগঞ্জের সার্ভিস ফ্যাসিলিটিজ সেন্টার বিক্রি করা হয় ১০ কোটি ৫ লাখ টাকায়, জমির পরিমাণ ২.৬২ একর। গাজীপুরে অবস্থিত সাতরং টেক্সটাইল মিলের ৪.৪০ একর জমি কত টাকায় বিক্রি হয়েছে তা সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়নি। কোহিনুন ব্যাটারি ম্যানুফ্যাকচারিং কোং লিমিটেডের ৯.৭১৫ একর জমি বিক্রি করা হয় ২১ কোটি ৪৭ লাখ টাকায়। টঙ্গী এলাকার মেটালেক্স কর্পোরেশন লিমিটেড বিক্রি করা হয় ২ লাখ টাকায়, জমির পরিমাণ ১.৯৯ একর। ২ একর জমিসহ চট্টগ্রামের দোশা এক্সট্রাকশন বিক্রি করা হয় ১৩ লাখ টাকায়। মুন্সীগঞ্জের বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ বিক্রি করা হয় ১২ কোটি ৫ লাখ টাকায়, জমির পরিমাণ ৩.৩৮ একর। খুলনা নগরীর ফিরোজ আটা, ডাল মিলস বিক্রি করা হয় ৪৩ হাজার টাকায়, জমির পরিমাণ ০.১৪ একর। খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ ৪.৮৮ একর জমিসহ বিক্রি করা হয় ৯ লাখ ৬ হাজার টাকায়। আশরাফিয়া অয়েলমিলসের ১.১৯ একর জমিসহ বিক্রি করা হয় ৮ লাখ ৫২৫ হাজার টাকায়, বাজুয়ায় অবস্থিত ফিশ এক্সপোর্টের ৮ একর জমিসহ বিক্রি করা হয় ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকায়, দৌলতপুরে অবস্থিত ম্যানগ্রোভ টেনিন প্লান্টের ১.১৮ একর জমিসহ বিক্রি করা হয় ৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকায়। ঠাকুরগাঁওয়ের বিজি বাংলা রাইস মিলস বিক্রি করা হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকায়, জমির পরিমাণ ৪.১৬ একর। ৬.১৭ একর জমিসহ নারায়ণগঞ্জের কর্নফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড বিক্রি করা হয় ১০ কোটি ৬ লাখ টাকায়, ১৪.৯৮ একর জমিসহ বাওয়া জুট মিলস্ বিক্রি করা হয় ৫ কোটি ৭ লাখ টাকায়, ৬.১৭ একর উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি লিমিটেড বিক্রি করা হয় ৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকায়। সরকারী শেয়ারের মূল্য দেখিয়ে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার ইস্টার্ন ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১৭.১২ একর জমিসহ সরকারী শেয়ারের মোট বিক্রি মূল্য ধরা হয় ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়, ঢাকা ভেজিটেবলস অয়েল মিলস্ লিমিটেডের ১৪.২৩ একর জমিসহ বিক্রি করা হয় ২৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকায়, পোস্তগোলার ইগল বক্স এ্যান্ড কার্টন ম্যানুফ্যাকচারিং কোং লিমিটেডের ৮.০৭ একর জমিসহ বিক্রি করা হয় ২০ কোটি টাকা। এর আগে ১৯৯৩ সালে বেসরকারীকরণের মাধ্যমে বন্ধ ও অলাভজনক কারখানা লাভজনক করতে গঠন করা হয় প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড। ওই বোর্ড গঠনের আগেই বিক্রি হয়ে যায় ২২২টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। পরবর্তী সময়ে সবমিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সমীক্ষাদল প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৭৬টি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। বাকিগুলোর পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা খুঁজে পায়নি সমীক্ষা দল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের এক উর্ধতন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানার জায়গা-জমি, স্থাপনা এবং মেশিন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন উচ্চ মূল্যে। অথচ পানির দামে কিনেছিলেন সেসব প্রতিষ্ঠান। নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করে অনেকে কারখানার জমিতে গড়ে তুলেছেন আবাসিক প্রকল্প। বিনিয়োগ বোর্ড গঠনের পূর্বে বিক্রি হয়ে যাওয়া প্রায় চার শ’র বেশি সরকারী প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, সমীক্ষাকৃত ৭৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪টি প্রতিষ্ঠান এখন চালু আছে এবং বাকি ৩২টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ২০টি প্রতিষ্ঠান লাভজনক অবস্থানে এবং ১৬টি প্রতিষ্ঠান লোকসানে চলছে। তবে ৪০টি প্রতিষ্ঠানের লাভ/লোকসান সম্পর্কিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সমীক্ষাকৃত ৭৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-পাবনার রাজাপুরে অবস্থিত ক্যালিকো কটন মিলস, চট্টগ্রামের দেওয়ানহাটে অবস্থিত ঈগল স্টার টেক্সটাইল মিলস, ফৌজদারহাটে অবস্থিত জলিল টেক্সটাইল মিলস, কালুরঘাটে চট্টগ্রাম জুট ম্যানুফেকচারিং কোং, নাসিরাবাদে ক্রিসেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, নিউ এরা স্টীল, নিউ এরা ট্রেডিং কোম্পানি, কাট্টলীতে গোল্ডেন বেঙ্গল টোব্যাকো, মালিক রি-রোলিং মিলস, সিনো বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিজ, টেরিবাজারে চট্টগ্রাম এনামেল এ্যান্ড এ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কার্স, সীতাকু-ে সুলতানা জুট মিলস, এশিয়াটিক কটন মিলস, বান্দরবানের মেসার্স সাত্তার স্যাচ ওয়ার্কার্স, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মাওলা টেক্সটাইল মিলস, মুড়পাড়ায় এ্যালাইড জুট মিলস, বন্দরে অবস্থিত সাওয়ার জুট মিলস, নবাব আসকারী জুট মিলস, ঢাকার ইমামগঞ্জে অবস্থিত দুলিচাঁদ ওমরলাল অয়েল মিল, শ্যামপুরে চান টেক্সটাইল মিলস, তেজগাঁও এলাকায় অবস্থিত রহিম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, রাজবাড়ির গোয়ালন্দ টেক্সটাইল মিলস, বগুড়ার নুরানী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, ভার্জিনিয়া টোব্যাকো, কুষ্টিয়ার মোহিনী টেক্সটাইল মিলস, কুষ্টিয়া টেক্সটাইল, খুলনার বাংলাদেশ ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি, কুমিল্লার হালিমা টেক্সটাইল, নরসিংদীর কাউনিয়ায় অবস্থিত আলীজান জুট মিলস, রাজশাহীর শালবাগানে অবস্থিত আজিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরি, রংপুরের আলমনগরে অবস্থিত রাহাতিন ইন্ডাস্ট্রিজ। বোর্ড গঠনের পূর্বে বিক্রি হয়ে যাওয়া গাজীপুরের কালিগঞ্জের ন্যাশনাল জুট মিলস লিমিটেডের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজি ছায়েদুল আলম বাবুল জনকণ্ঠকে বলেন, ১৯৭১ সালে উৎপাদন শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সঙ্কটে আমরা ২০১১ সালে বন্ধ করে দেই। বর্তমানে ওই জায়গায় অন্য একটি প্রতিষ্ঠান চালু আছে বলে তিনি জানান। ৬৫.৩৯ একর জমিসহ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয়মূল্য কত জানতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। এদিকে ২০১১ সালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের ওপর সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের আওতাধীন ১৫টি, বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের ১টি, বাংলাদেশ কেমিক্যানর ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের ৯টি, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের ৪টি ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের ১০টি প্রতিষ্ঠান। সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১টি প্রতিষ্ঠান চালু আছে, ৫টি প্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে চালু থাকলেও দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে ১৩টি প্রতিষ্ঠান। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪টি প্রতিষ্ঠানে লোকসানের পরিমাণ ৩ হাজার ৩৪ কোটি ২ লাখ টাকা। বাকি ৪টি প্রতিষ্ঠানের লাভের পরিমাণ ১১৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ১টি প্রতিষ্ঠান সার্ভিস চার্জে চলছে। সমীক্ষা প্রতিবেদনে দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানসমূহ চালুর বিষয়ে একটি মন্তব্য উল্লেখ করা হয়। বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-দিনাজপুর টেক্সটাইল মিলস্ লি:, নারায়ণগঞ্জের চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্ লি:, টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস্, চট্টগ্রামের আমিন টেক্সটাইল মিলস্, দি ন্যাশনাল কটন মিলস্, আর আর টেক্সটাইল মিলস্, খুলনা টেক্সটাইল মিলস্, ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলস্, ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা, ঢাকা লেদার কোম্পানি, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস্, রাঙ্গামাটির কর্ণফুলি রেয়ন এ্যান্ড কেমিক্যালস, চট্টগ্রাম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স। প্রাইভেটাইজেশন কমিশন সূত্রে জানা যায়, বেসরকারীকরণে গতি আনতে কমিশনকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয় সরকারের গত মেয়াদে। সে অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠান বিক্রির কাজ শুরু করে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন। তবে গত ছয় বছরে কোন কারখানা বেসরকারী খাতে বিনিয়োগে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। কাজ না থাকলেও কমিশনের জন্য এখনও বছরে ৫ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে- এ রকম পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগ বোর্ড এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশন একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একীভূতকরণ প্রক্রিয়া এখন কোন্ পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে। খসড়া নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বিগত দিনে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারেনি বলেই বিনিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে একীভূত করা হচ্ছে, এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাইভেটাইজেশন কমিশন কাজ করতে পারেনি, আমি তো এসব বলতে পারব না। তবে আমি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ছিলাম, সে কারণে যতটুকু জানি, বিগত দিনে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় প্রাইভেটাইজেশনের বিরোধিতা করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মির্জা আবদুল জলিল জানান, কমিশনকে কিছু না জানিয়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেরা বিক্রি করেছে। এর জন্য কমিশন কোনভাবেই দায়ী নয় বলে তিনি জানান।
×