ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানে মৃত্যুদন্ড পুনর্বহাল

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

পাকিস্তানে মৃত্যুদন্ড পুনর্বহাল

মঙ্গলবার পেশোয়ারে জঙ্গী তালেবানি তাণ্ডবের তিন দিনের মাথায় দুই জঙ্গীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এদের একজন ২০০৯ সালে সেনা সদর দফতরে হামলা এবং অপরজন ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন। দুজনই সাবেক সেনাসদস্য। সম্প্রতি পাকিস্তানে মৃত্যুদণ্ডের স্থগিতাদেশটি তুলে নেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। স্থগিতাদেশটি তুলে নেয়ার পর প্রথমবারের মতো মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হলো। দেশটির সেনাপ্রধান ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিন হাজারের বেশি জঙ্গীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবি জানানোর পরই ছয় জঙ্গীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই ত্বরিত তৎপরতায় এটাই প্রমাণিত হলো যে মৃত্যুউপত্যকা পাকিন্তান এখন থেকে জঙ্গীদের ব্যাপারে চরমপন্থা অবলম্বন করবে। বিশ্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব যে বহু দেশই মৃত্যুদণ্ডের বিধান স্থগিত করার পর আবার সেই বিধানটি প্রবর্তন করেছে। ইউরোপ এবং এশিয়ার অনেক দেশে প্রাণদণ্ড প্রথা রহিত হয়েছিল, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই প্রথা আবার পুনর্প্রতিষ্ঠা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে ১৯৪১ সালে প্রাণদণ্ড প্রথা রহিত করার এক দশকের ভেতরেই প্রথাটি পুনর্বহাল করে। ১৯৫৭ সালে সিংহলে মৃত্যুদণ্ড স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়। কিন্তু যিনি এই মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছিলেন সিংহলের (শ্রীলঙ্কায়) সেই প্রধানমন্ত্রী মৃত্যুদণ্ড বাতিল ঘোষণার পরেই খুন হন। ফলে সিংহলে বাতিল ঘোষণার দুই বছরের মধ্যেই ১৯৫৯ সালে আবার মৃত্যুদণ্ডকে বহাল রাখার আইন পাস করা হয়। বাইবেলে প্রায় ৩০টি অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধানের উল্লেখ আছে। ১৮০০ সালের আগে ব্রিটেনে প্রায় ২০০টি অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। মুসলিম শরীয়া আইনে মৃত্যুদণ্ড একটি বহুল প্রচলিত শাস্তি। শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে নানা সময়ে নানা তর্কবিতর্ক হয়ে থাকে। খোদ জাতিসংঘসহ পৃথিবীর বহু দেশ মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি রহিত করার ব্যাপারে সোচ্চার। ২০০৭ সালের ১৫ নবেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৬২/১৪৯ রেজুলেশনের মাধ্যমে যে সকল সদস্য রাষ্ট্র এখনও শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বহাল রেখেছে তাদের ক্রমশ এই বিধান থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস করে। ইতিহাসে সর্বপ্রথম মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত করা হয় আমেরিকার মিশিগান রাষ্ট্রে ১৮৪৬ সালে। এরপর ১৮৬৭ সালে ভেনিজুয়েলা এবং ১৮৭০ সালে নেদারল্যান্ডস সেই পথ অনুসরণ করে। ১৯৭০-এর দশকে সারাবিশ্বে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলুপ্ত করার হিড়িক পড়ে গেলেও এখনও বিশ্বের প্রায় ষাটটির মতো দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু আছে। এর পক্ষে জোরালো যুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, এই শাস্তি শুধু অপরাধীকেই নয়, উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে এটা সম্ভাব্য অপরাধীদের সমজাতীয় অপরাধকর্ম থেকে বিরত রাখে। হত্যার অভিপ্রায় নিয়ে অপরাধী ইচ্ছাকৃতভাবে খুন করলে মৃত্যুদণ্ডই তার একমাত্র প্রাপ্য শাস্তিÑ এমনটাই বিবেচনা। বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় খুব সামান্যই। নিকট অতীতে একাত্তরের মানবতাবিরোধী গর্হিত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড প্রদানের একাধিক রায় ঘোষিত হলে কোন কোন আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী সংগঠনের বিরোধিতা ও সমালোচনা এ দেশের কোটি মানুষের অনুভূতির ওপর ছিল আঘাততুল্য। বাংলাদেশও সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের অপচ্ছায়ার নিচে রয়েছে। সেক্ষেত্রে মানববিরোধী, মানবতাবিধ্বংসী কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিচারের রায়ে সামান্যতম অনুকম্পা প্রদর্শনের কোন সুযোগ নেই- যেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
×