ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোন বিশেষ দলকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করেনি যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪

কোন বিশেষ দলকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করেনি যুক্তরাষ্ট্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখানে কোন্ দল সরকার গঠন করবে তা দেশের জনগণই ঠিক করবে। শনিবার রাজধানীর আমেরিকান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজেনা এসব কথা বলেন। এছাড়া আগামীতে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক আরও গভীর, শক্তিশালী ও বিস্তৃত হবে জানান তিনি। ড্যান মজেনা আরও জানান, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতীতের অবস্থানেই রয়েছে। তিন বছর বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর বিদায় নিচ্ছেন ড্যান মজেনা। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক, রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা বলেন, বাংলাদেশে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এটা কোন দেশে যুক্তরাষ্ট্র করেও না। বাংলাদেশে সরকার কোন দল গঠন করবে তা এদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান মনোভাব জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিবৃতি দিয়ে অবস্থান তুলে ধরে। আমাদের সেই অবস্থান এখনও রয়েছে বলে তিনি জানান। অতীতের চেয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের আরও উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে ড্যান মজেনা বলেন, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও গভীর, বিস্তৃত ও শক্তিশালী হয়েছে। আগামীতে এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী ও গভীর হবে বলেও তিনি জানান। ড্যান মজেনা বলেন, আমি চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে। এ সম্পর্কের লক্ষ্য ছিল এদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও জনগণের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও জনগণের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করা। আমি সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। এই সময়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারি সংলাপ হয়েছে, নিরাপত্তা সংলাপ হয়েছে। টিকফা চুক্তি সই হয়েছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতাও জোরদার হয়েছে। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে উল্লেখ করে একে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগারের’ সঙ্গে তুলনা করেন ড্যান মজেনা। তিনি বলেন, এই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চারটি পা। প্রথমটি পোশাক শিল্প। এ শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। দ্বিতীয় পা হল চামড়া শিল্প। চামড়া শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বের যে কোন দেশকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। তৃতীয় পা হলো ওষুধ শিল্প। অল্প কিছুদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক রফতানি হবে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ। আর চতুর্থ পা হলো তথ্যপ্রযুক্তি খাত। বিশেষ করে এ দেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা সফটওয়ার তৈরি করে সারা বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। সফটওয়ার রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরে পোশাক খাতের কর্মপরিবেশে অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। এই উন্নয়ন ধরে রাখতে হবে। আর যেন কোন রানা প্লাজা বা তাজরীন দুর্ঘটনা না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মজেনা বলেন, কোন মানদ-েই বাংলাদেশ এখন আর গরিব রাষ্ট্র নয়। তবে অবকাঠামো গড়ে তোলা, দুর্নীতি দমন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং পোশাক খাতের অবস্থান ধরে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের উন্নয়নে শিক্ষা বিপ্লব দরকার, মানসম্মত শিক্ষাই দেশকে আরও এগিয়ে দেবে বলেও মন্তব্য করেন মজেনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই কৃষি খাতে বিপ্লব করেছে। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রফতানি করছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল অর্জন বলে তিনি মন্তব্য করেন। ড্যান মজেনা বলেন, আমি বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছি। বাংলাদেশ সত্যিই একটি সুন্দর দেশ। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরিসীম। এই ভ্রমণের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার আমাকে সহযোগিতা করেছে। সেজন্য আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বাড়ানোর জন্যও আমি কাজ করেছি। এই কাজে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। আমি এজন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। বিদায় নেয়ার আগে ড্যান মজেনা বলেন, বাংলাদেশ ভৌগোলিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক করিডর এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। রবিবার বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা। বিদায়ের আগে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বিদায়ী বৈঠক করেছেন তিনি।
×