ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শীত আসতেই রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সঙ্কট ॥ বিপাকে নগরবাসী

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪

শীত আসতেই রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সঙ্কট ॥ বিপাকে নগরবাসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীত আসতেই রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সঙ্কট শুরু হয়েছে। এতে অল্প আঁচে রান্না সারতে বিপাকে পড়ছেন গৃহিণীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে আস্তে আস্তে চাপ বাড়ছে। কোন কোন এলাকায় গ্যাস আসছে রাত ১০টার পর। এতে সকাল এবং দুপুরের রান্না করতে বিপাকে পড়ছেন নগরবাসী। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বলছে শীতে গ্যাসের চাহিদা এমনিতে ২০ ভাগ বেড়ে যায়। এর ওপর তিতাসের চাহিদা এবং সরবরাহে অন্তত ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটের দৈনিক ঘাটতি রয়েছে। শীতে তাপমাত্রা কমে গেলে পাইপলাইনে গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট জমে যায়। যাতে সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। যদিও তিতাস বলছে গত বছরগুলোর চেয়ে এবার সরবরাহ ভাল থাকবে। তবে পাইপলাইনের প্রান্তসীমায় বসবাসকারী গ্রাহককে সঙ্কটে ভুগতেই হবে। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি সূত্র বলছে, এবার শীতে তিতাস গ্যাসের দৈনিক চাহিদা সর্বোচ্চ দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ এক হাজার ৫৫০ থেকে এক হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে চহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি থাকছে দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। যদিও গত বছর শীতে সরবরাহ করা হতো এক হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এবার সেখানে দৈনিক ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট অতিরিক্ত সরবরাহ করা হলেও সঙ্কট থেকেই যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রাজধানীর রামপুরা, মগবাজার, বনশ্রী, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা, যাত্রাবাড়ী, টিকাটুলি, গোপীবাগ, ধলপুর, ধোলাইরপাড়, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, নবীনগর, মুরাদপুর, কুতুবখালী, জিয়া সরণি, মৃধাবাড়ী, কাজলা, ভাঙ্গাপ্রেস, মীর হাজীরবাগ, শহীদ ফারুক রোড, টিপু সুলতান রোড, নবাবপুর রোড, নারিন্দা ফুলবাড়িয়া, বিবির বাগিচা, দক্ষিণ মুগদা, বনগ্রাম, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, স্বামীবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলায় তীব্র গ্যাসের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। রাজধানীর রামপুরার বাসিন্দা আফরোজা খানম জানান, সকাল ৯টার পরচুলা জ্বলে না। দুপুরের রান্না করতে হয় ভোর থেকে। সারাদিন গ্যাস থাকে না বললেই চলে। গ্যাস আসে বিকেলের দিকে। রামপুরার বনশ্রী এলাকায় গ্যাসের সঙ্কট আরও তীব্র। সেখানে কোন কোন দিন সকালে গ্যাস যায় আর রাত ১০টার পর গ্যাস আসে। ফলে দিন ভরই গ্যাসবিহিন থাকতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের। বনশ্রীর বাসিন্দা তুহিন রহমান জানান, তার বাসায় সকালে গ্যাস যায় আর আসে রাতে। এর মধ্যে আর কোন রান্না করাই সম্ভব হয় না। দীর্ঘদিন ধরেই এই সঙ্কট চললেও উত্তলনের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বার বার তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তিনি বলেন, গ্রীষ্মে বিদ্যুত সঙ্কট আর শীতে বিদ্যুত গ্যাস এই নিয়ে সময় পার করতে হয় আমাদের। তিতাসের একজন কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর কোন কোন এলাকার পাইপলাইন অত্যধিক পুরনো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জং ধরে এই সব পাইপলাইন নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর বারবার ড্রিল করে পাইপলাইন থেকে সংযোগ নেয়ায়ও পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব পাইপলাইন পুনরায় বসানো প্রয়োজন হলেও তা বসানো হচ্ছে না। যাতে গ্যাসের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শীত ছাড়াও স্বাভাবিক সময়ে এসব পাইপলাইনে গ্যাসের সঙ্কট সৃষ্টি হয়। পুরান ঢাকার বাসিন্দা (আদালত পাড়া) আলিম বিশ্বাস জানান, সকাল থেকেই তার বাসায় গ্যাস থাকে না। প্রতিদিন রীতিমতো যুদ্ধ করে রান্না করতে হয়। এটা শীতে মোটামুটি কয়েক বছরের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেন এই সঙ্কট সমাধান করা হয় না বুঝি না। জানতে চাইলে তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী মীর মশিউর রহমান শনিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, গত বারের তুলনায় আমাদের এবারের অবস্থা ভাল। আমরা প্রতিদিন ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ বেশি পাচ্ছি। তারপরও আমরা শীতের সঙ্কট সামাল দিতে কনডেনসেট জমে এমন পয়েন্টগুলো সার্ভিসিং করেছি। যদিও এরপরও লাইনের প্রান্তসীমায় অবস্থান করছেন এমন গ্রাহকদের সমস্যা হবে কিছুটা।
×