ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দালাল চক্রের কারণে মালয়েশিয়ায় শ্রম বাজার হারাতে হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪

দালাল চক্রের কারণে মালয়েশিয়ায় শ্রম বাজার হারাতে হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় সরকারীভাবে কর্মী নিয়োগ আবার স্থগিত রেখেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। অবৈধ অভিবাসীর অনুপ্রবেশের হার বেড়ে যাওয়ায় দেশটির কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো না গেলে বাজারটি হারাতে হতে পারে। খোদ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অনুপ্রবেশের কারণে কোম্পানিগুলো কর্মীর চাহিদাপত্র দিচ্ছে না। দীর্ঘ সময় বাজারটি বন্ধ থাকার পর গত বছর বাজারটি খুলে দেয় মালয়েশিয়া। জি টু জি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করার শর্তে বাজারটি খুলে দেয়। কয়েক ধাপে তারা ১০ হাজার ৪শ’ কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। এক্সসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) র‌্যান্ডম সিলেকশনের মাধ্যমে ১০ হাজার ৪ কর্মী বাছাই করে। এখান থেকে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পেরেছেন। বাকিরা অপেক্ষায় রয়েছেনÑকবে তাঁরা মালয়েশিয়া যেতে পারবেন। এ অবস্থায় মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই কর্মী নিয়োগ স্থগিত করে দিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার অভিবাসীদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপদ অভিবাসনের জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সম্পূর্ণ অভিবাসন কার্যক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে করা হচ্ছে। কর্মীদের স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়েছে। এই কার্ড ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি অনলাইনে ভিসা যাচাইয়ের সুযোগ থাকার কারণে জাল ভিসায় বিদেশ যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়েছে। অভিবাসন খরচ কমিয়ে আনা এবং নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান সরকার জি টু জি পদ্ধতিতে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে বিদেশে কর্মী পাঠাচ্ছে। নিরাপদ অভিবাসনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনার জন্য বিএমইটিতে বিদেশ গমনেচ্ছু অভিবাসীদের জন্য ডাটাবেজ স্থাপন করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে বলেন, এত কিছুর পরও অবৈধ পথে দালালদের মাধ্যমে হাজার হাজার কর্মী মালয়েশিয়া প্রবেশ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে কর্মীদের মালয়েশিয়া নিয়ে যাচ্ছে দালাল চক্র। এই চক্রের কারণে দেশটির তৈরি করা বাজার আবার হারাতে হতে পারে। জনশক্তি রফতানিকারক সংগঠন বায়রার নেতৃবৃন্দের কাছে সহযোগিতা চান অবৈধ পথে যাতে কোন কর্মী না যেতে পারেন। এ কাজের সঙ্গে যদি কোন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকেনÑ তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী। এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় একটি সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার সরকার অবৈধ কর্মীদের পাঁচ দফা সুযোগ দেয়ার পরও যারা বৈধ হতে পারেনি এ দায় তাদেরই নিতে হবে। সরকার এ দায় নেবে না। তবে যদি কোন বৈধ কর্মী পুলিশের হাতে আটক হন সেক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার। যাঁরা অবৈধ হিসাবে পুলিশের হাতে আটক হবেন তাঁদের একটা না একটা শাস্তি পেতেই হবে। দেশটির আইনে অবৈধদের জেল জরিমানা হতে পারে। অথবা শুধু জেল হতে পারে। আবার জরিমানা হলে সেই টাকা পরিশোধ করে নিজ খরচে দেশে ফিরতে হবে। এখানে মন্ত্রণালয়ের কোন কিছু করার নেই। সূত্র জানিয়েছে, বৈধ সময় পার হয়ে গেছে এ বছরের গোড়ার দিকে। এখন যাঁরা সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। গত কয়েক দিন ধরে রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ মালয়েশিয়াজুড়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। দেশটির অভিবাসন বিভাগ, পুলিশ ও পিপলস ভলান্টিয়ার কর্পসের (রেলা) কয়েক হাজার সদস্য এই অভিযানে অংশ নিয়েছে। ইন্দোনেশীয়, মিয়ানমারের, কম্বোডিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, চীন, নাইজেরিয়া ও থাইল্যান্ডের নাগরিক। অবৈধ অভিবাসীদের আটক করতে পুলিশের কয়েকটি টিম করেছে দেশটির সরকার। অবৈধ কর্মীদের সেখানে দেখা যাবে সেখান থেকেই তাদের আটক করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, বাজার মহাসড়ক, দোকান এবং জনসাধারণের চলাচল আছে এমন সব জায়গায় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ২০১১ সালের আগস্টে ৬-পি প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত ফিঙ্গারপ্রিন্ট করে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু অনেকে নাম রেজিস্ট্রেশন করলেও দালাল বা এজেন্টেদের খপ্পরে পড়ে হাজার হাজার কর্মী কাজের অনুমতি পাননি। মালয়েশিয়ায় প্রায় ২ লাখ ৬৮ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী ছিল। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এসব কর্মীদের বৈধ হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। বর্তমানে ৫ লাখ বাংলাদেশী অভিবাসী মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন পেশায় কমরত রয়েছেন। বাংলাদেশী কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার কর্মী অবৈধ থাকতে পারে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এই কর্মীরা বিভিন্ন দালাল চক্রের হাতে পড়ে বৈধ হওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করেছে। সূত্র জানিয়েছে, চূড়ান্তভাবে তালিকাভুক্ত ১০ হাজার ৪শ’ কর্মীর মধ্যে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পেরেছেন। বাকিদের বেলায় বার বার দেশটির কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে যাচ্ছে। ফলে বাকি কর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। এই কর্মীরা আদৌ মালয়েশিয়া যেতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। এবার খোদ মন্ত্রী এমন আশঙ্কা প্রকাশ করায় তাঁরা আরও হতাশ হয়ে পড়েছেন। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যাচ্ছে না। এজন্য মালয়েশিয়ার বাজারে আবারও চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
×