ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বনদস্যুদের অত্যাচারে অফিসটি গুটিয়ে নেয় বন বিভাগ

সুন্দরবনের মৃগমারী ফাঁড়ি ॥ এখন সাপের বাড়ি

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪

সুন্দরবনের মৃগমারী ফাঁড়ি ॥ এখন সাপের বাড়ি

বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে ॥ কিং কোবরা, বক্ষাক কোবরা, খয়ে গোফরা, গ্রীন ভাইপার সুন্দরবনের বিষধর সব সাপের নাম। এরকম সাপরাই নাকি গত ৪ বছর ধরে দখল করে রেখেছে সুন্দরবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ মৃধামারী টহল ফাঁড়িটিকে। সম্প্রতি সুন্দরবন এলাকা ঘুরে এর প্রমাণও পাওয়া যায়। মংলার জয়মনি ফরেস্ট ঘাট এলাকা থেকে বাঁয়ে শ্যালা নদীর প্রায় এক নটিকেল মাইল দূরে গেলে বন বিভাগের এই পরিত্যক্ত অফিসটির সন্ধান মিলবে। যার চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে লতাপাতা আর বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি। বন বিভাগের চৌচালা এ অফিসকে স্থানীয়রা ‘সাপের বাড়ি’ বলে জানেন। ট্রলার চালক রুস্তুম আলী জানান, আনুমানিক ৩০ বছর আগে মৃগামারী টহল ফাঁড়িটি করা হয়। প্রথমে এটি গোল পাতার তৈরি ছিল। এক দশক আগে টিন দিয়ে মোড়ানো হয়। কিন্তু বিগত তিন থেকে চার বছর আগে বনদস্যু জুলফু বাহিনীর অত্যাচারে অফিসটি গুটিয়ে নেন বন বিভাগ। এরপর থেকে জায়গাটি পরিত্যক্ত থাকায় ভেতরে বাসা বেঁধেছে বিষধর সাপ। এটি এখন সাপের আস্তানা বলে পরিচিত। এ ব্যাপারে সুন্দরবনের প্রাণী বিশেষজ্ঞ আঃ রব বলেন, সুন্দরবনে পরিত্যক্ত কোন বন অফিস থাকলে সেখানে সাপ যাবে না এটা অস্বাভাবিক। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ এটা তাদের এলাকা এবং তাদের বাসস্থান। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমির হোসাইন চৌধুরী জানান, গত তিন-চার বছর ধরে মৃগামারী টহল অফিসটি কিছু কৌশলগত কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার আগেই অফিসটি বন্ধ হয়েছে। তাই বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে শ্যালা নদীর আন্দারমানিক স্থানে আরেকটি টহল অফিস করা হয়েছে। সেখান থেকে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। বাঘসহ নানান পশু-পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে শ্যালা নদীর মৃগামারী খালের আশপাশের এলাকাটি ভূমিকা রাখে, তাই অফিস বন্ধ থাকাতে বাঘ, কুমির এবং হরিণ নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিসটি বন্ধ করাতে এখানে এখন বাঘ দেখা যায়। তা না হলে এখানে বাঘ আসত না। বিষধর সাপের বিষয়ে আমির হোসাইন বলেন, সাপ তো রয়েছেই। তবে অফিস বন্ধ করার ক্ষেত্রে এটিই মূল কারণ নয়। আমাদের লোকবলের অভাব রয়েছে। বর্তমানে পূর্ব বিভাগীয় সুন্দরবনের আশপাশের নিরাপত্তায় ৭৫-জন গার্ডসহ ২৩০ জন বোটম্যান রয়েছে। যাদের এই পুরো এলাকার নিরাপত্তা দিতে হয়। অফিস বেশি হলে পাহারা দিতে কষ্টসাধ্য হয়। তাই বনের নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে অফিস কমানো হয়েছে। তবে স্থানীয়রা জানান, যদিও পূর্ব বিভাগীয় সুন্দরবন রক্ষায় এই অফিস করা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় শোনা যেত জলফু বাহিনীর সদস্যরা এই স্থানে এসে ফরেস্টের লোকদের জিম্মি করে এই অফিসে রাতযাপন করত। এছাড়া দস্যুরা বন বিভাগের কর্মীদের ওপর অত্যাচার করত। পরবর্তীতে বন বিভাগ কৌশলগত কারণে অফিসটি বন্ধ করে দেয়। মৃগামারী পয়েন্টে অবস্থিত বন বিভাগের এই অফিসটির কার্যক্রম সচল থাকলে শ্যালা নদীতে চলাচলরত জাহাজগুলোকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়াসহ স্থানীয় জেলেদের নিরাপত্তায় গুরুপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারত। এছাড়া এই অফিসটি থাকলে বাঘ-হরিণ, ডলফিন, সুন্দরী, বাইন, পশুরসহ মহামূল্যবান গাছগুলো পাচারকারীদের কাছ থেকে নিরাপদ থাকত বলে বনজীবীরা মনে করে।
×