বিজয়ের মাসে নারী অগ্রগতির আরও একধাপ অতিক্রম করল বাংলাদেশ। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম সামরিক পাইলট হিসেবে নাম লেখালেন দুই সাহসিকা। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাঈমা হক ও ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুৎফি; এই দুই নারীর পরিচয় দেশকে নিয়ে গেল অন্য এক উচ্চতায়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এর আগে সাধারণ যাত্রী পরিবহন বিমানের পাইলট হিসেবে দেশের মহিলা পাইলটরা কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। নারীর এই আকাশ জয়ে দেশে খুশির ঢেউ লেগেছে। শুধু তাই নয়, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশে নারীর অগ্রযাত্রায় যোগ হলো ভিন্ন মাত্রা।
বুধবার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানে (যশোর) এই দুই সাহসিকা সামরিক পাইলটের স্বীকৃতি পান। এর আগে তাঁরা একক উড্ডয়ন ও ল্যান্ডিংয়ের অর্থাৎ প্রথম সলো টেস্টে সফলতা দেখিয়েছেন। এ সময় উর্ধতন কর্মকর্তারা তাঁদের দক্ষতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। জানা যায়, ঐদিন দুপুর ১২টা ৪৩ মিনিটে ফ্লাইং অফিসার তামান্না বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ হেলিকপ্টার বেল (বিএইচ)-২৮৬ নিয়ে টেস্টের জন্য ভূমি থেকে আকাশে উড্ডয়ন করেন। এর কিছুক্ষণ পর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাঈমা হক ১২টা ৪৬ মিনিটে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ হেলিকপ্টার বেল (বিএইচ)- ১৯৬ নিয়ে উড্ডয়ন করেন। সাহসিকা দুই পাইলট তামান্না ও নাঈমা যথাক্রমে ১৪ ও ১৩ মিনিটের মাথায় সফলভাবে আকাশ থেকে ভূমিতে ল্যান্ডিং করেন। আকাশ থেকে ভূমিতে সফলভাবে ল্যান্ডিং শেষে তামান্না সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আজ সফল হয়েছে। আমি নারী সমাজের একজন গর্বিত সদস্য। তিনি নারী সমাজের অগ্রজ সাহসী, অকুতোভয় নারী নেতৃবৃন্দের দেখানো পথ ধরে দুঃসাহস দেখাতে পেরেছেন বলে গর্ব অনুভব করেন। অন্যদিকে নাঈমা হক জানান, দেশমাতৃকার জন্য আমাদের এই দুঃসাহসিক দৃষ্টান্ত নারী সামাজের অন্যদেরও এ কাজে উৎসাহিত করবে। উল্লেখ্য, এই দুই নারী কর্মকর্তা বেল ২০৬ হেলিকপ্টারে ৬৫ ঘণ্টা উড্ডয়নের মাধ্যমে প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করার পর বিমানবাহিনীর বিভিন্ন হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রনে দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যে তাঁরা এককভাবে ২৫ ঘণ্টা আকাশে উড়েছেন। এর আগে ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতের নারীরা সামরিক পাইলটের তালিকায় তাঁদের নাম লেখান।
জানা যায়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ২০০০ সালে প্রথম নারী কর্মকর্তা নিয়োগ শুরু করে। বিমানবাহিনীর বিভিন্ন শাখায় কর্মরত নারী কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অঙ্গনে পেশাদারি ও দায়িত্ব বোধের পরিচয় দিয়ে নিজেদের মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এসবের ধারাবাহিকতায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বিমানবাহিনী এ বছর সামরিক বৈমানিক হিসেবে নারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক, প্রশাসন, কৃষি, শিক্ষা, ব্যবসা, ক্ষুদ্র শিল্প, সামরিক বাহিনী, নৌবাহিনী, পোশাক খাতসহ উন্নয়ন ও অগ্রগতির সকল ক্ষেত্রে সফলভাবে নিজেদের অবদানকে প্রতিষ্ঠিত করার পর এবার আকাশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে নারী বিশ্বের দরবারে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের আরও একধাপ এগোলো। তামান্না ও নাঈমার দেখানো পথে অন্যরাও এগিয়ে যাবে- সেই প্রত্যাশা সবার।
শীর্ষ সংবাদ: