ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিয়াল মাদ্রিদের বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

রিয়াল মাদ্রিদের বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনেকেই বলতে পারেন, রিয়াল মাদ্রিদ তো বিশ্বসেরাই। তাহলে কিসের বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াই! তাদের জন্য তথ্য, রিয়াল ক্লাব ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল হলেও এখন পর্যন্ত জিততে পারেনি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি। ছয় অঞ্চলের সেরা ছয়টি দল নিয়ে এই আসর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, এখন পর্যন্ত ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরে শেষ হাসি হাসতে পারেনি স্প্যানিশ পরাশক্তিরা। অবশেষে এই আক্ষেপ ঘোচানোর সুবর্ণ সুযোগ গ্যালাক্টিকোদের সামনে। আজ রাতে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে জয় পেলেই প্রথমবারের মতো বিশ্বসেরা বনে যাবে কার্লো আনচেলত্তির দল। শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মিশনে রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টাইন ক্লাব সান লরেঞ্জো। মরক্কোর মারাকেশ স্টেডিয়ামে ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াই অনুষ্ঠিত হবে। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৩০ মিনিটে। এই ম্যাচে জয় পেলেই তাই খাতাকলমে বিশ্বসেরার তকমা পাবে রিয়াল! গত বুধবার রাতে ওশেনিয়া চ্যাম্পিয়ন অকল্যান্ড সিটিকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন সান লরেঞ্জো। আর গত মঙ্গলবার মেক্সিকোর ক্লাব ক্রুজ এ্যাজুলকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল। সেমিফাইনালে গোল পাননি মৌসুমের শুরু থেকে দারুণ ফর্মে থাকা সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। তাতে অবশ্য একটুও চিন্তিত নন দলটির কোচ আনচেলত্তি। তার দৃঢ় বিশ্বাস, ফাইনালে অবশ্যই গোল করবেন পর্তুগীজ এই ফরোয়ার্ড। ইতালিয়ান কোচ মনে করেন, ফাইনালের জন্য গোল জমা করে রেখেছেন বর্তমান ফিফা সেরা ফুটবলার। প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে রিয়াল ফেবারিট থাকলেও প্রতিপক্ষকে মোটেও খাটো করে দেখছে না রিয়াল। আনচেলত্তি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাইÑচ্যাম্পিয়ন হওয়া। তবে প্রতিপক্ষকে আমরা সমীহ করছি। কারণ তারা একটি অঞ্চলের সেরা। আমাদের দেখেশুনেই খেলতে হবে। ফাইনালে মহারণে রিয়াল পাচ্ছে ব্রাজিল বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটজয়ী তারকা জেমস রড্রিগুয়েজকে। ইতোমধ্যে তিনি পুরোদমে অনুশীলন শুরু করেছেন। গত ৬ ডিসেম্বর চোট পেয়ে এতদিন মাঠের বাইরে ছিলেন কলম্বিয়ান তারকা। ২৩ বছর বয়সী রড্রিগুয়েজে ব্রাজিল বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচে ছয় গোল করে ও দুটিতে সহায়তা করে গোল্ডেন বুট জয় করেন। টগবগে এই তরুণ ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে মুখিয়ে আছেন। ক্লাবগুলোর মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই প্রতিযোগিতায় ইউরোপ বনাম দক্ষিণ আমেরিকা লড়াইয়ের মঞ্চায়নই হয়েছে সবচেয়ে বেশি। রিয়াল আগের দিন ফাইনালে উঠে যাওয়ায় মঞ্চটা সাজানোই ছিল। পরের দিন অকল্যান্ড সিটি আরেকটু হলেই চেনা ছকটা উল্টে দিতে বসেছিল! নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে শেষ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে মাউরো মাটোসের গোলে ইউরোপ-আমেরিকা লড়াই নিশ্চিত করে লরেঞ্জো। ফাইনালে জিততে হলে এক রকম অসাধ্যই সাধন করতে হবে আর্জেন্টাইন ক্লাবটিকে। অপ্রতিরোধ্য রিয়াল জিতেছে টানা ২১ ম্যাচ। সব প্রতিপক্ষকেই খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিতে থাকা রিয়ালের সামনে লরেঞ্জো কী প্রতিরোধ গড়তে পারবে? গুঞ্জন উঠেছে, রিয়ালকে রুখতে কোপা লিবার্টাডোরেস জয়ী ক্লাবটি শক্তি প্রয়োগ করে খেলতে পারে। তবে ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট মাটিয়াস লামেন্স সে রকম সম্ভাবনা দেখছেন না। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না এ রকম কিছু হবে। দুই দলের কারওই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। পোপ ফ্রান্সিস আবার খেলার দারুণ ভক্ত। তিনি একজন আর্জেন্টাইনও। সেমিফাইনাল জয়ের দিন ছিল তাঁর জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনটা ভালই গেছে নিজ দেশের ক্লাবের জয়ে। এখন নিশ্চিত করেই তিনি ফাইনালও জিততে চাইবেন! লামেন্সের কথাতে কিন্তু সে সুরই। বলেন, আমার তো মনে হয় পেপেকে নিয়েই আমাদের বেশি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। ফাইনালের আগে অবশ্য লামেন্স রেফারিং নিয়েও উদ্বিগ্ন। দক্ষিণ আমেরিকান একজন রেফারিকেই তিনি দেখতে চান ফাইনালে। সেটা না হলে অন্তত ইউরোপের কেউ নন। প্রথমবার ক্লাব সেরা হলে রিয়াল বিশ্বরেকর্ড গড়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। সেমিতে জিতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রিয়ালের টানা জয় ২১টি। বিশ্বরেকর্ড ছুঁতে তাদের আর ৩টি জয় চাই। যা করতে পারলে রিয়ালের নাম উঠবে গিনেস বুক অব রেকর্ডে। বর্তমানে এই রেকর্ডটির মালিক ব্রাজিলিয়ান ক্লাব কোরিটিবার। ২০১১ সালে এই ক্লাবটি গিনেস বুকে নিজেদের নাম লেখায়। একই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর গিনেস কর্তৃপক্ষ কোরিটিবাকে ‘মোস্ট ভিক্টোরিয়াস টিম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে আখ্যায়িত করে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের গিনেস বুকে নাম উঠাতে হলে জিততে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল। পরের দুটি ম্যাচের প্রথমটিতে লা লিগায় ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের পর শেষ ম্যাচে স্প্যানিশ কাপে জিততে হবে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, রিয়ালের সামনে ফুটবল প্রতিযোগিতা ছাড়াও আরও একটি রেকর্ডের হাতছানি। প্রতিযোগী দল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল দল লেকারস ১৯৭১-৭২ সালে সর্বোচ্চ ৩৩ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়েছিল। টানা ২৪ জয়ের রেকর্ড গড়তে পারলে নিশ্চিত করেই এই রেকর্ডে দৃষ্টি দেবে বিশ্বের সবচেয়ে দামী ও অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাবটি।
×