ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে আসতে পারেন ক্রুইফ!

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

ফিরে আসতে পারেন ক্রুইফ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এর জন্য বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফকে এক মাসের জন্য আনার প্রাথমিক চিন্তাভাবনা করছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। শুক্রবার বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এমনটা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ জানান, ‘আসলে বাফুফে নয়, ক্রুইফ নিজেই গত ১০/১৫ দিন ধরে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এবং বাফুফের সহসভাপতি এবং ন্যাশনাল টিমস কমিটির সদস্য তাবিথ আওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচের পদে আবারও ফেরার প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। তবে সেটা শুধু জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের জন্য। আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে ক্রুইফকে এক বা দেড় মাসের জন্য কোচ হিসেবে আনা যায় কি না, এ ব্যাপারে বাফুফে ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। স্বল্পমেয়াদের জন্য ক্রুইফ কি একাই ফিরতে চান, নাকি সঙ্গে করে আনতে চান তাঁর স্বদেশী সহকারী সাবেক কোচ রেনে কোস্টারকেও? ‘না, ক্রুইফ তাঁর নিজের জন্যই বাফুফে বরাবর আবেদন করেছেন।’ সোহাগের ভাষ্য। প্রশ্ন উঠতে পারে, গত অক্টোবরে যে ক্রুইফ ও কোস্টারকে সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় দল থেকে বিদায় করে দেয়া হলো, এ নিয়ে কত বিতর্ক হলো, এখন আবার সেই ক্রুইফকেই আবার ফিরিয়ে আনার কথা কেনই বা ভাবছে বাফুফে? যুক্তি খণ্ডালেন সোহাগ, ‘ক্রুইফ জানে বাফুফে বিদেশী কোচের সন্ধানে আছে। কিন্তু এখনও তা পায়নি। তাছাড়া বাংলাদেশে সে যে এক-দেড় বছর ছিল, তাঁর অধীনে খেলা দলটাই এখনও আছে। কাজেই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য দলটাকে নিয়ে তাঁর খুব বেশি কাজ করতে হবে না। তাছাড়া সে নিজেও এখন বেকার। সবমিলিয়েই সে স্বল্পমেয়াদের জন্য বাফুফের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’ উল্লেখ্য, সিনসিয়ারিটির অভাব, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের প্রবণতা, চুক্তির বাইরে চলে যাওয়া, মিডিয়ার কাছে অনবরত নেগেটিভ কথা বলা, ৪৮০ দিনের মধ্যে ২২৪ দিনই নানা অজুহাতে হল্যান্ডে গিয়ে ছুটি কাটানো ... ইত্যাদি অভিযোগ তুলে গত অক্টোবরে বাফুফে প্রথমে ক্রুইফকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেয়। ক্রুইফ সে সময় নিজ দেশে ছুটিতে ছিলেন। পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরলে অবশ্য কৌশলগত কারণে সে অবস্থান থেকে সরে এসে ক্রুইফকে উল্লিখিত অভিযোগ নিয়ে শো-কজ করে এই ডাচ্ কোচকে। ক্রুইফ কারণ দর্শাও নোটিসের জবাব দিয়ে বাফুফের কাছে তাঁর বকেয়া কয়েক মাসের বেতন ফেরত চান। নইলে ফিফার কাছে নালিশ দেয়ার হুমকি দেন। বাফুফেও তার অবস্থানে অনড় থাকলে একপর্যায়ে বোধদয় হয় ক্রুইফের। বুঝে যান, বিবাদ করে লাভ নেই। বরং বাফুফের সঙ্গে সমঝোতা করে বাকি বকেয়া বেতন নিয়ে মানে মানে কেটে পড়াই সমীচীন। শেষ পর্যন্ত সেটাই করেন তিনি। বাংলাদেশে আগমনের ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই আবারও নিজ দেশ হল্যান্ডের উদ্দেশে বিমানে ওঠেন। বাফুফে তাঁতে জানিয়ে দেয়, পাওনা চার মাসের বেতন পরে ক্রুইফের কাছে হল্যান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ক্রুইফের সহযোগী রেনে কোস্টার বাংলাদেশের চাকরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন ক্রইফের আগেই। তাই গত অক্টোবরে তিনি ক্রুইফের সঙ্গে ঢাকা আসেননি। উল্লেখ্য, এই দুই ডাচ্ কোচের বেতন ২০ হাজার ইউরো (ক্রুইফ ১২ ও রেনে ৮ হাজার)। ২০১৩ সালের জানুয়ারি তিনি ও কোস্টার বাফুফের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ওই বছরের ১৩ জুন করেন মূল চুক্তি স্বাক্ষর। চুক্তির মেয়াদ ছিল ২ বছর। হল্যান্ডে যাতায়াতের জন্য বাফুফে থেকে ইতোমধ্যেই ১৬ টিকেটের ১১টিই ব্যবহার করেছেন। জাতীয় ফুটবল দলের ১৬তম বিদেশী কোচ ক্রুইফ। ক্রুইফের অধীনে জাতীয় ফুটবল দল ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ এবং এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এশিয়ান গেমসে অংশ নেয়। কোনটিতেই তাঁর দল আশাতীত রেজাল্ট করতে পারেনি। গত বছরের জানুয়ারিতে সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর এবং জুনে ক্রুইফ-কোস্টারের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ও আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল বাফুফে। পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতেও একই বিষয়গুলো থাকছে। থাকা-খাওয়া, বাসস্থান, সন্তানদের স্কুল, চিকিৎসা ফ্ল্যাট, গাড়ি, বোনাস, স্বাস্থ্যবীমা, বিজ্ঞাপন বাবদ টাকা, জাতীয় দলের প্রতিপক্ষের খেলা দেখতে যেতে আগাম টিকেট, পরিবারের জন্য বাড়তি বিমান টিকেট, বাবুর্চি। দুই বছরে চুক্তির আর্থিক মূল্য আট কোটি টাকার মতো। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে ১৬৫ থেকে ১০০-১২০-এর মধ্যে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন ক্রুইফ। ক্রুইফ অক্টোবরে ফিরে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৮১! ক্রুইফকে বরখাস্তের বিষয়টি চূড়ান্ত হয় গত অক্টোবরেই, বাফুফের ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায়। যদিও এর আড়াই মাস আগেই বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত ৯৮ শতাংশ সদস্যই প্রস্তাব করেছিলেন দুই ডাচ্ কোচকে বাদ দিতে। কিন্তু সালাউদ্দিন কোচদের আরেকটু সময় দেয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ তখন সামনেই ছিল এশিয়ান গেমস, ফিফা প্রীতি ম্যাচ। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল ক্রুইফদের মূল এ্যাসাইনমেন্ট, সেখানে সপ্তম হয় বাংলাদেশ। ব্যর্থ হন ক্রুইফ। তারপরও সালাউদ্দিন তাদের রেখেছেন ভাল কিছু পেতে। তাদের চাহিদা মোতাবেক ফিজিও, গোলকিপিং কোচ- সব দেন। ফলাফল শূন্য। তবে এশিয়ান গেমসে অনেক ভাল ফুটবল খেলে এবার বাংলাদেশ। সালাউদ্দিনও প্রীতি ছিলেন। কিন্তু ক্রুইফের ‘সিনসিয়াটি’র অভাবের কারণেই বাধ্য হন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত আবারও ক্রুইফের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তাঁকে আবারও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দ্রোণাচার্য্য বানিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য ফিরিয়ে আনতে রাজি হয় কি না বাফুফে।
×