ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল জাপান ৩- বাংলাদেশ

‘ব্লু সামুরাই’দের কাছে সম্মানজনক হার

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪

‘ব্লু সামুরাই’দের কাছে সম্মানজনক হার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুরুতে ভাল খেললেও শেষে প্রতিপক্ষের সঙ্গে কুলাতে পারল না স্বাগতিক বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে তারা লড়াই করেছে সমানতালেই। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে, নির্দিষ্ট করে বললে ৬০ মিনিটে ভেঙ্গে পড়ে প্রতিরোধের সব দেয়াল। একে একে তিন গোল হজম করতে হলো। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে রেফারি তৈয়ব হাসান খেলা শেষ হওয়ার বাঁশি বাজালে স্কোর বোর্ডে দেখা গেল বাংলাদেশ ০ : জাপান ৩। জাপানের পক্ষে জোড়া গোল করেন বদলি ফরোয়ার্ড আসানু তাকুমা। অপর গোলটি করেন আরেক ফরোয়ার্ড মিনামিনু তাকুমি। খেলা শেষ হওয়ার পর গ্যালারি উপস্থিত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী দর্শকরা মোটেও মন খারাপ করেননি। কেননা, হারলেও বেশ ভালই খেলেছে বাংলাদেশÑ এমনটাই ধারণা তাদের। বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টাস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন জুবায়ের বলেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবল যে এগিয়ে যাচ্ছে, তার প্রমাণ এশিয়ার এক নম্বর দলের কাছে মাত্র তিন গোলে হারাটা।’ ফেসবুকভিত্তিক বাংলাদেশী ফুটবল সংগঠন ‘রিয়াল মাদ্রিদ লস গ্যালাক্টিকোস’ প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান প্রান্ত বলেন, ‘এ হারে আমরা মোটেও হতাশ নই। এ রকম প্রীতি ম্যাচ আরও বেশি করে খেললে বাংলাদেশের ফুটবল এগিয়ে যাবেই।’ দেশের মাটিতে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার পর এবার জাপানের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। এটি অবশ্য জাপানের সিনিয়র বা জাতীয় দল নয়, অনুর্ধ-২১ জাতীয় দল। বিজয়ের মাস, নিজেদের মাঠে খেলা, চেনা আবহাওয়া, স্থানীয় দর্শক সমর্থন সব মিলিয়ে মন্দ খেলেনি দ্র্রোণাচার্য্য সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যরা। তবে জাপানীদের দুরন্ত গতি আর ক্ষিপ্রতার কাছে শেষ পর্যন্ত পরাভূত হতেই হলো মামুনুলবাহিনীকে। দীর্ঘদিন পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শক জোয়ার পরিলক্ষিত হয়। আনুমানিক ১৬ হাজার দর্শক ছিলেন মাঠে। ঢাকার বাইরে ফুটবল জনপ্রিয় হলেও ঢাকার মাঠে ফুটবলের দর্শক নেইÑ এমন ধারণা এদিন ভুল প্রমাণ করেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। গ্যালারিগুলোতে বাংলাদেশের অসংখ্য জাতীয় পতাকা, ঢোলের শব্দ, দর্শকদের করতালিতে মুখরিত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয় ম্যাচ। র‌্যাঙ্কিং আর শারীরিক গঠনে জাপানীরা এগিয়ে থাকলেও দর্শক, চেনা মাঠ আর আবহাওয়া ছিল বাংলাদেশের অনুকূলে। ‘জে’ লীগে খেলা শক্তিশালী জাপানীদের প্রথমার্ধ ভালভাবেই আটকে রাখে বাংলাদেশ দল। যদিও জাপানের আক্রমণগুলো ছিল বেশ ত্রাস জাগানিয়া। কিন্তু সেগুলো দক্ষতার সঙ্গেই সামাল দেয় লাল-সবুজ রক্ষণভাগ। ১৬ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে জাপানী মিডফিল্ডার ইয়াজিমা সিমা বক্সের বাইরে থেকে তীব্র শট নিলে বাংলাদেশের গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটনের গায়ে লেগে ফেরত আসলে ফিরতি বলে ফরোয়ার্ড তাকামোর শটটি লিটন অসাধারণ দক্ষতায় রক্ষা করেন। ১৯ মিনিটে এ রকম আরও একটি আক্রমণ রুখে লিটন। বাঁপ্রান্ত থেকে মিনামিনু তাকোমির শট ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্রিপে নেন লিটন। ৩৪ মিনিটে ফ্রিকিক পেয়ে কাজে লাগাতে পারেনি ‘ব্লু সামুরাই’রা। ৩৮ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে আরানো তাকোমা বল দেন মিনামিনুকে। তার উঁচু শট দৌড়ে এসে ক্লিয়ার করেন বাংলাদেশী ডিফেন্ডার ইয়ামিন মুন্না। প্রথমার্ধে জাপানীদের গোলবঞ্চিত করে যে তৃপ্তি নিয়ে বিশ্রামে যায় স্বাগতিকরা, সে তৃপ্তি দ্বিতীয়ার্ধে আর থাকেনি! ৬০ মিনিটে এগিয়ে যায় জাপান। বাঁপ্রান্ত থেকে মিডফিল্ডার হারকাউয়া বদলি খেলোয়ার আসনু তাকুয়াকে বল দিলে তিনি বল নিয়ে বক্সে ঢুকে প্লেসি শটে বাংলাদেশের জাল কাঁপান (১-০)। ৭৩ মিনিটে আসনু তাকুয়ার পাসে বল পেয়ে ডি বক্সে ঢুকে লক্ষ্যভেদ করেন ফরোয়ার্ড মিনামিনু তাকুমি (২-০)। ৭৬ মিনিটে জাপানের পক্ষে আরও এক গোল করেন আসানু (৩-০)। শেষপর্যন্ত ৩ গোলের হার নিয়েই মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ ভাল খেললেও তাদের খেলা ছিল কাউন্টার এ্যাটাক নির্ভর খেলা। যদিও তাদের আক্রমণগুলোর প্রায় সবই বিপক্ষের ডি-বক্সের কাছে এসে খেই হারিয়ে ফেলে। জাপান অনুধ-২১ দলটি এ বছরের জানুয়ারিতে ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিদেশ সফর শুরু করে। এরপর সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে অংশ নেয়। সেবার কোয়ার্টার থেকে তারা বিদায় নেয় স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা ম্যাচটি ছিল তাদের অলিম্পিক বাছাইয়ের প্রস্তুতিমূলক শেষ বিদেশী ম্যাচ। জাপানের কাছে হারলেও বাংলাদেশের এই বীরোচিত ও সম্মানজনক পরাজয় এই বিষয়টিই উন্মোচন করলÑ ধীরে ধীরে এগুচ্ছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ফুটবল।
×