ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উবাচ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪

উবাচ

খালেদা-ফখরুল এক রা স্টাফ রিপোর্টার॥ সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যর অংশ। অথচ সরকার এই সম্পদ প্রতিবেশী দেশের হাতে তুলে দিতে ষড়যন্ত্র করে সেখানে তেলের জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে। এতে এখানের সকল সম্পদের ওপর প্রতিবেশী দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। বক্তব্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার। অন্যদিকে দলটির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, সরকারের এখন সব খাওয়া শেষ এবার সুন্দরবন খাবে। তার আয়োজন নাকি তেলের জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে। সুন্দরবনের বিপর্যয়ের মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ভুলে এত বড় জাতীয় দুর্যোগে দলটি পরামর্শ দিতে পারত তা ভুলে গিয়ে উদ্ভট বক্তব্যে মানুষের হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছে দলটি। বেগম জিয়া গত সপ্তাহে তাঁর কাঁচপুরের জনসভায় বলেছেন, সুন্দরবনের দুর্ঘটনা পরিকল্পিত। সুন্দরবনে এখন আর পশুপাখি থাকবে না, প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যাবে। আর যে ট্যাঙ্কারে তেল বহন করা হয়েছে ওটা অয়েল ট্যাঙ্কার ছিল না, ছিল বালুর ট্যাঙ্কার। তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণের এ ঘটনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে। এ সরকার শুধু মানুষখেকো নয়, পশুপাখি খেকোও। ওরা সারা বাংলাদেশ খেয়ে ফেলতে চায়। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সপ্তাহে সুন্দরবন নিয়ে বলেছেন, ‘সরকারের সব খাওয়া শেষ। এবার সুন্দরবন খাচ্ছে সরকার।’ ফখরুলের ভাষায় ‘সুন্দরবন খাওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবেই সরকার তেল দিয়ে ক্ষতি করেছে’। এদিকে মহান বিজয় দিবসে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিষয়ে নতুন তত্ত্ব হাজির করে বিএনপির এ নেতা নিজেকে আরেক দফা বিতর্কের মুখে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন, বুদ্ধিজীবীদের নাকি হত্যা করেছে মুজিব বাহিনী! সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রথমে সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে সুন্দরবনকে নিয়ে আসেন ফখরুল ইসলাম। ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ হিংস্র জানোয়ার হায়েনার মতো দেশের মানুষ খেয়ে ফেলছে। বর্তমান সরকার ব্যাংক, পদ্মা সেতু আগেই খেয়ে ফেলেছে। এবার সুন্দরবন খেয়ে ফেলেছে। বর্তমান সরকার হায়েনা হয়ে গেছে। হায়েনার মতো তারা শুধু আক্রমণ করে যাচ্ছে আর খাচ্ছে। সর্বশেষ সুন্দরবন খেয়ে ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, আজ শেখ মুজিবের সুকন্যা ৫ জানুয়ারি নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রকে কফিনে ভরে শেষ পেরেক মেরে করবে পাঠিয়ে দিয়েছেন। হাসিনা তাঁর বাবার মতো একই ভুল করছেন। ১৪ আগস্ট জানত না আগামীকাল কি হবে। ১৫ আগস্ট সব শেষ হয়েছে। দেশের চিত্র পরিবর্তন হয়েছে। এদিকে বিজয় দিবসে ফখরুল বলেছেন, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে মুজিব বাহিনী। বুদ্ধিজীবী হত্যার ‘নতুন তত্ত্ব’ দেয়া ফখরুলের বক্তব্যে হতবাগ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি অবাক হয়েছি ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথায়। তিনি বলেছেন, ‘বুদ্ধিজীবীদের নাকি হত্যা করেছে মুজিব বাহিনী’। এতদিন পরে আরেক নতুন তত্ত্ব’। বুদ্ধিজীবীদের কারা হত্যা করেছে তা বুদ্ধিজীবীদের পরিবার-পরিজন জানেন উল্লেখ করে তোফায়েল বলেন, কারা এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা বিশ্ব ও বাংলাদেশের সকলে জানেন। যারা করেছে, তারা এখন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। কারও ফাঁসির হুকুম হয়েছে। এমন মুহূর্তে এ কথা বলার মানে কি? এর অর্থ যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের রক্ষা করা। লন্ডনে কি পাগলা গারদ নেই স্টাফ রিপোর্টার ॥ লন্ডনে নির্বাসিত বিএনপি নেতা তারেক রহমান ক্ষণে ক্ষণে ইতিহাসের নতুন নতুন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তারেক রহমানের এইসব বক্তব্যই প্রমাণ করছে বিএনপি এদেশের ইতিহাসকে কিভাবে কাটাছেঁড়া করেছে। কিভাবে বদলে দিতে চায় গোটা বাংলাদেশের ইতিহাস। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই বলছেন তিনি রাজাকার ছিলেন। লন্ডনে পালিয়ে থাকা বিএনপির এই নেতার বক্তব্যে দেশের মানুষ আহত হলেও তিনি তাঁর জিহ্বা সামলাতে পারছেন না। দেশের মানুষ এখন তাঁকে উন্মাদ ভাবতে শুরু করেছেন। অনেকেই বলছেন লন্ডনে পাগলা গারদ না থাকলে পাবনায় আসেন আগে মাথা ঠিক করেন পরে বক্তৃতাবাজি করেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার লন্ডনে বিএনপির এক আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক দাবি করেছেন, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা আসার ঠিক আগে ইয়াহিয়া খানকে প্রেসিডেন্ট মেনে তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যদিও আজগুবি এই তথ্যের জনক তারেক রহমান। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ছিল না দাবি করে এর পক্ষে বহুল বিতর্কিত দুই লেখকের লেখা উদ্ধৃত করে শোনান তারেক। হাওয়া ভবনের সম্রাট বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান যদি ৭ মার্চ সেনাবাহিনীর বাঙালী অফিসারদের নিয়ে যুদ্ধ শুরু করতেন, তাহলে যে ‘সামান্য সংখ্যক’ পাকিস্তানী সৈন্য তখন ছিল, তাদের সহজেই পরাজিত করা যেত; প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি ‘অনেক কমানো’ যেত। বিএনপির এই নেতার সাসহিকতা দেখে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এত সাহস এত বোঝেন এর পরও উনাকে কেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে পালিয়ে থাকতে হবে। তারেক রহমানের পচা মাথা থেকে আরো বের হয়, বঙ্গবন্ধু নাকি পাকবন্ধু ছিলেন। পাকবন্ধু থাকলে তিনি কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কেন দেশ স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই বিশ্লেষণে অবশ্য যাননি এই আলালের ঘরের দুলাল। তিনি বলেন, আজকে যদি আমরা বলি- এই যে লক্ষ লক্ষ মানুষ একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে মারা গেল, এই যে হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট হলো, এর জন্য এককভাবে কী শেখ মুজিবকে দায়ী করা যায়? তাহলে এত মানুষের যে হত্যাকারী তাকে এক বাক্যে কী বলা উচিত? যে মানুষ মারে তাকে কি বলা উচিত?” উপস্থিত বিএনপিকর্মীরা এ সময় চিৎকার করে উত্তর দেন- ‘রাজাকার’। সঙ্গতকারণে তারেক রহমানই নয় বিএনপি যাঁরা করেন দেশে বিদেশে তাঁদের সবাই কি পাগল হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এর আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করা তারেক বলতে থাকেন, আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল, মুক্তিযুদ্ধের দল। এই দলকে শেখ মুজিব কি করল- ব্যান করে দিল। আরে তুমি তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাজাকাররে ভাই। ... মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দলকে তুমি ব্যান করে দিলে, তা তো মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় বিপক্ষের কাজ হলো। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের কাজ কে করবে ভাই? একজন রাজাকারই তো করবে। তাহলে শেখ মুজিবকে কি বলা যায়? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়...। বিএনপিকর্মীরা তারেকের হয়ে উত্তর দেন ‘রাজাকার, খুনী’। কয়েক মাস আগে আরেক সভায় নিজের বাবা জিয়াউর রহমানকে ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি’ বলে দাবি করেন তারেক। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ বলেন তিনি। এক মাসেই খুঁজে পাওয়া যাবে না স্টাফ রিপোর্টার ॥ শত অপচেষ্টার পরও চলতি বছরের পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট। সারাদেশে জ্বালাও পোড়াও, হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের পরও নির্বাচন হয়েছে। শপথের মধ্য দিয়ে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হয়। বিএনপির নানা হুমকি ধমকির মুখে প্রায় এক বছর পার করল সরকার। নির্বাচনের পর থেকেই সরকার পতনের ইস্যু সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছে বিএনপি। কাজ হয়নি। এবার সরকার পতনের নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, মাত্র এক মাস আন্দোলন করলেই নাকি ক্ষমতাসীনদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। গয়েশ্বর বলেন, যেখানে গণতন্ত্র নেই, সেখানে মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা করা অসার। এক পাত্রে যেমন দুধ আর তেঁতুল রাখা যায় না, তেমনি আওয়ামী লীগ যেখানে আছে সেখানে গণতন্ত্র থাকতে পারে না। অথচ সরকার পতনের কোন ইস্যু তৈরি করতে পারেনি দলটি। হরতাল ডাকলেও তা সফল হয় না। এ নিয়ে স্বয়ং দলের প্রধানও ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের ওপর। আন্দোলন জমাতে নেতাকর্মীদের শপথ বাক্য পাঠ করানো হচ্ছে। হতাশ দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজেই রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে গয়েশ্বরের বক্তব্য কতটা বাস্তবসম্মত তাই দেখার বিষয়। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বলেন দেশে গণতন্ত্র নেই। কিন্তু দলের আরেক নেতা বলেন নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র। গণতন্ত্র যদি নিয়ন্ত্রিত থাকে তাহলে কিছুটা হলেও আছে। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, এতে বোঝা যায়, তারা মরণ আতঙ্কে ভুগছেন। গয়েশ্বর বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের সঙ্গে বসতে না চাইলেও ক্ষমতায় গেলে তাদের ওপর নির্যাতন করা হবে না এমন নিশ্চয়তা পেলে সংলাপে বসবে। কারণ সবাই বাঁচতে চায়। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে সবার সঙ্গে মিল থাকে। কিন্তু আমাদের নেতারা একেক জন একেক রকম বক্তব্য দেন। টেলিভিশনের ছবি দেখানোর জন্য আমদের নেতারা অস্থির হয়ে ওঠেন। যখন টেলিভিশন ছিল না তখন কি আন্দোলন হয়নি? আমরা কি তাহলে প্রচার নির্ভর হয়ে যাচ্ছি? বাস্তবতা হলো যেখানে নিজ দলের বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয় না থাকার কথা নিজেই স্বীকার করেছেন। সেখানে টানা এক মাসের আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটানো কতটা বাস্তবসম্মত সে প্রশ্নই সামনে এসেছে। তিনি হয়ত ভুলে গেছেন, আন্দোলনের অন্যতম কৌশল হলো সমন্বিত কাজ করা। ক্ষমতায় গেলে খালেদার বিচার স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির আমলে এরশাদকে জেল খাটতে হয়েছিল। জাতীয় পার্টির সভা-সমাবেশে তখন বাধা দেয় সরকার। জেলে থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছিল জাপা নেতাদের অনেকের। সুদিন ফেরেনি। তাই এতদিন খালেদা জিয়ার অপকর্মের জবাব দিতে পারেনি জাপা চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এবার বিরোধী দলে জাপা। দিন ফিরেছে। সামনের লক্ষ্য জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নেয়া। তাই নতুন আশায় জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ বলেছেন, ক্ষমতায় এলে খালেদার আমলের সকল হত্যাকা-ের বিচার করব। হয়ত তিনি হত্যাকা-ের জন্য খালেদা জিয়ার বিচারের কথাই বলেছেন। অর্থাৎ প্রতিশোধ। রাজনীতিতে সেইদিন আসুক আর না আসুক এরশাদের এমন হুঁশিয়ারি বিএনপির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অনেকেই। বুধবার এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে এরশাদ বলেন, আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন। আমাকে বার বার খুনী বলে গালি দেন। আমি খুনী নই। খুনী আপনি (খালেদা জিয়া)। ক্ষমতায় এলে খালেদা জিয়ার শাসনামলের সকল হত্যাকা-ের বিচার করা হবে। পাশাপাশি খালেদার হাতে নিহতদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বিএনপির হাতেই প্রতিহিংসার রাজনীতির সূচনা এমন মন্তব্য করে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, বাংলাদেশে প্রথম প্রতিহিংসার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিল বিএনপি। আমাকে জেলে ভরে, মিটিং করতে না দিয়ে, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে তারা। অথচ সেই দলটি এখন গণতন্ত্রের কথা বলে। যাঁরা গণতন্ত্র ও লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলেন- আমাকে যখন জেলে নেয়া হয়েছিল, অন্যায়ভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল, তখন আপনাদের গণতন্ত্র কোথায় ছিল? এরশাদ বলেন, বিএনপি নেত্রী প্রায়ই বলেন এরশাদ খুনী। আমি তাঁকে বলতে চাই আয়নায় নিজের চেহারা দেখবেন। আপনি ক্ষমতায় থাকতে সারের জন্য আন্দোলন করায় গাইবান্ধায় ১৮ জন কৃষককে হত্যা করেছিলেন। তাদের নামের তালিকা আছে। আমি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের নামে সেখানে স্মৃতিসৌধ করব। এর নাম দেয়া হবে ‘বিএনপির দুঃশাসনের শিকার’। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দেলন করায় কানসাটে ২০ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। সুযোগ এলে নিহতদের নামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করব। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ক্ষমতায় এসে দেশে জঙ্গীবাদের সূত্রপাত করেছিলেন আপনি। দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, কিবরিয়া হত্যাসহ অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছেন। ক্ষমতায় আসলে মানুষ হত্যার হিসাব নেব। আপনাকে বলতে চাই খুনী এরশাদ না, আপনি (খালেদা জিয়া)। রোগী মরলেও অপারেশন সাকসেসফুল! স্টাফ রিপোর্টার॥ সব সময় অঙ্গভঙ্গি আর রসাত্মক বক্তব্যের জন্য তিনি বার বার আলোচনায় আসেন। এবারও সুন্দরবনের তেল ট্যাঙ্কারডুবি নিয়ে তাঁর বক্তব্য সকলের নজর কাড়ে। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। সরকারের তিনিই এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। সংশ্লিষ্টরা যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক। তিনি বলেন, আঞ্চলিক ভাষায় বলেন ‘আরও খবর আছে।’ কি খবর? তেল কিছু রইয়া গেছে। তার মানে কি? অপারেশন সাকসেসফুল পেশেন্ট ডেড। সুরঞ্জিত বলেন, কেমন দাবি চিন্তা করেন, রোগী মরে মরুক। অপারেশন সাকসেসফুল! আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সুন্দরবনে অবাধে জাহাজ চলাচল করতে না দিলেই এ ‘বিপর্যয়’ এড়ানো সম্ভব। গত শুক্রবার বঙ্গবন্ধু একাডেমির এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন নিয়ে নৌ-মন্ত্রণালয় ‘এতখানি উদাসীনতা’ দেখাবে, তা তিনি আশা করেননি। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী স্থানীয় গ্রামবাসীকে নিয়ে যেভাবে স্পঞ্জ ও চটের বস্তা দিয়ে তেল সরানোর কাজ চলছে, তাকে সুরঞ্জিত তুলনা করেছেন ‘রোগীর মৃত্যুর পর অস্ত্রোপচার সফল হওয়ার দাবি’ করার সঙ্গে। তিনি বলেন, “চারদিন পর কা-ারি-১০ গেছে। জাহাজটাকে একটা পাড়ে নিয়া রাখছে। কিছু তেল বাঁচছে, আর কিছু ভাইস্যা গেছে। নৌ মন্ত্রণালয় শুনেই করল কি, যেই ঘটনা ঘটছে, তারা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিল। মুখস্থ শিখে রাখছে। যাই হোক, তদন্ত। সুরঞ্জিতের মতে, গত মঙ্গলবার আরেকটি জাহাজের ধাক্কায় ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের ট্যাঙ্কারটি ডুবে যাওয়ার খবর যখন এলো তখনই নৌবাহিনীকে ডাকা উচিত ছিল। নেভিই একমাত্র তাদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা দিয়ে তেল ছড়ানো ঠেকাতে পারত। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল নিয়েও তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। সুন্দরবন একটা বিশ্ব ঐতিহ্যের জায়গা। এই নদীটা দিয়ে কেন যেতে হবে? এটা ছাড়া তো আরও নদী আছে নাকি? একটু ঘুরে আসতে হতো, এই যা। এই রিস্কটা আমরা কেন নেই? সুরঞ্জিত বলেন, যা ঘটেছে তা ‘ব্যর্থতা’ নয়, ‘উদাসীনতা’। সুন্দরবন আমাদের জাতীয় অহঙ্কার। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অনেক প্রাণী এখানে বাস করে। এই ব্যাপারে আরও সাবধান হতে হবে। এই বিপর্যয়টা জাতীয় বিপর্যয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটা বিশ্ব পরিবেশ বিপর্যয়ের রূপ ধারণ করবে। দুর্ঘটনার তিনদিন পর শুক্রবার সকালে স্থানীয় গ্রামবাসীর মাধ্যমে হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদার ওই তেল স্থানীয়দের কাছ থেকে ৩০ টাকা লিটার দরে কিনে নিচ্ছে। সুরঞ্জিত বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব (বিআইডব্লিটিএ) বললেন, অসুবিধা নাই; তেল লইয়া যাইব পাবলিকে। আর আমরা কিন্না নিমু। ব্যাপারটা বেশি সহজীকরণ হয়ে গেল না? পাবলিক কেমনে নিব? কয় স্পঞ্জ দিয়া নিব? ফের মুসা বিন শমসের- স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিগত ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি। জীবনে অনেক টাকা আয় করেছি। তবে আমি এ দেশ থেকে কোন টাকা অর্জন করিনি বা দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার করিনি। বিদেশে ব্যবসা করে আমি এ সব অর্থ অর্জন করেছি। এ পরিমাণ (৫১ হাজার কোটি টাকা) টাকা এদেশে কেউ কোন দিন অর্জন করতে পারেনি, আর আগামী ৫০ বছরে কেউ পারবেও না। অর্থ সম্পদ নিয়ে এমন অহঙ্কারের সুরে গর্বের সঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন আলোচিত অস্ত্র ব্যবসায়ী ও ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুসা বিন শমসের ওরফে মুসা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর ১টার দিকে তিনি এসব কথা বলেন। সুইস ব্যাংকে আটকে থাকা ৫১ হাজার কোটি টাকা দেশে ফেরত আনা ও বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের উৎস খুঁজতে এর আগে সকাল ১০টায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদক সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে মুসা বিন শমসের তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বাংলাদেশ থেকে কোন টাকা তিনি পাচার করেননি। পদ্মা সেতু নির্মাণে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়ে মুসা সাংবাদিকদের বলেন, সুইস ব্যাংকে জব্দ হওয়া ৭ বিলিয়ন ডলার অবমুক্ত হলে পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করব। তাছাড়া, পদ্মা সেতু নির্মাণ শুধু আমারই নয়, আমার পিতারও স্বপ্ন ছিল। সেতু নির্মাণে গোয়ালন্দ থেকে আরিচা, নগরবাড়ী এ্যাঙ্গেলে ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। আমি অফিসিয়ালি দুদককে বলেছি, সেতু নির্মাণের বিভিন্ন খাতে আমি বিনিয়োগ করব। পাশাপাশি সুইস ব্যাংকে আটকে থাকা ৭ বিলিয়ন ডলার (৫১ হাজার কোটি টাকা) ফেরত পেলে তা দেশে ফিরিয়ে আনব। দেশের নির্যাতিত শিক্ষক, সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী, অসহায় বৃদ্ধসহ অন্য শ্রেণী পেশার মানুষের কল্যাণে তা ব্যয় করব এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ব। দুদকের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি কে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক তা বুঝতে পেরেছে। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধা রেখেই দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হয়েছি। জনশক্তি রফতানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের রেমিটেন্স আসে জনশক্তি রফতানি থেকে। জনশক্তি রফতানি না হলে আমাদের দেশ সোমালিয়া হয়ে যেত। অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি গল্পের পেছনে একটি ইতিহাস থাকে। ধৈর্য ধরেন। সব জানতে পারবেন। আমার সম্পর্কে বলা হয়েছে, আমি ৫১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছি। তা সত্য কি না দুদকের অনুসন্ধানে এটা বেরিয়ে আসবে। উল্লেখ্য, বিজনেস এশিয়া’র প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মুসার সম্পদ যাচাই ও অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে ২০১১ সালে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। তবে অজ্ঞাত কারণে দুদকের এ অনুসন্ধান আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘ ৩ বছর পর চলতি বছরের ‘বিজনেস এশিয়া’ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে আবারও নতুন করে অনুসন্ধানে নামে দুদক। এর আগে বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস-এর প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে প্রিন্স মুসার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে কমিশন। ২০১১ সালের ২৪ জুন মুসার যাবতীয় ব্যাংক হিসাব তলব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুদকের চাহিদার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুসার ব্যাংক হিসাব তলব করলেও রহস্যজনক কারণে এর কোন অগ্রগতি হয়নি। বিজনেস এশিয়া ম্যাগাজিনে মুসাকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী এই ধনাঢ্য অস্ত্র ব্যবসায়ীর ৭ বিলিয়ন ডলার সুইস ব্যাংকে আটকে আছে, যা বাংলাদেশী অর্থে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সেতু নির্মাণে ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় তার জন্য বেশি কিছু না বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। ২০১১ সালে প্রকাশিত ফোর্বস ম্যাগাজিনে বলা হয়, মুসা বিন শমসেরই বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তাঁর সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের ওপরে। তিনি অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিত।
×