ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুপ্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪

সুপ্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাঁর সরকার পেশাদার ও সুপ্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ জন্য আমরা জাতীয় বাজেটে সশস্ত্রবাহিনীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছি এবং সশস্ত্রবাহিনী গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এবং আর্মড ফোর্স ওয়ার (এএফডব্লিউ) কোর্স-২০১৪ এর গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে এনডিসির কমান্ড্যান্ট লে. জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবরও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রিবর্গ, সংসদ সদস্যগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ, কূটনৈতিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসসর। শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন সশস্ত্রবাহিনী তার প্রচেষ্টা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান অব্যাহত বজায় রাখবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সৃষ্ট সশস্ত্রবাহিনী নিয়ে গর্ববোধ করে। তিনি বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সব সময়ে তাদের পাশে রয়েছে। ভবিষ্যতেও তারা জনগণের পাশে থাকবে বলে তিনি দৃঢ় আশাপ্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্রবাহিনীর লক্ষ্য অর্জনে চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাঙ্ক এমবিটি-২০০০, সেলফপ্রোপেলড গান, রাডার, সেনাবাহিনীর জন্য এপিসি এবং সামরিক বিমানবাহিনীর জন্য আধুনিক হেলিকপ্টারসহ আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনীর জন্য সাবমেরিন ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৬ সালের মধ্যে এই সাবমেরিন অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় হেলিকপ্টার, মেরিন পেট্রোল এয়ারক্রাপ্ট, মর্ডান ফ্রিগেট ও জাহাজ কেনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সশস্ত্রবাহিনীর সর্বশেষ প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা অখ-তা ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে এবং যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক ও অন্য কোন দুর্যোগের সময় জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, তারা কৌশলগত অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং দেশে ও দেশের বাইরে খুবই মানসম্পন্ন কাজ করছে। তারা দেশে ও বিদেশে ভাল কাজ করে সুনাম বয়ে আনছে। তিনি জনগণ ও সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যেকার এই অংশীদারিত্ব আগামীতে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি বহুমুখীকরণ ও জোরদারে এ সকল দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিরও আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অধিক সম্ভাবনাময় ও কানেকটেক্ট ওয়ার্ল্ডে বসবাস করছি। এ জন্য আমরা অধিক ঝুঁকিতে রয়েছি। উন্নয়নশীল দেশগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রণীত নীতির মধ্যে চলছে। ফলে এ সকল দেশ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমাদের অবশ্যই অর্থনীতি বহুমুখীকরণ ও শক্তিশালীকরণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অনেক নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান করেছে। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করাই ছিল এর লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত ৫ বছর ১১ মাসে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ইস্যু, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং বহুমুখী সহযোগিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী এনডিসি এবং এএফডব্লিউ কোর্স সম্পন্নকারী গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, গ্র্যাজুয়েটরা সামাজিক, রাজনৈতিক, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং জাতীয় নিরাপত্তাসহ একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রত্যাশা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছেÑ জানতে পেরে তিনি খুশি হয়েছেন। তিনি গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের শাসনের সমস্যা এবং এ সমস্যার বিভিন্ন সমাধান সম্পর্কে পড়াশুনা করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ এখন একটি বৈশ্বিক বহুমুখী বিশ্বে বসবাস করছে। সকল মানুষের মধ্যে যোগযোগের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। এতে কখনও কখনও কিছু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, এ জন্য আমরা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কিছু আইন প্রণয়নও করেছি। তবে প্রযুক্তির কার্যকর সফল ব্যবহারকেও আমরা উৎসাহিত করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল গণতন্ত্র এবং প্রতারণামুক্ত একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সরকার ব্যবস্থায় এই মূলনীতি নিশ্চিত করতে আমাদের সাহসী বীরসন্তানরা জীবন উৎসর্গ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ১৯৯৬ সালের আগে সশস্ত্রবাহিনীর সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তাদের উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য এ ধরনের কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। তিনি বলেন, আমরা ১৯৯৬-২০০১ সালে দায়িত্ব পালনকালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই প্রতিষ্ঠানটি একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউশনে রূপ নেয়। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ দেশী ও বিদেশী অপারেশনাল ও স্ট্র্যাটেজিক এবং সামরিক থেকে বেসামরিক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জানতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তারা শান্তির সংস্কৃতি, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার উন্নয়নে অবদান রাখছে। শেখ হাসিনা কলেজের শিক্ষার মান বজায় রেখে আরও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই কলেজ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী কর্মকর্তারা তাদের জ্ঞানের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও জনগণের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় সূচনায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
×