ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘সব শিশুকে হত্যা করেছি, কি করব এখন?’

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪

‘সব শিশুকে হত্যা করেছি, কি করব এখন?’

‘স্কুল মিলনায়তনের সব শিশুকে আমরা হত্যা করেছি। এখন আমরা কি করব?’ পাকিস্তানের পেশোয়ারের স্কুলে চালানো এক হামলাকারী তার নেপথ্য নির্দেশদাতাকে একথা জিজ্ঞাসা করে। ওই নির্দেশদাতা হামলাকারীকে নির্দেশ দেয়, সেনা সদস্যদের জন্য অপেক্ষা কর, নিজেকে উড়িয়ে দেয়ার আগে তাদের হত্যা করবে। এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার আর্মি পাবলিক স্কুলের প্রশাসন ব্লকের পাশের প্রবেশদ্বারের বাইরে বিশেষ অভিযানে অংশ নেয়া সেনাদের ওপর দুই আত্মঘাতী হামলাকারীর বিস্ফোরণ ঘটানোর আগ মুহূর্তের শেষ কথোপকথন এটি। ওয়ারস্যাক রোডের ওই স্কুলে চালানোর সাড়ে সাত ঘণ্টার অভিযানে হামলাকারী ও নেপথ্য নির্দেশদাতাদের কথোপকথনগুলো গোয়েন্দা দলিলের অংশ হিসেবে বুধবার পাক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ আফগান কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। হামলাকারীদের নাম ও যে দু’জনের কথোপকথন উপরে দেয়া হয়েছে তাদের শনাক্ত করেছে পাকিস্তান। এদের একজনের নাম আবুজর, অপরজন তার নির্দেশদাতা যার নাম ‘কমান্ডার’ উমর। উমর আদিজাই পেশোয়ার ফ্রন্টিয়ারের একজন শীর্ষ জঙ্গী। এই জঙ্গী উমর নারায়ি বা উমর খলিফা নামেও পরিচিত। পাকিস্তানী নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করেন, উমর আফগানিস্তানের নানগ্রাহর প্রদেশের নাজিয়ান জেলা থেকে পেশোয়ারের হামলাটি পরিচালনা করেছেন এবং সেখান থেকেই কলগুলো করেছেন। পাকিস্তান চাইছে আফগান কর্তৃপক্ষ এখন ব্যবস্থা নেবে। সাত জঙ্গীর একটি দল স্কুলে হামলা চালিয়েছে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে পাঁচজন স্কুলের প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিজেদের উড়িয়ে দেন অপর দু’জন বাইরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান। স্কুলের পেছনের দেয়াল বেয়ে হামলাকারীরা স্কুলে প্রবেশ করে। এজন্য তারা একটি মই ও কাঁটাতার কাটার জন্য কাটার ব্যবহার করে। হামলাকারীরা স্কুলের প্রধান মিলনায়তনের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে তখন স্কুলের সিনিয়র সেকশনের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসার নিয়ম-কানুন শিখাচ্ছিলেন এক শিক্ষক। এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, প্রধান মিলনায়তনে স্কুলের সব সিনিয়র শিক্ষার্থীরা আছে, এটা কি আগে থেকেই জানত হামলাকারীরা? আমরা এখনও এটি জানতে পারিনি। যেসব প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজছি এটি তার একটি। মিলনায়তনের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এক রক্ষী সম্ভবত হামলাকারীদের প্রথম শিকারে পরিণত হন, সেখানে অনেক রক্তের মাঝ দিয়ে বেশ কয়েকটি পায়ের ছাপ সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। পেছনের দরজাটি বন্ধ পেয়ে জঙ্গীরা মিলনায়তনের প্রধান দুই প্রবেশ পথ ও বের হওয়ার দরজা দিয়ে ঢুকে হামলা শুরু করে। এখানেই হত্যাকা-ের মূল অংশটি সম্পন্ন হয়। জঙ্গীদের সঙ্গে পাল্টা হামলায় অংশ নেয়া এক সেনা কর্মকর্তা তাই মনে করেন। দুই পাশের প্রবেশ দরজার পাশে রক্তে ভেসে যাওয়া মেঝে সাক্ষ্য দিচ্ছে এখানে কী ভয়াবহ, নারকীয় ঘটনা ঘটেছিল। ওই কর্মকর্তা বলেন, এখানে লাশের স্তূপ হয়ে পড়েছিল, কিছু মৃত, কিছু জীবিত। সব জায়গায়ই রক্ত ছিল। আমি যদি এটি না দেখতাম, তাহলেই ভাল হতো। বাইরে গোলাগুলির আওয়াজে শিক্ষার্থীরা সবাই হয়ত পালিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু জঙ্গীরা তাদের মৃত্যুদূত হয়ে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল। এই হলের প্রতি ইঞ্চি জায়গায় রক্ত ছিল। শিক্ষার্থী ও শিক্ষিকাদের জুতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। যারা বেঞ্চের পেছনে লুকিয়ে ছিল তাদের একজন একজন করে প্রত্যেকের মাথায় গুলি করা হয়। এই হলের প্রবেশ পথ ও ভেতর থেকে একশ’রও বেশি লাশ ও আহতদের বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। হলের এক পাশে কোণায় এক নারী শিক্ষিকার লাশ পড়ে ছিল। তার লাশটি পুড়িয়ে ফেলা হয়। এক সময় সেনা কমান্ডোরা এসে পাল্টা হামলা চালালে জঙ্গীরা কয়েক মিটার দূরে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নেয়। দু’পক্ষের গোলাগুলির এক পর্যায়ে জঙ্গীরা কোণঠাসা হয়ে পড়লে তাদের চারজন আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এদের একজন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার ঘরে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রধান শিক্ষিকা তাহিরা কাজীর লাশ পরে শনাক্ত হয়। সেখানে প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে স্কুলের তিনজন কর্মী ও দু’জন শিক্ষার্থীও নিহত হন। তিনি হয়তো তার শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে চাইছিলেন। অপর দুই জঙ্গী প্রশাসনিক ভবনের বাইরে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেনারা কাছাকাছি আসতেই পরপর দু’জনই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে সাত সেনা আহত হন। - ডন ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইন
×