ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ রসূলনূমা সূফী ফতেহ্ আলী (রহ.)

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ রসূলনূমা সূফী ফতেহ্ আলী (রহ.)

গত ৬ ডিসেম্বর ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত সূফী পীরে কামিল কুত্বুল ইরশাদ সূফী ফতেহ্ আলায়হি রহমাতুল্লাহ আলাইহির ওফাত দিবস। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের এই দিন বিকেল ৪টায় হাওড়া রেল স্টেশনে তাঁর প্রধান খলীফা ফুরফুরা শরীফের পীর মুজাদ্দিদে যামান হযরত মওলানা শাহ সূফী আবু বকর সিদ্দিকী রহমাতুল্লাহি ‘আলায়হির কোলে মাথা রাখা অবস্থায় ৬১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর অনেক কারামতের মধ্যে একটি ছিল যে, তিনি হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামকে দর্শন করিয়ে দিতে পারতেন, যে করণে তাঁকে রসূল নূমা খিতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের মীরসরাই থানার মালিয়াশ গ্রামে মতান্তরে সাতকানিয়া থানার আমিরাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আব্বাজান মওলানা শাহ ওয়ারেছ আলী ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে শহীদে বালাকোট হযরত সৈয়দ আহমদ বেরলবী রহমাতুল্লাহি ‘আলায়হির আহ্বানে বাংলাদেশ থেকে মুজাহিদ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে জিহাদে শরীক হন এবং বালাকোট যুদ্ধের প্রাক্কালে পাঞ্জতার যুদ্ধে শহীদ হন। হযরত ফতেহ আলী রহমাতুল্লাহির আম্মা সাঈদা খাতুন ইয়াতিম শিশুকে নিয়ে মক্কা মুকাররমা যাবার উদ্দেশে নৌকাযোগে কোলকাতা যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে ইন্তেকাল করলে কোলকাতার সদর দেওয়ানী আদালতের উকিল মুর্শিদাবাদের পুনাশী গ্রামের অধিবাসী মুনশী সেলিমের আশ্রয় লাভ করেন। তাঁর অভিভাবকত্বে তিনি পড়াশোনা করে মাদ্রাসা শিক্ষার উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন এবং জীবিকার তাগিদে দেওয়ানী আদালতে চাকরি নেন এবং এক পর্যায়ে তিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত সিপাহী বিপ্লবের সময় মসনদচ্যুত নবাব শাহ্্ ওয়াজেদ আলী কোলকাতার মাটিয়া বুরুজে কারারুদ্ধ হন। বন্দী নবাবের প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে সরকার সূফী ফতেহ আলীকে নিযুক্ত করেন। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে নবাব ওয়াজেদ আলী মুক্তি পান। তখন সূফী ফতেহ আলী (রহ.) পলিটিক্যাল পেনশন অফিসের মুনশ্্ী পদে যোগদান করেন। চাকরি জীবনে তিনি গাজীয়ে বালাকোট চট্টগ্রামের সূফী নূর মুহম্মদ নিযামপুরী (রহ.)-এর নিকট মুরীদ হন। এবং ইলমে তাসাউফের সব তরীকার সবক গ্রহণ করেন। তিনি অচিরেই কামালিয়াত হাসিল করেন। পীর সূফী নূর মুহম্মদ নিযামপুরী (রহ.) তাঁকে খিলাফতনামা প্রদান করেন। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে সূফী ফতেহ্্ আলী (রহ.্) চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে তিনি বহু মুরীদকে তা’লীম দিয়েছেন। ফুরফুরা শরীফের মওলানা শাহ্্সুফী আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) তাঁর ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ পেয়ে যুগশ্রেষ্ঠ সূফীর মর্যাদা লাভ করেছেন। সূফী ফতেহ্্ আলী ওয়ায়সী (রহ.) ফারসী ভাষায় বহু কবিতা রচনা করেন। তাঁর রচিত দীওয়ানে ওয়ায়সী ফারসী ভাষায় এক অনন্য কাব্যগ্রন্থ। হিন্দী ও উর্দু ভাষাভাষী অঞ্চলে এই কাব্যগ্রন্থখানি দীওয়ানে বাঙ্গালা নামে বহুল পরিচিত। এই কাব্যগ্রন্থে আল্লাহ্প্রেম ও রসূল প্রেমের ফয়েজ রয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থে ১৭৯টি গজল এবং ২৩টি কাসিদা রয়েছে। একটি গজলের সূচনাতে তিনি লিখেছেনÑ আগর আঁ শাহে খূবানাম নিহদ র্ব চশ্মে মন্পারা/ ব-খাকে পাএউ বখ্শম ম’আন দুন্্ইয়া ও উক্বারাÑযদি আমার সেই রূপের বাদশাহ আমার চোখে পা রাখেন/ তার পায়ের ধূলির জন্য দুনিয়ার সব কিছু বিলিয়ে দেব। তিনি নিখিল বাংলা আসামের শ্রেষ্ঠ পীর ছিলেন। তাঁর দ্বারা ইলমে তাসাওউফের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। তাঁর মাধ্যমে যে সিলসিলা বিস্তৃত হয়েছে তা এই অঞ্চলের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধ সিলসিলা। তাঁর মাযার শরীফ রয়েছে কোলকাতা মহানগরীর মানিকতলায় অবস্থিত ২৪/১ মুনশী লেনস্থ দিল্লীওয়ালা কবরস্থানে। প্রতিবছর ২৭ রমাদানে তাঁর মাযার শরীফ প্রাঙ্গণে ইসালে সওয়াব মহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন কোলকাতায় ওয়ায়সী মেমোরিয়াল এ্যাসোসিয়েশন গড়ে উঠেছে। এই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে তাঁর ওফাত দিবস ২৭ অগ্রহায়ণ তারিখে ইসালে সওয়ার মহফিল উদ্যাপন করা হয়। বর্তমান লেখকের আব্বা হুযুর কিবলার দাদা পীর হচ্ছেন সূফী ফতেহ আলী (রহ.)। ‘ লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট হযরত মুহম্মদ (সা.), সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
×