ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুন্দরবন রক্ষা জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

সুন্দরবন রক্ষা জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সুন্দরবন রক্ষায় জাতিসংঘের কাছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী দুই ধরনের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটির আগ্রহের কারণেই এ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। গত সোমবার রাত ৮টায় এ বিষয়ে জাতিসংঘের বাংলাদেশ অফিসে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সোমবার চিঠি পাঠিয়েছি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পরই পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন উত্তর পাইনি। এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলার নেই। জাতিসংঘের কাছে যে ধরনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে তা হচ্ছে, প্রথমত, স্বল্পমেয়াদী সহায়তা হিসেবে সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে সরাসরি সহযোগিতা। এক্ষেত্রে সংস্থাটির নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দল, প্রযুক্তি এবং অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস ওয়েল এক স্থানে নিয়ে এসে তা অপসারণ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া তেল অপসারণে দ্রুত একটি বিশেষজ্ঞ দল এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা হিসেবে সুন্দরবনকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে এ্যাকশন প্ল্যান প্রদান করা। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে সরকার এ পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবিলা করা যাবে এবং কার্যকর কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন দেয়া হোক। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের জাতিসংঘ ডেস্কের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, গত সোমবার দুপুরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে ইআরডিকে জানানো হয়, জাতিসংঘ সুন্দরবনের ফার্নেস অয়েল অপসারণে সহায়তা দিতে চায়। এ জন্য ইআরডিকে নিয়ম অনুযায়ী চিঠি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে ওইদিনই রাত ৮টার দিকে আমরা দ্রুত বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের কান্ট্রি ডাইরেস্টরের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। অন্যদিকে জাতিসংঘের টিম বাংলাদেশে এসে যাতে কোন ধরনের বাধার সম্মুখীন না হয় সে জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে তিন বিষয়ে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এগুলো হচ্ছে, প্রথমত, অনএ্যারাইভাল ভিসার ব্যবস্থা করা, যাতে বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে এসেই এয়ারপোর্ট থেকে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘ টিম যেসব যন্ত্রপাতি নিয়ে আসবে সেগুলো দ্রুত কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থা করা, যাতে এগুলো বাংলাদেশে প্রবেশে কোন বাধার সম্মুখীন না হয় এবং তৃতীয়ত, বিশেষজ্ঞ দল সুন্দরবনে কাজ করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সূত্র জানায়, বিষাক্ত তেলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের বনভূমি সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি উঠেছে। কাজটি দ্রুত না করতে পারলে কয়েক শ’ প্রকার প্রাণী মারাত্মক বিপর্যায়ের মধ্যে পড়বে। ইতোমধ্যে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তেলের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে পশুপাখি। বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় পাখি ‘প্যারা পাখি’ অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে। জোয়ার ভাটায় সুন্দরবনের ভেতর ৪শ’ ৫০টি নদ-নদী ও খালে তেল ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বনের প্রায় ১ হাজার ৮৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনে জাতিসংঘের কাছে সহায়তা চাইল বাংলাদেশ। সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) ঘোষণা করে ইউনেস্কো। এই ঘোষণার পর এর পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগও নেয়া হয়। কিন্তু যে আকারে কাজ করার কথা সেই আকারে কাজ হচ্ছে না। যদিও কয়েকটি প্রকল্প বনে বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পগুলোও চলছে ধীরগতিতে। ট্যাংকার ডুবে যাওয়ায় সুন্দরবনের শ্যালা, চাঁদপাই, দুধমুখী ও ধানসারি নদীতে বিপুল পরিমাণ ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে জলজ প্রাণী ছাড়াও সুন্দরবনের সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, গরান ও গোলপাতাসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ কিছুদিনের মধ্যে মড়ক রোগে আক্রান্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলেন, অপার সৌন্দর্যের এই বনভূমির ওপর মানবসৃষ্ট বিপর্যয় একের পর এক বনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই বনটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’।
×