নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৭ ডিসেম্বর ॥ কলাপাড়ায় কাঁঠালপাড়ার ছয় ভেন্টের স্লুইসটি যে কোন বিধ্বস্তের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে স্লুইস সংলগ্ন কচুপাত্রা নদীর দুই পাড়ের লাখো মানুষ তাদের কৃষিকাজ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে পড়বে কলাপাড়া ও তালতলীর পাঁচটি ইউনিয়নের এক শ’ গ্রামের মানুষ।
কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়ন ছাড়াও তালতলী উপজেলার কড়ই বাড়িয়া, পচা কোরালিয়া ও বগী ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের কৃষিকাজে এই স্লুইসটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে স্লুইসটির জীর্ণদশার যেন শেষ নেই। এলাকার মানুষের কাছে স্লুইসটির গুরুত্ব অপরিসীম। স্লুইসটির সঙ্গে রয়েছে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার নিবিড় সম্পর্ক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্লুইসটির দুই দিকের মূল পিলারের পলেস্তরা খসে পড়ছে। রডগুলো বেরিয়ে জং ধরে গেছে। গেটগুলো নষ্ট হয়ে আছে। গেট খুলে নোনা পানি ওঠানামা করানো হচ্ছে। দুই দিকের গাইড ওয়াল অনেক আগেই দেবে সংলগ্ন নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। উপরের মাটি দেবে সুরঙ্গ হয়ে গেছে। পানি ওঠানামার সময় ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। মনে হয় এই বুঝি ধসে পড়ল। প্রত্যেকটি গেটের উপরে ঝোলানো রয়েছে একটি করে বেহুন্দী জাল। যা পেতে মাছ ধরা হয়।
জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পরে কচুপাত্রা নদীর উপরে বাঁধ দেয়া হয়। কয়েক মাস পরে স্লুইসটি নির্মাণ করা হয়। কয়েকবার নামকাওয়াস্তে গেট পাল্টানোসহ টুকিটাকি মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাপকভাবে সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে জীর্ণদশার চরমে। এলাকার লোকজন জানান, স্লুইসটি পরিণত হয়েছে সোনার খনিতে। একটি প্রভাবশালী পরিবার প্রায় দুই যুগ স্লুইসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোটিপতি হয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছে অন্তত ৩০ বার। মামলা হয়েছে অসংখ্য। বর্তমানে স্লুইসটির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সরকারি দলের একটি গ্রুপের কাছে। স্লুইসটির নিয়ন্ত্রণ কোন সময় প্রকৃত কৃষকের কাছে ছিল না। স্লুইসটির নিয়ন্ত্রণ করে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে অনেকের কিন্তু স্লুইসটির জীর্ণদশার পরিবর্তন ঘটেনি। বরং যে কোন সময় বিধ্বস্তের শঙ্কা রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, স্লুইসটির সব ক’টি গেট খোলা রয়েছে। প্রবলবেগে নোনা পানি ওঠানামা করছে। কৃষকের মন্তব্য এখন স্লুইসটির সামনে বাঁধ দেয়া প্রয়োজন। দীর্ঘ প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকার লাখো কৃষকের কৃষিকাজের স্বার্থে স্লুইসটি ব্যবহারের কথা। সেখানে উল্টো রাতে-দিনে গেটের মুখে জাল পেতে মাছ শিকার করা হয়। স্লুইসটির উপর দিয়ে তালতলীর সঙ্গে কলাপাড়ার সংযোগ সড়ক রয়েছে। এটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়লে বলতে গেলে লাখো কৃষক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে। কৃষিকাজ ভেস্তে যাবে। নোনা পানিতে সব সয়লাব হয়ে যাবে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, স্লুইসটি মেরামত করা জরুরি প্রয়োজন। নইলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসে কয়েক দফা গিয়েও কোন কর্মকর্তা পাওয়া যায়নি। কয়েকজন কর্মচারী গল্প করছিলেন, কোন তথ্য জানাতে পারেননি তারা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: