ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৯ দিন পর মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন সাহসী এসআই

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

৯ দিন পর মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন সাহসী এসআই

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ স্ত্রী তাহরিমা আক্তার রিতা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। জ্ঞান ফিরলেই তাঁর দুই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা। দুই বছর বয়সের আয়ন আর ৯ মাস বয়সের কন্যা আনিকা ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। তারা বুঝতে পারছে না তাদের পিতা না ফেরার দেশে চলে গেছে। এর পাশাপাশি শোকের মাতমে কাঁদছিল নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী গ্রামের মানুষজন। সবার মুখে এক কথা সৎ ও সাহসী পুলিশ বাহিনীর এসআই আসাদুজ্জামান মিলনকে (৩২) দুর্বৃত্তের হাতেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে তা তারা মেনে নিতে পারছে না। বুধবার ভোরে তাঁর লাশ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে নীলফামারীর ওই গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাদ আছর নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এই গ্রামের মহুবার রহমানের পুত্র আসাদুজ্জামান মিলন। ৪ ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড়। মা গোলেনুর বেগম ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। জানা যায়, গত ৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে লালমনিরহাট জেলা শহরের সব থেকে বৃহৎ কাপড়ের দোকান নরসিংদী বস্ত্রালয় চুরি যায়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শাটারের তালা ভেঙ্গে চোরেরা মূল্যবান কাপড়ের গাইড চুরি করে একটি পিকআপে তুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। লালমনিরহাট থানায় খবর এলে থানা ওসির নির্দেশে এসআই আসাদুজ্জামান মিলন অভিযানে নামেন। খবর আসে পিকআপটি লালমনিরহাট রংপুর সড়কের তিস্তা সেতুর দিকে যাচ্ছে। মিলন ছুটে গিয়ে তিস্তা সেতুর ওখানে অবস্থান নেন। এ সময় পিকআপটি এলে সেটিকে থামালে চোরের দল গাড়িটি সামনে টান দিয়ে নিয়ে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে চলন্ত অবস্থায় এসআই আসাদুজ্জামান মিলনকে সড়কে ছুড়ে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় এসআই মিলনকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে লালমনিরহাট হাসপাতালে এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। তাকে লাইফ সাপট রেখে চিকিৎসা চলছিল। এ ঘটনায় লালমনিরহাট থানার ওসি নিজে বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি জিডি (নম্বর ৩৭৯) দায়ের করেন। পাশাপাশি চুরি যাওয়া বস্তালয়ের মালিক আবুল কাশেম বাদী হয়ে তার বস্ত্রালয়ের ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার কাপড় চুরি যাওয়ায় ৪৬১/৩৮০ ধারায় মামলা (নম্বর-১৬) দায়ের করেন। দুর্বৃত্তের হাতে গুরুতর আহত এসআই মিলন ঘটনার ৯ দিনের মাথায় মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনায় বুধবার রংপুর কোতোয়ালি থানায় পুলিশের পক্ষে একটি ইউডি মামলা করা হয়। কিন্তু এসআই আসাদুজ্জামান মিলনের পিতা মহুবার রহমানের আপত্তির কারণে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। বুধবার ভোরে এসআই আসাদুজ্জামান মিলনের লাশ একটি পুলিশ ভ্যানে তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগাখড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় গ্রাম ছেড়েও উপজেলাজুড়ে হাজারো মানুষ মিলনের লাশ দেখার জন্য ছুটে এলে চারদিকে শোকের ছায়া নেমে আসে। কোন মানুষ এ মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। তারা এর বিচার চায়। গ্রেফতার চায় ওই সব দুর্বৃত্তের।
×