ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগকেই মাথায় গুলি করা হয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগকেই মাথায় গুলি করা হয়

পাকিস্তানের পেশোয়ারের স্কুলে হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগকেই মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হামলাকারীরা তাদের খুবই কাছ থেকে (পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ) গুলি করে। স্কুলের বেঁচে যাওয়া শিক্ষার্থীরা এবং এক মন্ত্রী এ কথা জানিয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদফতরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক অসিম বাজওয়া বলেছেন, কাউকে জিম্মি করা নয়, যতজনকে সম্ভব হত্যা করাই পেশোয়ারের স্কুলে হামলা চালানো তালেবান জঙ্গীদের লক্ষ্য ছিল। খবর ডন। শিক্ষার্থীরা জানায়, হামলাকারীরা কবরস্থান সংলগ্ন সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ভেতরে ঢোকে এবং শ্রেণীকক্ষ ও মিলনায়তনের দিকে অগ্রসর হতে হতে গুলি শুরু করে। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণের জন্য মিলনায়তনে ছিল। প্রাদেশিক তথ্যমন্ত্রী মুশতাক আহমেদ গনি বলেছেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই মাথায় গুলি লেগেছে। বেশিরভাগ লাশ সিএমএইচএ আনা হয়েছে এবং প্রায় ৩০টির মতো লাশ লেডি রিডিং হাসপাতালে আছে। আহত শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা আশংকাজনক। ওই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জিশান বলেছে, মিলনায়তনে যখন আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম, তখন গুলির শব্দ শুনি। আমাদের প্রশিক্ষক আমাদের মেঝেতে শুয়ে পড়তে বলেন। সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের মাথায় গুলি করা শুরু করে। তারা আমাদের সহপাঠীদের হত্যা করে চলে যায়। আমার পায়ে একটি গুলি লেগেছে। আহত আরেক ছাত্র বলেছে, সন্ত্রাসীরা শ্রেণীকক্ষগুলোতে গুলি করা শুরু করে। তারা আমাদের এক শিক্ষককেও হত্যা করেছে। অসিম বাজওয়া দাবি করেছেন, কাউকে জিম্মি করার চেয়ে শিশুদের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই হামলাটির পরিকল্পনা করেছিল তালেবান জঙ্গীরা। ঘটনাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নিষ্পাপ ওই শিশুদের হত্যা করা, আর তাই করেছে তারা। পেশোয়ারের স্কুলে চালানো সন্ত্রাসীদের ওই হামলার বিস্তাারিত গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বিচার ওই হত্যাযজ্ঞে ১৪১ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৩২টি শিশু এবং স্কুলের নয়জন কর্মী রয়েছেন। ‘গোঙানি বন্ধ করতে মুখে পুরে নিলাম টাই’ ভীষণ যন্ত্রণা। মনে হচ্ছিল প্রাণ বেরিয়ে যাবে। দেখলাম দু’পায়েই হাঁটুর ঠিক নিচে ছোট গর্ত। রক্ত বেরোচ্ছে অঝোরে। আমার ইউনিফর্মও রক্তে ভিজে চুপচুপে। এ অবস্থায় পালাতে পারব না। তখনই শুনতে পেলাম, বন্দুকধারীদের একজন আর একজনকে বলছে, ‘আরে বেঞ্চের নিচে কত ছাত্র লুকিয়েছে! ওদের টেনে বের করে মার!’ সব ওলোট-পালোট হয়ে গেল। এবার উপায়? একটা বুদ্ধি খেলল মাথায়। ভাবলাম মড়ার মতো চুপচাপ পড়ে থাকি। যদি ওরা আমাকে মৃত ভেবে আর গুলি না করে, তা হলে এ যাত্রা বেঁচে গেলেও যেতে পারি। এদিকে পা দুটো যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে চিৎকার করে উঠি। কিন্তু তা হলেই সব শেষ। নিজের গোঙানি আটকাতে তাই টাইটাকে গুটিয়ে মুখে দিলাম। যাতে আওয়াজ না বেরোয়। আর মড়ার মতো পড়ে রইলাম বেঞ্চের নিচে। মাঝেমধ্যে আড়চোখ মেলে দেখছি, কয়েক জোড়া কালো বুট আমার আশপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিচু হয়ে দেখছে আমার সহপাঠীদের। তার পর টেনে বের করে এনে তাদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। চোখের সামনে দেখছি, ওরা লুটিয়ে পড়ছে। আমার বন্ধুরা লুটিয়ে পড়ছে। আমি তখন কোন মতে কান্না আটকাচ্ছি। এক সময় এক জোড়া কালো বুট আমার দিকেও এগিয়ে এলো। মনে হলো যেন যমদূত এগিয়ে আসছে। থরথর করে কাঁপছি তখন। কিন্তু ওদের বুঝতে দিলে চলবে না। তাই কোন মতে চোখের পাতা বুজে পড়ে রইলাম। আমাকে দেখে কি মনে হলো ওদের জানি না। তবে ওরা চলে গেল। ভাবলাম, আতঙ্কের বোধহয় এই শেষ। সকালে যখন ক্লাসে প্রথম গুলির আওয়াজ শুনেছিলাম তখনও বুঝিনি এমনটা হতে পারে। কিছু ঠাওর করে ওঠার আগেই কেউ একজন চেঁচিয়ে বলে, ‘সবাই বেঞ্চের নিচে ঢুকে যাও।’ কিছু না বুঝেই লুকিয়ে পড়েছিলাম।
×