ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চেক জালিয়াত চক্রের ৭ সদস্য র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

চেক জালিয়াত চক্রের ৭ সদস্য র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে শুধু চেক জালিয়াতি করেই ওরা কামিয়েছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি। কিছুতেই ধরা যাচ্ছিল না। অবশেষে চক্রের সাত সদস্য ধরা পড়ে র‌্যাবের ফাঁদে। এদের মধ্যে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাও রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই সাতজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছে বিপুলসংখ্যক চেক ও চেক জালিয়াতির সরঞ্জাম পাওয়া যায়। র‌্যাবের মিডিয়া এ্যান্ড লিগ্যাল উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মাকসুদুল আলম বলেন, চক্রটি অভিনব পন্থায় বিভিন্ন ব্যাংকের চেক জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাত করে আসছিল। বিশ্বস্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী উত্তরা, বারিধারা ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। রয়েছে এক নারী সদস্যও। এরা হলোÑ জাকির হোসেন (৪১), সোনিয়া আক্তার লিপি ওরফে মীম ওরফে শাহিনুর (২০), মোঃ আল-আমিন সুমন (২৬), রিজভী খায়ের (৩৭) আবুল কালাম শেখ (৫৮), আবুল কাশেম প্রামাণিক স্বপন (৩৮) ও ওয়াহেদুজ্জামান সোহেল (৩৬)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন ব্যাংকের তিনটি চেকবই, ২০০ চেকের মূল পাতা, ১০২ ব্যাংক চেকের ফটোকপি, ২৮৬ স্টেটমেন্ট পাতা, ১১৪ হিসাব খোলার ফরম, ১০ বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের সিল এবং চেক জালিয়াতির আনুষঙ্গিক সামগ্রী। র‌্যাব জানায়, প্রতারক চক্রের হোতা জাকির হোসেন ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা ও টাকা আত্মসাত করে আসছিল। জাকির হোসেন চলতি মাসে ৪০৭/৯ ডিওএইচএস, বারিধারায় ‘হোসেন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস হিসেবে ভাড়া নেয়। এ প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী হিসেবে সোনিয়া আক্তার ওরফে লিপি ওরফে মীম শাহিনুরকে তার অফিস সহকারী করা হয়। হারুন-অর রশীদকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরা মূলত যে কারও স্বাক্ষর স্ক্যানিং করে জাল চেক তৈরি করত। প্রতারক চক্রের অন্যতম মহিলা সদস্য সোনিয়া আক্তার লিপি চলতি মাসে ‘হোসেন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে’ অফিস সহকারী হিসেবে ৬ হাজার টাকা বেতনে যোগ দেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাকির হোসেনের খুব বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন। কর্মরত অবস্থায় জাকির হোসেন তাকে চেক জালিয়াতির কাজে চেকের ওপর এমআইসিআর লেখা ও নম্বর সুকৌশলে ব্লেড দিয়ে উঠানো এবং নতুন নম্বর প্রতিস্থাপনের কাজ শিখিয়ে দেয়। পরে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সংগৃহীত চেকের ফটোকপি এবং বিভিন্ন নামে করা ব্যাংক এ্যাকাউন্টগুলোর চেকের উপরের এমআইসিআর লেখা নম্বরগুলো ব্লেড দিয়ে ঘষে ওঠানোর কাজ করতে থাকে। সোনিয়া আক্তারের ব্যাংকে ১৪-১৫টি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট আছে। এ প্রেক্ষিতে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন, এ্যাকাউন্ট খোলা এবং চেক সংগ্রহের কাজে চক্রের অন্য সদস্য স্বপন, সোহেল, রিজভী, আবুল কালাম ও আল-আমিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রতারক চক্রের আরেক অন্যতম সক্রিয় সদস্য আল-আমিন সুমন এলিট ফোর্স সিকিউরিটি কোম্পানির ডাচ-বাংলা ব্যাংক গুলশান শাখায় পিয়ন হিসেবে কর্মরত থাকায় গুলশান শাখার ডাচ-বাংলা ব্যাংকে জাকিরের সঙ্গে পরিচয় হয়। আল-আমিন ঐ ব্যাংকের চেকের ক্লিয়ারিংয়ের কাজ করতেন এবং জাকিরের অনুরোধে চেক ক্লিয়ারিং পাতার ফটোকপি টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করতেন। প্রতারক চক্রের অন্যতম সক্রিয় সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান সোহেল ২০০৮ সাল থেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রিলেশন অফিসার হিসেবে কর্মরত। বছর দুয়েক আগে ডাচ-বাংলা ব্যাংক এলিফ্যান্ট রোড শাখায় হিসাব খোলার সুবাদে জাকিরের সঙ্গে তার পরিচয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে চেক জালিয়াতির কাজে জাকিরের কাছ থেকে মূল চেকের ফটোকপি পেতেন। অপর সদস্য রিজভী খায়ের বর্তমানে একটি বেসরকারি সেল ডেভেলপার কোম্পানির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ। ইতিপূর্বে তিনি উত্তরা ও সিটি ব্যাংকে প্রায় সাড়ে তিন বছর কর্মরত ছিলেন। সে সুবাদেই ব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে জাকির তার পূর্ব পরিচিত। এছাড়া ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গেও পরিচিত। আবুল কাশেম প্রমাণিক স্বপন ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংক এক্সিকিউটিভ (লোন শাখা) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জাকিরের সঙ্গে ছিল পূর্ব পরিচয়। র‌্যাব জানায়, সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি মূলত বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে একটি নির্দিষ্ট এ্যাকাউন্ট টার্গেট করত। কর্মরত ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিত। যেসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেন বেশি এবং এ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা প্রবাসী তারাই ছিল তাদের টার্গেট। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত আছে বলে ধারণা করছে র‌্যাব। এ পর্যন্ত এই প্রতারক চক্র চেক জালিয়াতি করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত করেছে।
×