ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শর্ত ভঙ্গ করলে বেসরকারী মেডিক্যালের অনুমোদন বাতিল

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

শর্ত ভঙ্গ করলে বেসরকারী মেডিক্যালের অনুমোদন বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনুমোদন বাতিল হচ্ছে শর্ত ভঙ্গকারী বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর। বন্ধ হয়ে যাবে ওই সব কলেজের সার্বিক কার্যক্রম। বুধবার সচিবালয়ে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ নীতিমালা সংক্রান্ত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে ব্যবস্থা নেয়ার আগে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো শর্ত ও বিধান মেনে কাজ করছে কিনা, তা পরিদর্শনের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিদর্শন দল গঠন করে সকল বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনের মাধ্যমে পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। পরিদর্শন টিমকে আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে একাধিক পরিদর্শন টিম গঠন করে নির্ধারিত সময়ে পরিদর্শন শেষ করার নির্দেশও দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সচিবালয়ে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ নীতিমালা সংক্রান্ত এক সভায় সভাপতিত্বকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মেডিক্যাল শিক্ষার মান নিয়ে কোন ছাড় দেয়া যায় না। এই শিক্ষায় পাস করা ব্যক্তিরা মানুষের জীবন-মরণ নিয়ে কাজ করে। তাই বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষার মান যথাযথভাবে বজায় রাখা হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি স্বচ্ছতার সঙ্গে এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, এর ভিত্তিতে অযোগ্য কলেজগুলোর অনুমোদন বাতিলে সরকার কোন দ্বিধা করবে না। সরকার আইনের প্রয়োগে কোন ব্যত্যয় ঘটাবে না। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সরকার সব সময় বেসরকারী উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। সরকার চায় দেশে ভাল মানের হাসপাতাল ও কলেজ স্থাপনে বেসরকারী উদ্যোক্তারা যেন এগিয়ে আসেন। কিন্তু তাই বলে তাঁরা যা ইচ্ছা তাই করবেন, তা মেনে নেয়া যায় না। এ জন্য বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো অনুমোদনের শর্ত ও আইন মেনে কাজ করছে কিনা, তা নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। কলেজগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলানসহ উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোন ভাড়া বাড়িতে কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করা যাবে না। কলেজ একাডেমিক ভবন ও হাসপাতাল ভবন আলাদা থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ধারণা গ্রহণযোগ্য হবে না। হাসপাতালে দরিদ্র জনগণের জন্য বিনা ভাড়ায় কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ বেড সংরক্ষণসহ ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কলেজে ১ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে হাসপাতালে থাকতে হবে ৫টি শয্যা। সর্বনিম্ন ৫০ জন ছাত্রছাত্রীর আসনবিশিষ্ট বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জন্য মহানগর এলাকায় কমপক্ষে কলেজের নামে দেড় একর জমিতে অথবা নিজস্ব জমিতে কলেজের একাডেমিক ভবনের জন্য ১ লাখ বর্গফুট এবং হাসপাতাল ভবনের জন্য ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। আর মহানগরীর বাইরে ৩ একর নির্মাণযোগ্য জমিতে অথবা নিজস্ব জমিতে ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। তবে প্রারম্ভে একাডেমিক ও হাসপাতাল মিলে সর্বনিম্ন মোট ১ লাখ ২৫ হাজার বর্গফুট প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ ফ্লোর স্পেস থাকলে মেডিক্যাল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি দেয়া যাবে। তবে পরবর্তী ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ২ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেসসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণকাজ সমাপ্ত করতে হবে। আর বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল শুধু নির্ধারিত প্লট/জমিতেই স্থাপন করতে হবে। কলেজের নামে কোন তফসিলি ব্যাংকে ১ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রাখতে হবে। কলেজ অনুমোদিত হলে স্থায়ী আমানতটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া এই অর্থ উত্তোলন বা ব্যয় করা যাবে না। তবে গবর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে কলেজ কর্তৃপক্ষ শুধু বছরান্তে প্রাপ্ত সুদ উত্তোলন করে কলেজের হিসাবে স্থানান্তর করতে পারবে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কমপক্ষে ২ বছর পূর্ব হতে প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসমূহ ন্যূনতম ২৫০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল চালু থাকতে হবে। পরবর্তীতে চিকিৎসা শিক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ হাসপাতালে রূপান্তর করা যাবে। পরিদর্শনকালে কোন কলেজ যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে প্রতীয়মান হলে সংশ্লিষ্ট কলেজে আসন সংখ্যা হ্রাস বা ছাত্রছাত্রী ভর্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করা যাবে। অনিয়ম গুরুতর অথচ সংশোধনযোগ্য না হলে প্রয়োজনে কলেজের অনুমোদন স্থগিত/বাতিল করা যাবে। কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন অথবা মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি নামকরণ করে এমবিবিএস কোর্সে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যাবে না। কলেজের নিজস্ব একাডেমিক হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোন সরকারী/আধা সরকারী/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার/বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বাস্তব প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে ফরেনসিক মেডিসিন ও রেডিওথেরাপি বিষয়ে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ব্যবহার সুবিধা প্রদান করা হবে। কোন উদ্যোক্তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএমডিসির লিখিত ব্যতীত মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন না। নীতিগত অনুমোদন প্রাপ্তির ২ বছরের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ হলে প্রাপ্ত অনুমোদন সরাসরি বাতিল বলে গণ্য হবে। কলেজে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত লাইব্রেরী, খেলাধুলা, বিনোদন ও ছাত্রছাত্রীর আবানিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে ফিল্ড সাইট প্রশিক্ষণের জন্য একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একটি কমিউনিটি সংযুুক্ত থাকতে হবে। প্রতিটি কলেজে মেডিক্যাল এডুকেশন ইউনিট ও কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স প্রোগ্রাম থাকতে হবে। সরকার যে কোন সময় প্রয়োজনে এ নীতিমালা পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং সংশোধন করতে পারবে বলে জানায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইইউর সহায়তা চাইলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ॥ দেশের হাসপাতালগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা চাইলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। একই সঙ্গে দেশের ওষুধ শিল্পের গুণগতমান পরীক্ষার জন্য নির্মিত ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ সহায়তা দেয়ার অনুরোধ জানালেন তিনি। বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত তিয়েরে মায়াদন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে মন্ত্রী এ সহযোগিতা কামনা করেন।
×